Indian Visa Restrictions for Bangladeshi: ভারত সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করেছে। শুধুমাত্র চিকিৎসা এবং জরুরি প্রয়োজনে সীমিত সংখ্যক ভিসা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে প্রায় হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা বর্তমানে চিকিৎসা এবং জরুরি প্রয়োজনে সীমিত সংখ্যক ভিসা প্রদান করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরে এলে আমরা পূর্ণাঙ্গ ভিসা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করব।”
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত আগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশি ইউটিউবারের অবৈধ ভারত প্রবেশের ভিডিও ভাইরাল, উদ্বেগ বাড়ল
এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মধ্যে মেডিক্যাল টুরিজম ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। প্রতি বছর লক্ষাধিক বাংলাদেশি নাগরিক চিকিৎসার জন্য ভারত ভ্রমণ করেন। ২০২৩ সালে ৪,৪৯,৫৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিক চিকিৎসার জন্য ভারত ভ্রমণ করেছিলেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৪৮% বেশি।
ম্যাক্স হেলথকেয়ারের সিনিয়র ডিরেক্টর এবং চিফ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার জানিয়েছেন, “বাংলাদেশি রোগীরা সাধারণত অঙ্গ প্রতিস্থাপন, হৃদরোগ চিকিৎসা, স্নায়ুরোগ, অর্থোপেডিক এবং ক্যান্সার সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য আসেন। আমাদের ঢাকায় প্রতিনিধি রয়েছে যারা রোগীদের ভারতে আসার ব্যাপারে সহায়তা করেন।”
পারাস হেলথের গ্রুপ চিফ অপারেটিং অফিসার বলেছেন, “ভৌগলিক নৈকট্য (বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় সড়কপথে যাওয়া যায়), ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক মিল এই প্রবণতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, বেসরকারি মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলি ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট থেকে শুরু করে সমগ্র অবস্থানকালীন মেডিক্যাল পরামর্শদাতা পর্যন্ত ব্যাপক প্যাকেজ অফার করে, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজলভ্য করে তোলে।”
কলকাতা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইউনিট হেড জানিয়েছেন, “মহামারির পর পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে রোগীর সংখ্যা ১০% বেড়েছে। এই বৃদ্ধির কারণ হল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে ভৌগলিক নৈকট্য, সরাসরি ট্রেন ও বাস যোগাযোগ এবং অঞ্চলগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও খাদ্যাভ্যাসগত মিল।”
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড: ৫ লক্ষ টাকার বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা – জেনে নিন কীভাবে অনলাইনে চেক করবেন!
বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজনে ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে না। তবে অন্যান্য কারণে ভারত ভ্রমণে আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভারতীয় হাই কমিশন জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক ভিসা প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছে।
এদিকে, ভারত সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ই-মেডিক্যাল ভিসা সুবিধা চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে চিকিৎসার জন্য ভারত আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক অত্যাবশ্যক চিকিৎসার জন্য ভারত আসতে চান, তাদের জন্য কিছু পরামর্শ:
১. প্রয়োজনীয় সমস্ত Medical Document সংগ্রহ করুন।
২. ভারতীয় হাসপাতাল থেকে অফিসিয়াল আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ করুন।
৩. স্থানীয় ডাক্তারের রেফারেন্স লেটার সংগ্রহ করুন।
৪. চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র প্রস্তুত রাখুন।
৫. ভারতীয় হাই কমিশনের ওয়েবসাইট নিয়মিত চেক করুন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কারণে এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার সাথে সাথে ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এর জন্য কতটা সময় লাগবে তা এখনও অনিশ্চিত।
এদিকে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য একটি সুযোগ হতে পারে। তারা আশা করছেন, সরকার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের ভিতরে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেবে।
পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতি যতই চ্যালেঞ্জিং হোক না কেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস এবং দুই দেশের মধ্যকার গভীর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে এই সমস্যা অচিরেই সমাধান হবে বলে আশা করা যায়। তবে এর জন্য উভয় দেশের সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
মন্তব্য করুন