Indian National Fish: ভারতের জাতীয় মাছ নয়, জলজ প্রাণী – জানুন এই প্রাণীর অজানা রহস্য!”গঙ্গার বুকে ভেসে বেড়ানো এক অদ্ভুত প্রাণী। চোখ আছে কিন্তু দেখতে পায় না, তবুও নদীর গভীরে সাঁতার কাটে অবলীলায়। এই প্রাণীটিই হলো ভারতের জাতীয় জলজ প্রাণী – গাঙ্গেয় নদী ডলফিন বা ‘সুসু’।২০০৯ সালে ভারত সরকার গাঙ্গেয় নদী ডলফিনকে জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করে। অনেকেই ভুল করে এটিকে ভারতের জাতীয় মাছ বলে থাকেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী, মাছ নয়।
গাঙ্গেয় নদী ডলফিন বিশ্বের চারটি মিঠা পানির ডলফিন প্রজাতির মধ্যে একটি। এরা সাধারণত ৭-৮ ফুট লম্বা এবং ৩৩০-৩৭৪ পাউন্ড ওজনের হয়। এদের গায়ের রঙ টান, চকলেট বাদামী বা হালকা নীল হতে পারে।এই প্রজাতির সবচেয়ে অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো এরা প্রায় অন্ধ। এদের চোখে লেন্স নেই, শুধুমাত্র আলোর দিক অনুভব করতে পারে। তবে প্রকৃতি এদের অন্য উপায়ে ক্ষতিপূরণ করেছে। এরা ইকোলোকেশন বা প্রতিধ্বনি অনুসরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে চলাফেরা করে এবং শিকার ধরে।
গাঙ্গেয় নদী ডলফিন মূলত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা ও কর্ণফুলী-সাঙ্গু নদী ব্যবস্থায় পাওয়া যায়। এরা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের নদীগুলোতে বসবাস করে। তবে বর্তমানে এদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
গাঙ্গেয় নদী ডলফিন বর্তমানে IUCN রেড লিস্টে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা বিশ্বে এদের সংখ্যা মাত্র ১২,০০০ থেকে ১৮,০০০ এর মধ্যে।
ভারত সরকার এই প্রজাতি রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০০৯ সালে জাতীয় জলজ প্রাণী ঘোষণার পাশাপাশি “ডলফিন অ্যাকশন প্ল্যান” নামে একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
গাঙ্গেয় নদী ডলফিন শুধু একটি প্রজাতি নয়, এটি সমগ্র নদী পরিবেশতন্ত্রের স্বাস্থ্যের নির্দেশক। এরা নদীর সর্বোচ্চ শিকারি প্রাণী। তাই এদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে নদীর পানি পরিষ্কার এবং অন্যান্য প্রজাতির সংখ্যাও ভালো।
বিষয় | তথ্য |
---|---|
বৈজ্ঞানিক নাম | প্লাটানিস্টা গ্যাঙ্গেটিকা |
আয়ুষ্কাল | ৩০ বছর পর্যন্ত |
খাদ্য | মাছ, চিংড়ি, কচ্ছপ |
বৈশিষ্ট্য | একপাশে সাঁতার কাটে |
শ্বাস নেওয়ার সময় | প্রতি ৩০-১২০ সেকেন্ডে একবার |
গঙ্গার ডলফিন সমগ্র নদী পরিবেশতন্ত্রের স্বাস্থ্যের একটি নির্ভরযোগ্য সূচক। এই প্রজাতির উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে নদীর পানি পরিষ্কার এবং জৈব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ। নদীর সর্বোচ্চ শিকারি প্রাণী হিসেবে এরা পুরো খাদ্য শৃঙ্খলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
IUCN রেড লিস্টে গঙ্গার ডলফিন বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। বিশ্বব্যাপী এদের সংখ্যা মাত্র ১২,০০০-১৮,০০০ এর মধ্যে। এই প্রজাতি রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।
গঙ্গার ডলফিন বিশ্বের চারটি মিঠা পানির ডলফিন প্রজাতির মধ্যে একটি। এরা প্রায় অন্ধ হলেও ইকোলোকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে চলাফেরা করে, যা এদেরকে অনন্য করে তোলে।
WB Tourist Places: ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য
হিন্দু পুরাণে গঙ্গার ডলফিনকে দেবী গঙ্গার বাহন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
২০০৯ সালে জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে ভারত সরকার এই প্রজাতি রক্ষায় তাদের অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে। এর ফলে “ডলফিন অ্যাকশন প্ল্যান” সহ বিভিন্ন সংরক্ষণ প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।
গঙ্গার ডলফিন নিয়ে গবেষণা নদী পরিবেশতন্ত্র, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানব কার্যকলাপের প্রভাব সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।সুতরাং, গঙ্গার ডলফিন শুধু একটি প্রজাতি নয়, এটি ভারতের নদী ব্যবস্থার জীবন্ত ঐতিহ্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতীক। জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে এর নির্বাচন দেশের জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি ভারতের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
গাঙ্গেয় নদী ডলফিন ভারতের জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে শুধু একটি প্রতীক নয়, এটি আমাদের নদী ব্যবস্থার জীবন্ত ঐতিহ্য। এই অনন্য প্রজাতিটি রক্ষা করা শুধু আমাদের দায়িত্বই নয়, এটি আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যও অপরিহার্য। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই অদ্ভুত প্রাণীটিকে রক্ষা করি এবং আমাদের নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করি।
মন্তব্য করুন