Bank of Maharashtra train ATM: ভারতীয় রেলওয়ে ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যখন ব্যাংক অফ মহারাষ্ট্র সেন্ট্রাল রেলওয়ের সাথে সহযোগিতায় দেশের প্রথম চলন্ত ট্রেনে ATM চালু করেছে। গত ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে নাসিকের মানমাদ এবং মুম্বাই-এর মধ্যে চলাচলকারী পঞ্চবটী এক্সপ্রেসে এই ATM টির সফল পরীক্ষামূলক চালনা সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে যাত্রীরা ট্রেন চলার সময়েই ক্যাশ উত্তোলন করতে পারবেন, যা ভারতীয় রেলের যাত্রী সেবায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ইনোভেটিভ প্রজেক্টের সূচনা ও উদ্দেশ্য
ভারতীয় রেলওয়ের ভুসাওয়াল ডিভিশন এবং ব্যাংক অফ মহারাষ্ট্রের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে এই অভিনব প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি ইনোভেটিভ অ্যান্ড নন-ফেয়ার রেভিনিউ আইডিয়াস স্কিম (INFRIS) এর অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছে। এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য হল দীর্ঘ রুটে চলাচলকারী ট্রেনের যাত্রীদের জন্য চলার পথে বাসিক ব্যাংকিং পরিষেবা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে যেসব রুটে স্টেশনে থামার সংখ্যা কম।
ইতি প্যান্ডে, ভুসাওয়ালের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার জানিয়েছেন, “এখন যাত্রীরা চলন্ত ট্রেনে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। আমরা মেশিনের কার্যক্ষমতা নিয়মিত মনিটর করব।” তিনি আরও বলেন, “ট্রেনে ATM রাখার ধারণাটি প্রথম ভুসাওয়াল ডিভিশন দ্বারা আয়োজিত একটি INFRIS মিটিং-এ উত্থাপিত হয়েছিল। প্রস্তাবটি আসার সাথে সাথেই আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করি।”
ATM স্থাপনের টেকনিক্যাল বিবরণ
ট্রেনের কোচে স্থাপনের অবস্থান
পঞ্চবটী এক্সপ্রেসের একটি এয়ার-কন্ডিশনড কোচে এই ATM টি স্থাপন করা হয়েছে। আগে যেখানে অস্থায়ী প্যান্ট্রি ছিল, কোচের পিছনের দিকে সেই স্থানটিকে ATM স্থাপনের জন্য রূপান্তরিত করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে এই এলাকাটি একটি রোলিং শাটার দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে এবং ২৪ ঘন্টা CCTV নজরদারির মাধ্যমে মনিটর করা হচ্ছে।
সুরক্ষা ব্যবস্থা
ATM টিকে কম্পন থেকে রক্ষা করার জন্য রাবার প্যাড এবং বোল্ট দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। তাছাড়া বরাদ্দকৃত জায়গায় দুটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য ATM টি শাটার সিস্টেমের সাথে সজ্জিত এবং চব্বিশ ঘন্টা CCTV নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
মানমাদ রেলওয়ে ওয়ার্কশপে প্রয়োজনীয় কোচ সংশোধন করা হয়েছে, রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে। সম্পূর্ণ রুটে নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি স্থিতিশীল থাকে কিনা তা রেল কর্তৃপক্ষ সতর্কভাবে নিরীক্ষণ করছে, যাতে যাত্রীরা কোনো সমস্যা ছাড়াই নগদ টাকা তুলতে পারেন।
সকল যাত্রীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্যতা
ভেস্টিবুল সংযোগ সুবিধা
যদিও ATM টি একটি এয়ার-কন্ডিশনড কোচে স্থাপন করা হয়েছে, তবে পঞ্চবটী এক্সপ্রেসের সমস্ত ২২টি কোচ ভেস্টিবুল (যোগ করিডোর) দ্বারা সংযুক্ত থাকায় সকল যাত্রীরা এই সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। এটি নিশ্চিত করে যে পরিষেবাটি সর্বাঙ্গীন এবং শুধুমাত্র এসি টিকেট রিজার্ভেশন থাকা যাত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
মাল্টি-ট্রেন সুবিধা
একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই ATM সুবিধাটি কেবল একটি নির্দিষ্ট ট্রেন রুটে সীমাবদ্ধ নয়। পঞ্চবটী এক্সপ্রেসের রেকটি মুম্বাই-হিঙ্গোলি জনশতাব্দী এক্সপ্রেসের সাথে শেয়ার করা হয়, যার ফলে এই সুবিধাটি আরও বৃহত্তর নেটওয়ার্কে প্রসারিত হবে, যা আরও বেশি সংখ্যক যাত্রীদের অপরিহার্য ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করবে।
ট্রায়াল রানের ফলাফল এবং চ্যালেঞ্জ
সফল পরীক্ষা
১৬ এপ্রিল, ২০২৫-এ পঞ্চবটী এক্সপ্রেসে চালানো পরীক্ষামূলক রানে ATM টি সাফল্যের সাথে কাজ করেছে। সেন্ট্রাল রেলওয়ের কর্মকর্তাদের মতে, মেশিনটি পরীক্ষার সময় দক্ষতার সাথে কাজ করেছে।
