Paris Olympic 2024: বিশ্বমঞ্চে দেশের গর্ব”২০২৪ সালের জুলাই মাসে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায় যুক্ত হতে চলেছে। এবারের অলিম্পিকে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (CAPF) এবং বিশেষ কমান্ডো বাহিনীর দশটি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ফ্রান্সে পৌঁছেছে। এই অভিনব উদ্যোগ ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার এক নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
ভারতীয় কে-নাইন টিমের বিশেষত্ব
ভারতীয় কে-নাইন (K9) টিম গঠিত হয়েছে দশটি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর এবং ১৭ জন হ্যান্ডলার নিয়ে। এই টিম কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (CRPF), সশস্ত্র সীমা বল (SSB), ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ বাহিনী (ITBP), জাতীয় নিরাপত্তা গার্ড (NSG) এবং আসাম রাইফেলস থেকে নির্বাচিত হয়েছে।
কুকুরদের প্রজাতি ও দক্ষতা
- প্রজাতি: বেলজিয়ান ম্যালিনয়স
- বয়স: ৩-৫ বছর
- বিশেষ দক্ষতা:
- বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য সনাক্তকরণ
- সন্দেহজনক ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ
- টহল দেওয়া
বেলজিয়ান ম্যালিনয়স প্রজাতির কুকুরগুলি বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে অত্যন্ত পছন্দসই। এদের তীক্ষ্ণ ঘ্রাণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা রয়েছে। এই প্রজাতির কুকুররা ২০১১ সালে পাকিস্তানের আব্বোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের আস্তানা খুঁজে বের করতে মার্কিন বিশেষ বাহিনীকে সাহায্য করেছিল।
প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি
ভারতীয় কে-নাইন টিম প্যারিস অলিম্পিকের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হয়েছে:
- ১০ সপ্তাহব্যাপী বিশেষ প্রশিক্ষণ
- হ্যান্ডলারদের জন্য শারীরিক প্রশিক্ষণ
- ফরাসি ভাষার মৌলিক শিক্ষা
প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে কুকুরগুলিকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, অস্ত্র এবং সন্দেহজনক বস্তু সনাক্ত করতে পারে।
অলিম্পিকে ভারতীয় কে-নাইন টিমের দায়িত্ব
ভারতীয় কে-নাইন টিম প্যারিস অলিম্পিকে নিম্নলিখিত দায়িত্ব পালন করবে:
- বিভিন্ন ভেন্যুতে টহল দেওয়া
- সন্দেহজনক বস্তু ও ব্যক্তি সনাক্তকরণ
- বিস্ফোরক দ্রব্য খোঁজা
- জনতার মধ্যে নজরদারি
ফরাসি পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী এই টিম মোতায়েন করা হবে। এটি দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অলিম্পিকের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা
প্যারিস অলিম্পিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর:
বিবরণ | সংখ্যা |
---|---|
মোতায়েনকৃত পুলিশ | প্রতিদিন ৩০,০০০ |
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশ | ৪৫,০০০ |
সামরিক বাহিনীর সদস্য | ১৮,০০০ |
এছাড়াও প্যারিসের প্রান্তে একটি বিশাল বিশেষ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে যেখানে হাজার হাজার সামরিক সদস্য অবস্থান করছেন।
ভারতীয় অংশগ্রহণ
২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে:
- ১১৭ জন ক্রীড়াবিদ
- ১৪০ জন সহায়ক কর্মী ও কর্মকর্তা
এর মধ্যে ২৪ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য রয়েছেন যারা বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
ভারত-ফ্রান্স নিরাপত্তা সহযোগিতা
ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে দীর্ঘদিনের কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। ১৯৪৭ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৮ সালে এই সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়।বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সহযোগিতা রয়েছে:
- প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা
- মহাকাশ গবেষণা
- পারমাণবিক শক্তি
ফ্রান্স সর্বদা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ফ্রান্স ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী হাফিজ সাঈদকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তালিকাভুক্ত করতে সহায়তা করেছিল।
K-9 বাহিনী ফ্রান্সে আসার আগে কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন?
