ভারতের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো, বৈচিত্র্যময় ও জটিল। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে ৩০শে জুন তারিখে, যা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছে। আসুন আমরা এই তারিখের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে আলোচনা করি।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে ৩০শে জুন তারিখের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা পাওয়া যায় না। তবে, এই সময়কালে হরপ্পা সভ্যতার পতন ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল, যা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল।
হরপ্পা সভ্যতা, যা প্রায় খ্রিস্টপূর্ব 3300 থেকে 1300 সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, তার পতনের সঠিক তারিখ জানা যায় না। তবে, এই সভ্যতার পতন ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
অন্যদিকে, গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান (320-550 খ্রিস্টাব্দ) ভারতের স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও দর্শনের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছিল।
মধ্যযুগে, ১৩৯৮ সালের ৩০শে জুন, তৈমুর লং দিল্লি আক্রমণ করেন। এই আক্রমণ তুঘলক বংশের পতন ত্বরান্বিত করে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে নতুন শক্তি সমীকরণের সূচনা করে।
১৬২৬ সালের ৩০শে জুন, শাহজাহান মুঘল সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর শাসনকালে তাজমহলের মতো বিশ্বখ্যাত স্থাপত্যের নির্মাণ হয়, যা আজও ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
১৮৫৭ সালের ৩০শে জুন, সিপাহী বিদ্রোহের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। এই দিনে কানপুরে ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীরা একটি বড় আক্রমণ চালায়। এই বিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বৃহৎ সশস্ত্র প্রতিরোধ হিসেবে চিহ্নিত।
১৯১১ সালের ৩০শে জুন, কিং জর্জ পঞ্চম ও কুইন মেরি দিল্লি দরবারের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এই দরবার ভারতে ব্রিটিশ শাসনের চূড়ান্ত প্রদর্শনী ছিল, যেখানে দিল্লিকে ভারতের নতুন রাজধানী ঘোষণা করা হয়।
১৯০৬ সালের ৩০শে জুন, অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি চলছিল। এই সংগঠন পরবর্তীতে ভারত বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯২৯ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত লাহোর কংগ্রেসে “পূর্ণ স্বরাজ” প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নতুন গতি প্রদান করে।
১৯৪৮ সালের ৩০শে জুন, মহাত্মা গান্ধীর সমাধি স্থাপনের কাজ চলছিল। রাজঘাটে স্থাপিত এই সমাধি আজও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
১৯৭৫ সালের ৩০শে জুন, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন। এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।
১৯৯৭ সালের ৩০শে জুন, কে.আর. নারায়ণন ভারতের প্রথম দলিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এটি ভারতীয় সমাজে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
২০১৭ সালের ৩০শে জুন, ভারত সরকার পণ্য ও সেবা কর (GST) চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, যা পরের দিন থেকে কার্যকর হয়। এই একক কর ব্যবস্থা ভারতের অর্থনীতিতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।
২০১৯ সালের ৩০শে জুন, ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই সিদ্ধান্ত আগস্ট মাসে কার্যকর হয় এবং অঞ্চলটির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনে।
২০২০ সালের ৩০শে জুন, ভারত কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবেলা করছিল। এই মহামারী ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
২০২৩ সালের ৩০শে জুন, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) চন্দ্রযান-৩ মিশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই মিশন পরবর্তীতে সফল হয় এবং ভারতকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণকারী চতুর্থ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
৩০শে জুন তারিখটি ভারতের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক কাল পর্যন্ত, এই তারিখে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে। এই ঘটনাগুলি ভারতের অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ভবিষ্যতের জন্য পথ প্রদর্শন করে।