হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করতে চলেছে ভারতীয় রেল, প্রথম ট্রেন ছুটবে হরিয়ানায়

Indian Railways water train: ভারতীয় রেলওয়ে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চলেছে। পরিবেশ বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেন জ্বালানি চালিত ট্রেন চালু করতে চলেছে ভারত। ২০২৪ সালের…

Avatar

 

Indian Railways water train: ভারতীয় রেলওয়ে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চলেছে। পরিবেশ বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেন জ্বালানি চালিত ট্রেন চালু করতে চলেছে ভারত। ২০২৪ সালের মার্চ মাস নাগাদ হরিয়ানার জিন্দ-সোনিপত রুটে এই ট্রেনের প্রথম প্রোটোটাইপ চালু করা হবে। আইআইটি কানপুরের সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রকল্পের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কানপুরের ইলেকট্রিক লোকো শেডে এই হাইড্রোজেন ইঞ্জিন তৈরি করা হবে।

হাইড্রোজেন ট্রেনের বৈশিষ্ট্য:

• ডিজেল ইঞ্জিনের পরিবর্তে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহার করে
• হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ট্রেন চালায়
• শুধুমাত্র জলীয় বাষ্প নির্গত হয়, কার্বন ডাই-অক্সাইড বা অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয় না

প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ:

• জিন্দে দেশের প্রথম হাইড্রোজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে
• ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্ল্যান্টের কাজ শেষ হবে
• ৮টি বগি সম্বলিত প্রথম হাইড্রোজেন ট্রেন ৮৯ কিলোমিটার দূরত্বের জিন্দ-সোনিপত রুটে চলবে
ট্রেন দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি: ভারতের রেল ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি

পরিবেশগত প্রভাব:

ভারতীয় রেলওয়ের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে নেট জিরো কার্বন নির্গমনকারী হওয়া। বর্তমানে ভারতের পরিবহন খাতের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১২% আসে রেলওয়ে থেকে। হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করা এই লক্ষ্য অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট:

জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলিও হাইড্রোজেন ট্রেন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি অঞ্চলে ইতিমধ্যে ৫টি হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করা হয়েছে এবং তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সমস্ত ডিজেল ট্রেন বাতিল করার পরিকল্পনা করছে।

ভারতীয় রেলওয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

• ‘হাইড্রোজেন ফর হেরিটেজ’ প্রকল্পের অধীনে ৩৫টি হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করা হবে
• শিমলা, ডার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে এবং নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়েতে এই ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে
• প্রতিটি ট্রেন হাইড্রোজেন চালিত করার খরচ হবে প্রায় ৮০ কোটি টাকা

আর্থিক ও কারিগরি দিক:

হাইড্রোজেন ট্রেন প্রকল্পের জন্য ভারত সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বনির্ভর ভারত অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

• প্রতি কিলোমিটার চলার খরচ ডিজেল ট্রেনের তুলনায় ৪০% কম
• একবার রিফুয়েলিং করে ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারবে
• রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম
• জীবনকাল বেশিকারিগরি চ্যালেঞ্জ:
• হাইড্রোজেন স্টোরেজ ও পরিবহন ব্যবস্থা
• রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন
• নিরাপত্তা ব্যবস্থা
• দক্ষ টেকনিশিয়ান তৈরি

সামাজিক প্রভাব:

হাইড্রোজেন ট্রেন প্রকল্প শুধু পরিবহন ব্যবস্থাকেই আধুনিক করবে না, এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে:
• হাইড্রোজেন প্ল্যান্টে কর্মসংস্থান
• টেকনিক্যাল স্টাফের চাহিদা বৃদ্ধি
• গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে নতুন সুযোগ
• স্থানীয় শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:

ভারতীয় রেলওয়ের এই উদ্যোগ দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা করবে:
• ২০৩০ সালের মধ্যে সমস্ত ডিজেল ট্রেন প্রতিস্থাপনের লক্ষ্য
• হাইড্রোজেন অর্থনীতি গড়ে তোলা
• পরিবেশ বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার বিকাশ
• আন্তর্জাতিক মানের রেল পরিষেবা

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান:

প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সমস্ত চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
• হাইড্রোজেন উৎপাদন খরচ
• অবকাঠামো নির্মাণ
• প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব
• নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ
বন্দে ভারত ট্রেনের যাত্রী সংকট: রুট বন্ধের আশঙ্কায় রেল মন্ত্রক

এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলায় সরকার নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিয়েছে:

• বিদেশি প্রযুক্তি সহযোগিতা
• দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি
• গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ
• আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ
হাইড্রোজেন ট্রেন প্রকল্প ভারতীয় রেলওয়ের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি শুধু পরিবহন ব্যবস্থাকেই আধুনিক করবে না, পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের সবুজ প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম