মুম্বাইয়ের রাজপথে বিশ্বজয়ীদের উন্মাদনা: রোহিত-কোহলির নাচে মেতে উঠলো লক্ষ লক্ষ ভক্ত!

Indian Cricket Team Celebrate Victory T20 World Cup: ভারতীয় ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সেলিব্রেশন ছিল এক অভূতপূর্ব উৎসবের নাম। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের পর দলের সদস্যরা যখন…

Manoshi Das

 

Indian Cricket Team Celebrate Victory T20 World Cup: ভারতীয় ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সেলিব্রেশন ছিল এক অভূতপূর্ব উৎসবের নাম। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের পর দলের সদস্যরা যখন স্বদেশে ফিরলেন, তখন সারা দেশ জুড়ে শুরু হলো আনন্দের বন্যা। বিশেষ করে মুম্বাইয়ে যে উৎসব দেখা গেল, তা ছিল অবিস্মরণীয়।

দলের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন:

বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতীয় দল বার্বাডোস থেকে একটি বিশেষ এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইটে (AIC24WC) রওনা হয়। হারিকেন বেরিলের কারণে তিন দিন আটকে থাকার পর অবশেষে ৪ জুলাই সকালে দল দিল্লি পৌঁছায়। বিমানবন্দরে হাজার হাজার উৎসাহী সমর্থক দলকে স্বাগত জানায়। খেলোয়াড়রা ক্লান্ত কিন্তু উচ্ছ্বসিত ছিলেন। সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পন্ত, মহম্মদ সিরাজ সবাই ভক্তদের অভিবাদন জানান।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ:

দিল্লিতে পৌঁছানোর পর দল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাৎ করে। ৭ লোক কল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এই সাক্ষাৎ হয়। মোদি খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানান এবং তাদের সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। এই সাক্ষাৎকারে দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দেন।

মুম্বাইয়ে বিজয় শোভাযাত্রা:

দিল্লি থেকে মুম্বাইয়ে পৌঁছানোর পর শুরু হয় আসল উৎসব। বিকেল ৫টায় নারিমান পয়েন্ট থেকে শুরু হয় বিজয় শোভাযাত্রা। একটি ওপেন-টপ বাসে করে খেলোয়াড়রা মেরিন ড্রাইভ হয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের দিকে এগিয়ে যান। পথের দুপাশে লক্ষ লক্ষ উৎসাহী সমর্থক জমায়েত হয়েছিলেন।

মেরিন ড্রাইভের দৃশ্য ছিল অবিশ্বাস্য। সমুদ্রের মতো মানুষের ঢেউ দেখা যাচ্ছিল চারদিকে। ট্রাফিক পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সাধারণত ৫ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে দলের বাসকে লেগেছিল দেড় ঘণ্টারও বেশি সময়। খেলোয়াড়রা ভক্তদের অভিবাদন জানাচ্ছিলেন, হাত নাড়ছিলেন। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ট্রফি তুলে ধরে সবাইকে দেখাচ্ছিলেন।

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা:

শোভাযাত্রা শেষে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে একটি বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরে গিয়েছিল উৎসাহী দর্শকে। সেখানে খেলোয়াড়রা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, “এই জনতা দেখে বোঝা যাচ্ছে আমাদের জয়ের জন্য তারাও কতটা উন্মুখ ছিল। এই জয় কোটি কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে।”

বিরাট কোহলি আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, “আমি রোহিতকে কখনো এত আবেগতাড়িত হতে দেখিনি। ওয়াংখেড়েতে ফিরে আসা খুব স্পেশাল অনুভূতি।”

কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেন, “এটা একটা দারুণ নোট যেখানে আমি বিদায় নিচ্ছি। দলের সবার জন্য আমি গর্বিত।”

বিসিসিআই সচিব জয় শাহ জানান, দলের সদস্যদের ১২৫ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়রা নাশিক ঢোলের তালে নেচে ওঠেন। বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে রোহিত শর্মাও নাচতে দেখা যায়।

প্রাক্তন ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া:

ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তিরাও এই জয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। সচিন তেন্ডুলকার বলেন, “প্রতিটি তারকা ভারতীয় জার্সিতে যুক্ত হলে আমাদের দেশের তারকাখচিত শিশুদের স্বপ্নের একধাপ কাছে নিয়ে যায়।”

সুনীল গাভাস্কার বলেন, “এটা একটা দারুণ জয়। আগে ৯০ পেয়ে সেঞ্চুরি হতো না, এবার সেঞ্চুরি হলো।”

মহেন্দ্র সিং ধোনি লিখেছেন, “বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ২০২৪। আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল, শান্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ।”

১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই সেলিব্রেশন ছিল অনন্য। দিল্লি থেকে শুরু করে মুম্বাই পর্যন্ত সারা দেশ জুড়ে যে উন্মাদনা দেখা গেল, তা ভারতীয় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিশেষ করে মুম্বাইয়ের রাজপথে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ছিল অভূতপূর্ব। খেলোয়াড়রাও তাদের ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। এই জয় শুধু ক্রিকেটের নয়, সমগ্র দেশের জয় হিসেবে উদযাপিত হয়েছে।

 

About Author
Manoshi Das

মানসী দাস একজন মার্কেটিং এর ছাত্রী এবং আমাদের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তিনি তাঁর অধ্যয়ন ও কর্মজীবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজার ও ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন। একজন উদীয়মান লেখিকা হিসেবে, মানসী বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা, স্থানীয় বাজারের প্রবণতা এবং ব্র্যান্ডিং কৌশল নিয়ে লিখে থাকেন। তাঁর লেখনীতে বাংলাদেশের যুব সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়।