Indian Cricket Team Head Coach Gautam Gambhir Salary 2024: ভারতের ক্রিকেট দলের হেড কোচ হিসেবে গৌতম গম্ভীরের নিয়োগ ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তার অসাধারণ ক্রিকেট ক্যারিয়ার এবং নেতৃত্বগুণের জন্য গম্ভীরকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে, এই পদের সাথে যে আর্থিক সুবিধা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা জড়িত, সেগুলি নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সবার মধ্যে। এই প্রতিবেদনে আমরা গম্ভীরের বেতন, সুযোগ-সুবিধা এবং তার নতুন দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গৌতম গম্ভীরের বার্ষিক বেতন প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি রুপি হতে পারে। বিসিসিআই (ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড) এই বেতন নির্ধারণে কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছে এবং গম্ভীরের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে এই পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বেতন প্যাকেজটি ভারতের হেড কোচের দায়িত্বের গুরুত্ব এবং চাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাহুল দ্রাবিড়, যিনি গম্ভীরের পূর্বসূরি ছিলেন, তার বার্ষিক বেতন ছিল ১২ কোটি রুপি, যা গম্ভীরের বেতনের সাথে তুলনীয়।
ভারতের হেড কোচ হিসেবে গম্ভীর বিলাসবহুল ভ্রমণ এবং আবাসনের সুবিধা পাবেন। দলের সাথে তিনি ব্যবসা শ্রেণীতে ভ্রমণ করবেন এবং বিশ্বের সেরা হোটেলগুলোতে অবস্থান করবেন। এই সুবিধাগুলি কোচ এবং দলের সদস্যদের জন্য সর্বোত্তম পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক।
বিদেশ সফরের সময় গম্ভীর প্রতিদিন ২৫০ ডলার (প্রায় ২০,৮১৪.১৮ রুপি) দৈনিক ভাতা পাবেন। এই ভাতা ২০১৯ সালে দ্বিগুণ করা হয়েছিল এবং এটি কোচের বিভিন্ন খরচ মেটাতে সহায়ক হবে। এই ভাতা কোচকে দলের পারফরম্যান্সের উপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সহায়তা করবে।
গম্ভীরের প্রধান দায়িত্ব হবে একটি “বিশ্বমানের” ক্রিকেট দল গঠন ও পরিচালনা করা যা সব ফরম্যাটে সফল হবে। তিনি বিশেষজ্ঞ কোচ এবং সহায়ক কর্মীদের একটি দলকে নেতৃত্ব দেবেন, তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করবেন এবং তাদের উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করবেন। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করাও তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
ভারতের হেড কোচ পদের জন্য বিসিসিআই কঠোর যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। প্রার্থীদের অন্তত ৩০টি টেস্ট ম্যাচ বা ৫০টি ওডিআই খেলার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা পূর্ণ সদস্য টেস্ট খেলা দেশের কোচ হিসেবে অন্তত দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিকল্পভাবে, সহযোগী সদস্য, আইপিএল দল বা সমতুল্য দলের হেড কোচ হিসেবে তিন বছরের অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য। প্রার্থীদের বিসিসিআই লেভেল ৩ সার্টিফিকেশন বা সমতুল্য সার্টিফিকেশন থাকতে হবে এবং বয়স ৬০ বছরের নিচে হতে হবে।
গৌতম গম্ভীর ২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতের জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। তিনি ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। গম্ভীর ৫৮টি টেস্ট, ১৪৭টি ওডিআই এবং ৩৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে তার ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ৪১.৯৫, ৩৬.৯৮ এবং ২৭.৪১।
ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর, গম্ভীর ২০১৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন এবং পূর্ব দিল্লি থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন। ২০২৪ সালে আইপিএল মৌসুমের আগে তিনি রাজনীতি থেকে সরে আসেন।
গৌতম গম্ভীরের ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগের পর তাঁর কোচিং কেরিয়ারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে:
১. দায়িত্বের পরিধি বৃদ্ধি:
– আইপিএল দলের মেন্টর থেকে সরাসরি জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেওয়ায় গম্ভীরের কাজের পরিধি অনেক বেড়ে যাবে। তিনি এখন তিনটি ফরম্যাটে ভারতীয় দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন।
২. চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি:
– বিশ্বকাপ জয়ী দলের কোচ হিসেবে গম্ভীরের উপর প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকবে। আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সাফল্য অর্জন করা তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
৩. নেতৃত্বের ধরণে পরিবর্তন:
– আইপিএল দলের মেন্টর হিসেবে গম্ভীর যেভাবে নেতৃত্ব দিতেন, জাতীয় দলের ক্ষেত্রে সেই একই পদ্ধতি নাও কাজ করতে পারে। তাঁকে এখন বিভিন্ন বয়সের ও অভিজ্ঞতার খেলোয়াড়দের সাথে কাজ করতে হবে, যার জন্য নেতৃত্বের ধরণে পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
৪. কৌশলগত দক্ষতার উন্নয়ন:
– জাতীয় দলের কোচ হিসেবে গম্ভীরকে আরও বেশি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দলের সেরা একাদশ নির্বাচন, বোলিং ও ব্যাটিং অর্ডার নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা আরও বাড়বে।
৫. আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন:
– বিভিন্ন দেশে সফর ও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে গম্ভীর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, যা তাঁর কেরিয়ারকে সমৃদ্ধ করবে।
৬. মিডিয়া ও জনসংযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি:
– জাতীয় দলের কোচ হিসেবে গম্ভীরকে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতে হবে এবং মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে তাঁর জনসংযোগ দক্ষতা আরও উন্নত হবে।
৭. খেলোয়াড় উন্নয়নে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি:
– তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের বিকাশ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ধরে রাখার জন্য গম্ভীরকে নতুন কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
গৌতম গম্ভীরের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ ভারতের ক্রিকেটে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বগুণ এবং কৌশলগত দক্ষতা দলের জন্য অমূল্য সম্পদ হবে। গম্ভীরের নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট দল নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলির জন্য প্রস্তুত হবে। গম্ভীরের এই নতুন যাত্রা সফল হোক, এটাই সকলের কামনা।