India glass bridge details and significance: কন্যাকুমারীতে সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে ভারতের প্রথম সমুদ্রের উপর কাঁচের সেতু, যা দুটি বিখ্যাত স্মৃতিসৌধকে সংযুক্ত করেছে। এই অভিনব নির্মাণকাজটি দেশের পর্যটন ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে এই কাঁচের সেতুর উদ্বোধন করেন। ৭৭ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার প্রশস্ত এই সেতুটি বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল এবং তিরুভল্লুভার মূর্তিকে সংযুক্ত করেছে। এই দুটি স্মৃতিসৌধ কন্যাকুমারীর উপকূলে অবস্থিত এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
সেতুর বৈশিষ্ট্য ও নির্মাণ
এই অনন্য সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। এর নির্মাণকৌশল এবং ব্যবহৃত উপকরণ অত্যন্ত উন্নতমানের:
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
---|---|
দৈর্ঘ্য | ৭৭ মিটার |
প্রস্থ | ১০ মিটার |
নির্মাণ ব্যয় | ৩৭ কোটি টাকা |
নকশা | ধনুকের মতো বাঁকানো |
উপাদান | কাঁচ ফাইবার |
স্থায়িত্ব | লবণাক্ত বাতাস ও আর্দ্রতা প্রতিরোধী |
সেতুটির নকশা ধনুকের মতো বাঁকানো, যা এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এটি কাঁচ ফাইবার দিয়ে তৈরি, যা সমুদ্রের লবণাক্ত বাতাস ও উচ্চ আর্দ্রতা সহ্য করতে সক্ষম। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে সেতুটি টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু যে ভাবে বদলে দেবে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা
পর্যটকদের জন্য নতুন আকর্ষণ
এই কাঁচের সেতু পর্যটকদের জন্য একটি অভিনব অভিজ্ঞতা প্রদান করবে:
- সমুদ্রের উপর দিয়ে হাঁটার অনুভূতি
- দুটি ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধের মধ্যে সহজ যাতায়াত
- চারপাশের অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের সুযোগ
- সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অনবদ্য দৃশ্য
আগে পর্যটকদের একটি স্মৃতিসৌধ থেকে অন্যটিতে যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হতো। এখন তারা সহজেই হেঁটে যেতে পারবেন, যা সময় ও অর্থ সাশ্রয় করবে।
ঐতিহাসিক তাৎপর্য
এই সেতু উদ্বোধনের তারিখটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ:
- তিরুভল্লুভার মূর্তির রজত জয়ন্তী উদযাপন
- ২৫ বছর আগে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধি এই মূর্তি উন্মোচন করেছিলেন
- তামিল সংস্কৃতি ও জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন এই অনুষ্ঠানে তিরুভল্লুভারের অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহকে “তিরুক্কুরাল সপ্তাह” হিসেবে ঘোষণা করেন।
বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল
বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল কন্যাকুমারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ:
- অবস্থান: কন্যাকুমারী উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে সমুদ্রের মধ্যে একটি শিলাখণ্ডে
- নির্মাণ: ১৯৭০ সালে
- উদ্দেশ্য: স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি সংরক্ষণ, যিনি এখানে ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন
- গঠন: বিবেকানন্দ মণ্ডপ, শ্রীপাদ মণ্ডপ ও ধ্যান মণ্ডপ
এই স্মৃতিসৌধ ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা ও দর্শনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
তিরুভল্লুভার মূর্তি
তিরুভল্লুভার মূর্তি তামিল সংস্কৃতি ও জ্ঞানের প্রতীক:
- উচ্চতা: ১৩৩ ফুট (তিরুক্কুরালের ১৩৩টি অধ্যায়ের প্রতীক)
- ওজন: প্রায় ৭,০০০ টন
- উন্মোচন: ১ জানুয়ারি, ২০০০
- শিল্পী: ভি গণপতি স্থপতি
- তাৎপর্য: তামিল দর্শন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতীক
সম্প্রতি এই মূর্তির নাম পরিবর্তন করে “জ্ঞানের মূর্তি” রাখা হয়েছে।
জয়পুর থেকে কলকাতা – বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের ভারতীয় শহরগুলি
কন্যাকুমারীর অন্যান্য আকর্ষণ
কন্যাকুমারী শুধু এই দুটি স্মৃতিসৌধের জন্যই নয়, আরও অনেক কারণে পর্যটকদের আকর্ষণ করে:
- ত্রিবেণী সঙ্গম: বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরের মিলনস্থল
- গান্ধী মেমোরিয়াল: মহাত্মা গান্ধীর অস্থি রক্ষিত আছে
- পদ্মনাভপুরম প্যালেস: ঐতিহাসিক রাজপ্রাসাদ
- সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য
- বাগাবাগা বীচ: সমুদ্র সৈকত
ভারতের প্রথম সমুদ্রের উপর কাঁচের সেতু কন্যাকুমারীর পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধু দুটি ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধকে সংযুক্ত করেনি, বরং পর্যটকদের জন্য একটি অভিনব অভিজ্ঞতার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই উদ্যোগ তামিলনাড়ুর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। আশা করা যায়, এই সেতু আগামী দিনে দেশি-বিদেশি আরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করবে এবং অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।