ভারতের ইতিহাস বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে সমৃদ্ধ। ২৪ শে জুন তারিখেও ভারতের ইতিহাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আজ আমরা সেই ঘটনাগুলির কিছু নির্দিষ্ট দিক নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলি ভারতীয় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ।
১৯১৮: কলকাতা বন্দর ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা
১৯১৮ সালের ২৪ শে জুন কলকাতা বন্দর ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠান ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসাবে কাজ করে এবং দেশের বাণিজ্যিক প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলকাতা বন্দর ট্রাস্টের গুরুত্ব
কলকাতা বন্দর ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এবং এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে সহায়ক।
১৯৮৬: ‘ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন’ আন্দোলনের সূত্রপাত
১৯৮৬ সালের ২৪ শে জুন ‘ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন’ আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক আন্না হাজারে। এই আন্দোলন ভারতীয় রাজনীতিতে দুর্নীতি বিরোধী চিন্তাধারার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আন্দোলনের প্রভাব
‘ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন’ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত হয়। এই আন্দোলনের ফলে অনেক রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন হন।
১৯৯১: অর্থনৈতিক উদারীকরণের সূচনা
১৯৯১ সালের ২৪ শে জুন, অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণের নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতির ফলে দেশের অর্থনীতি নতুন পথে এগিয়ে যায়।
উদারীকরণের ফলাফল
অর্থনৈতিক উদারীকরণের ফলে ভারতের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। বৈদেশিক বিনিয়োগে আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
২০১৩: উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক বিপর্যয়
২০১৩ সালের ২৪ শে জুন উত্তরাখণ্ডে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে। এই বিপর্যয়ে অনেক মানুষ প্রাণ হারান এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরবর্তী প্রভাব
উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সচেতনতার ওপর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সমূহের যৌথ প্রচেষ্টায় পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
১৯৭৫: ভারতের ইতিহাসের কালো দিন – জরুরি অবস্থা ঘোষণা
১৯৭৫ সালের ২৪ শে জুন, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেন, যার ফলে দেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে গণ্য হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং তিনি তার পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন। এরপর, ২৫ শে জুন মধ্যরাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
জরুরি অবস্থার প্রভাব
জরুরি অবস্থার সময়কালে অনেক রাজনৈতিক নেতা, কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে বিনা বিচারে আটক করা হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করা হয় এবং মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়। এই ঘটনার ফলে ভারতীয় গণতন্ত্রে গভীর প্রভাব পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।
১৯৮৯: হিমাচল প্রদেশে সংঘটিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়
১৯৮৯ সালের ২৪ শে জুন হিমাচল প্রদেশে একটি বড়সড় ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এই বিপর্যয়ে অনেক মানুষের প্রাণহানি হয় এবং ব্যাপক ক্ষতি হয়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব
এই বিপর্যয়ের ফলে হিমাচল প্রদেশের অনেক গ্রাম এবং শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টায় পুনর্বাসন এবং উদ্ধার কাজ পরিচালিত হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরবর্তী সময়ে পরিবেশগত নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা আরো জোরালোভাবে অনুভূত হয়।
২০০২: দিল্লিতে মেট্রো রেলের প্রথম পরীক্ষামূলক যাত্রা
২০০২ সালের ২৪ শে জুন দিল্লি মেট্রোর প্রথম পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয়। এটি ছিল ভারতের মেট্রো রেল ব্যবস্থার নতুন যুগের সূচনা।
দিল্লি মেট্রোর গুরুত্ব
দিল্লি মেট্রোর মাধ্যমে ভারতের গণপরিবহন ব্যবস্থায় বিপ্লব আসে। এটি দিল্লি ও এনসিআর অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য এবং দ্রুতগতি এনে দেয়। পাশাপাশি, ট্রাফিক জ্যাম এবং পরিবেশ দূষণ কমাতেও সহায়ক হয়।
২০১৯: চন্দ্রযান-২ মিশনের সফল উৎক্ষেপণ
২০১৯ সালের ২৪ শে জুন, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) চন্দ্রযান-২ মিশন সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে। এটি ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযান ছিল এবং দেশের মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
চন্দ্রযান-২ এর বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
চন্দ্রযান-২ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা করা হয়। যদিও ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করতে পারেনি, তবে অরবিটারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই মিশন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রমাণ।
২৪ শে জুন তারিখে ভারতের ইতিহাসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সাক্ষী। এই দিনটির বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই, কিভাবে ভারতের জনগণ এবং নেতৃত্ব একযোগে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবদান রেখেছে।