India’s first engineering college history: ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভিত্তি কোথায় গড়ে উঠেছিল, তা জানতে চাইলে চোখ ফেরে একটি প্রাচীন নামের দিকে। ভারতের প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল থমাসন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, যা বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) রুরকি নামে পরিচিত। ১৮৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু ভারতেরই নয়, এশিয়ার প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবেও গণ্য হয়। উত্তরাখণ্ডের রুরকি শহরে অবস্থিত এই কলেজটি সে সময় ব্রিটিশ শাসনকালে শুরু হয়েছিল এবং আজও এর গৌরব অটুট রয়েছে।
এই কলেজের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৮৪৭ সালের ২৫ নভেম্বর। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি করা। তৎকালীন গঙ্গা খাল নির্মাণের মতো বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এই কলেজের সূচনা। প্রথমে এটি একটি ছোট প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুরু হলেও, সময়ের সঙ্গে এটি বিবর্তিত হয়ে আজকের আইআইটি রুরকিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্যার জেমস থমাসন, যিনি উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার নামেই কলেজটির নামকরণ করা হয়।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং: জীবনের কোড পরিবর্তনের অসাধারণ প্রযুক্তি
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, এই কলেজটি শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ছিল না, বরং ব্রিটিশ ভারতে প্রকৌশল শিক্ষার পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করেছে। প্রথমদিকে এখানে শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হতো। ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো সড়ক, সেতু, খাল এবং রেলপথ নির্মাণের জন্য। ১৮৫৪ সালে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ কলেজে উন্নীত হয় এবং ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। পরবর্তীকালে, ১৯৪৯ সালে এটি রুরকি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ২০০১ সালে ভারত সরকার এটিকে আইআইটি-তে রূপান্তরিত করে। এই দীর্ঘ যাত্রায় কলেজটি অসংখ্য প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করেছে, যারা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গঙ্গা খালের নির্মাণকাজের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ১৮৪২ থেকে ১৮৫৪ সালের মধ্যে নির্মিত এই খালটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম বড় প্রকৌশল প্রকল্প। এই খালের নির্মাণে প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জনশক্তি সরবরাহের জন্যই মূলত কলেজটির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। গঙ্গা খাল আজও ভারতের কৃষি ও সেচ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রুরকির এই ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই কলেজের কাঠামো এবং পড়াশোনার ধরনও বদলেছে। আজ এটি শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, বরং ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটার সায়েন্স সহ বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা প্রদান করে। বর্তমানে আইআইটি রুরকি ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। এখান থেকে পড়াশোনা করে বেরিয়ে যাওয়া ছাত্ররা দেশ-বিদেশে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি প্রায় ১৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছে।
ঢাকার সেরা কলেজের তালিকা 2024: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্ভরযোগ্য গাইড
একটি মজার তথ্য হলো, এই কলেজের প্রথম ব্যাচে মাত্র কয়েকজন ছাত্র ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু আজ এই প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। এখানকার গবেষণা এবং উদ্ভাবনও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। ভারতের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এই প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আইআইটি রুরকি শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং ভারতের ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত প্রতীক। এটি প্রমাণ করে যে শিক্ষার মাধ্যমে কীভাবে একটি দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা যায়। ১৮৪৭ সালে যে স্বপ্নের বীজ বপন করা হয়েছিল, তা আজ একটি বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ভারতের প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে এর গৌরব কখনো ম্লান হবে না।