ভারতীয় K-9 বাহিনী ফ্রান্সে প্যারিস অলিম্পিকে যাওয়ার আগে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠোর এবং বিস্তৃত ছিল, যা তাদেরকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করেছে। নিচে এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো:
প্রশিক্ষণের স্থান ও মেয়াদ
- স্থান: বেঙ্গালুরুর তারালুতে অবস্থিত CRPF-এর ডগ ব্রিডিং এন্ড ট্রেনিং স্কুল
- মেয়াদ: ১০ সপ্তাহব্যাপী বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
প্রশিক্ষণের মূল বিষয়বস্তু
কুকুরদের প্রশিক্ষণ
কুকুরদের বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য চিহ্নিত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন গন্ধ এবং রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করতে সক্ষম।
সন্দেহজনক ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ:
জনাকীর্ণ স্থানে সন্দেহজনক ব্যক্তি চিহ্নিত করার জন্য কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা মানুষের আচরণ এবং শরীরের ভাষা পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে পারে।
টহল দেওয়া ও নজরদারি:
বিভিন্ন ভেন্যুতে টহল দেওয়া এবং নজরদারি করার জন্য কুকুরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা ভেন্যুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কাজ করার অভ্যাস:
কুকুরদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন পরিবেশে এবং পরিস্থিতিতে দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে।
শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি:
কুকুরদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটি তাদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
হ্যান্ডলারদের প্রশিক্ষণ
শারীরিক প্রশিক্ষণ:
হ্যান্ডলারদের শারীরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা কুকুরদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে পারে।
ফরাসি ভাষার মৌলিক শিক্ষা:
হ্যান্ডলারদের ফরাসি ভাষার মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যাতে তারা ফ্রান্সে কাজ করার সময় ভাষাগত সমস্যার সম্মুখীন না হয়।
কুকুরদের সাথে সমন্বয় ও যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়ন:
হ্যান্ডলারদের কুকুরদের সাথে সমন্বয় এবং যোগাযোগ দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটি তাদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে।
ট্রেন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি: ভারতের রেল ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি
বিশেষ প্রস্তুতি
অলিম্পিক ভেন্যুর অনুরূপ পরিবেশে মহড়া:
কুকুরদের অলিম্পিক ভেন্যুর অনুরূপ পরিবেশে মহড়া দেওয়া হয়েছে যাতে তারা বাস্তব পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকে।
বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ও অস্ত্র সনাক্তকরণের অভ্যাস:
কুকুরদের বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য এবং অস্ত্র সনাক্ত করার অভ্যাস করানো হয়েছে।
জনাকীর্ণ স্থানে কাজ করার প্রশিক্ষণ:
কুকুরদের জনাকীর্ণ স্থানে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা ভিড়ের মধ্যে সন্দেহজনক ব্যক্তি এবং বস্তু চিহ্নিত করতে পারে।
নির্বাচন প্রক্রিয়া
কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে সেরা কুকুর নির্বাচন:
প্রশিক্ষণের শুরুতে কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে সেরা কুকুর নির্বাচন করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় কুকুরদের শারীরিক সক্ষমতা, আনুগত্য এবং দক্ষতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে।এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারতীয় K-9 বাহিনী প্যারিস অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক ইভেন্টে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বমানের এবং এধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
প্যারিস অলিম্পিকে ভারতীয় কে-নাইন টিমের অংশগ্রহণ শুধু দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার নতুন মাত্রা নয়, এটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বেরও প্রতীক। এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে ভারত শুধু ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নয়, বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।ভারতীয় কুকুর বাহিনীর এই অভিযান নিঃসন্দেহে দেশের জন্য গর্বের। এটি প্রমাণ করে যে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী আন্তর্জাতিক মানের এবং বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া আসরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো যোগ্যতা রাখে। আশা করা যায়, এই সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভারত-ফ্রান্স সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।