নেটওয়ার্ক চ্যালেঞ্জ
তবে ইগাতপুরি-কাসারা অংশে একটি অস্থায়ী নেটওয়ার্ক আউটেজ রিপোর্ট করা হয়েছিল, যা টানেল এবং পাহাড়ি এলাকার কারণে এই অঞ্চলে পরিচিত চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সত্ত্বেও, ATM-এর পারফরম্যান্স বড়সড় সফল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
জানা গেছে ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখন এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য কাজ করছে, যাতে পুরো রুটে নির্বিঘ্ন ব্যাংকিং পরিষেবা নিশ্চিত করা যায়।
ট্রেন ATM-এর সুবিধাসমূহ
যাত্রীদের জন্য সুবিধা
এই উদ্যোগটি যাত্রীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা নিয়ে এসেছে:
নগদ অর্থের সহজ প্রাপ্যতা: যাত্রীদের আর ভ্রমণের সময় নগদ অর্থের অভাব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
উন্নত সুবিধা: বিশেষ করে জরুরি অবস্থায় বা দূরবর্তী স্থানে যাত্রার সময়, যেখানে ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত।
উন্নত নিরাপত্তা: যেহেতু নগদ অর্থ একটি সুরক্ষিত পরিবেশে উত্তোলন করা হয়, এটি বড় অংকের অর্থ বহন করার ঝুঁকি কমায়।
একজন যাত্রী সঞ্জয় ঝা মন্তব্য করেছেন: “এটি রেলওয়ের একটি ভালো উদ্যোগ। লোকেরা অর্থ উত্তোলন করতে পারবে, চেকবুক অর্ডার করতে পারবে এবং স্টেটমেন্ট পেতে পারবে। এটি খুবই সহায়ক হবে।”
পঞ্চবটী এক্সপ্রেসে ATM হীরোর কাহিনি
ট্রেন পরিচিতি
পঞ্চবটী এক্সপ্রেস হল একটি দৈনিক চালিত ট্রেন যা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস (CSMT) মুম্বাই এবং মানমাদ জংশন (নাসিক) এর মধ্যে চলাচল করে। এর সময়সূচি এবং দ্রুত যাত্রা সময়ের জন্য পরিচিত, একমুখী যাত্রা সম্পন্ন করতে আনুমানিক ৪ ঘন্টা ৩৫ মিনিট সময় লাগে।
প্রযুক্তিগত অভিযোজন
এই ট্রেনে ATM স্থাপনের জন্য, কোচটিকে মানমাদ রেলওয়ে ওয়ার্কশপে সংশোধন করা হয়েছিল। ATM-টি কোচের পিছনের দিকে স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে আগে একটি অস্থায়ী প্যান্ট্রি ছিল। যাত্রা চলাকালীন নিরাপত্তা এবং অ্যাক্সেসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য, এই জায়গাটি একটি শাটার দরজা দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং সম্প্রসারণ সম্ভাবনা
অন্যান্য ট্রেনে সম্প্রসারণ
পাইলট প্রকল্প সফল হলে, ভারতীয় রেলওয়ে অন্যান্য দীর্ঘদূরের ট্রেনগুলিতেও এই ধরনের ইনস্টলেশন প্রসারিত করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা হলে, এটি ভারতীয় রেলওয়ের যাত্রীদের জন্য সুবিধা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
পাইলট প্রকল্পটি ভালোভাবে সফল হলে, ভারতীয় রেলওয়ে আগামী দিনে আরও অনেক রুট এবং ট্রেনে এই সেবা চালু করবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিষেবার পরবর্তী সংস্করণগুলিতে নগদ জমা সুবিধা, নির্দিষ্ট ট্রেনে মিনি ব্যাংক শাখা, বা এমনকি রেলওয়ে স্টেশনে মোবাইল ব্যাংকিং কিয়স্ক থাকতে পারে।
সেন্ট্রাল রেলওয়ের একজন মুখপাত্র ভুসাওয়াল ডিভিশন থেকে বলেছেন, “আমরা যাত্রীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করার নতুন উপায় খুঁজছি এবং এটি গতিশীল থাকা অবস্থায়ও মৌলিক ব্যাংকিং পরিষেবা উপলব্ধ করার দিকে একটি পদক্ষেপ।”
ব্যাংক অফ মহারাষ্ট্রের এই অভিনব উদ্যোগ ভারতীয় রেলওয়ের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটি রেল যাত্রীদের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, বিশেষ করে যারা দীর্ঘ দূরত্বের ট্রেনে যাত্রা করেন। চলন্ত ট্রেনে ATM সেবা প্রদান বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অনুকরণীয় একটি মডেল হতে পারে, যা যাত্রীদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই, ভারতীয় রেলওয়ে নিরন্তর নিজেকে পরিবর্তন করে যাত্রীদের জন্য বিশ্বমানের পরিষেবা প্রদান করার চেষ্টা করে চলেছে। Wi-Fi থেকে শুরু করে নতুন প্রজন্মের স্টেশন এবং উন্নত খাদ্য পরিষেবা, ATM-এর এই সংযোজন আরও প্রমাণ করে যে ভারতীয় রেলওয়ে তাদের নিজস্ব মানুষদের উন্নত এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব সমাধান প্রদান করে সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।