আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ভারত গত দশ বছরে একটি ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৫ সালের ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ভারতের জিডিপি ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা প্রায় ১০৫% বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অন্যান্য প্রধান বিশ্ব অর্থনীতিগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে এবং ভারতকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছে।
বর্তমানে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যার সামনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৩০.৩ ট্রিলিয়ন ডলার), চীন (১৯.৫ ট্রিলিয়ন ডলার), জার্মানি (৪.৯ ট্রিলিয়ন ডলার) এবং জাপান (৪.৪ ট্রিলিয়ন ডলার)1। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারত খুব শীঘ্রই জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে কারণ গত দশকে জাপানের জিডিপি প্রায় স্থবির থেকেছে। সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অনুসারে, ভারত ২০২৫ সালেই (বর্তমান বছর) জাপানকে অতিক্রম করে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হতে চলেছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে জার্মানিকেও ছাড়িয়ে তৃতীয় স্থানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
একই সময়কালে বিশ্বের অন্যান্য প্রধান অর্থনীতিগুলোর তুলনায় ভারতের এই প্রবৃদ্ধি অভূতপূর্ব। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ৬৬% এবং চীনের জিডিপি ৪৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে যুক্তরাজ্যের জিডিপি মাত্র ২৮% এবং ফ্রান্সের ৩৮% বেড়েছে1। রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং স্পেনের অর্থনীতিও যথাক্রমে ৫৭%, ৫৮% এবং ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে। তুলনামূলকভাবে, ব্রাজিলের জিডিপি এই দশকে মাত্র ৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৫ সালে ফ্রান্সের জিডিপি ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ছিল, যা তখন ভারতের ২.১ ট্রিলিয়ন ডলারের তুলনায় বেশি ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে ভারতের অর্থনীতি ফ্রান্সের তুলনায় প্রায় ৩০% বড় হয়ে গেছে, যেখানে ফ্রান্সের জিডিপি ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। একইভাবে, যুক্তরাজ্যও ২০১৫ সালে ভারতের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে ছিল, কিন্তু ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যের ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি ভারতের ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের চেয়ে কম।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ভারতের এই অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সাফল্য মূলত দেশের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ ভোগ, বিদেশি বিনিয়োগের বৃদ্ধি এবং সরকারি নেতৃত্বাধীন অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে সহজ ব্যবসা নীতি, সংস্কারমূলক অর্থনৈতিক পদক্ষেপ এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে দ্রুত অগ্রগতি এই উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
বিজেপি নেতা অমিত মালব্য এই অর্জনকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতের বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক নীতি এবং কাঠামোগত সংস্কারের ফলাফল বলে অভিহিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, “সক্রিয় অর্থনৈতিক নীতি, সাহসী কাঠামোগত সংস্কার এবং ব্যবসা সহজীকরণের ওপর ধারাবাহিক মনোযোগের মাধ্যমে, মোদি সরকার ভারতকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতির অবস্থানে নিয়ে এসেছেন – এমন একটি সম্মান যা স্বাধীনতার পর থেকে কোনো পূর্ববর্তী সরকারই অর্জন করতে পারেনি।”
যদিও ভারতের এই ঐতিহাসিক অর্জন অবিশ্বাস্য, তবুও বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির সাথে এখনো বিশাল ব্যবধান রয়েছে। চীনের অর্থনীতি (১৯.৫ ট্রিলিয়ন ডলার) ভারতের চেয়ে প্রায় ৪.৫ গুণ বড়, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি (৩০.৩ ট্রিলিয়ন ডলার) চীনের চেয়েও ১.৫ গুণ বড়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের পক্ষে চীন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করা আপাতত দূরবর্তী লক্ষ্য, তবে বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে ভারত আগামী কয়েক দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আইএমএফের মতে, ভারতের এই আশ্চর্যজনক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রযুক্তি, উৎপাদন এবং পরিষেবা খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। তবে এই প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ভারত আয় বৈষম্য, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার মতো চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন শুধু ভারতেরই নয়, সমগ্র এশিয়ার উত্থানকে নির্দেশ করে, যা বিংশ শতাব্দীকে “এশীয় শতাব্দী” হিসেবে প্রমাণ করার পথে এগিয়ে চলেছে। আগামী কয়েক বছরে ভারত কীভাবে জাপান ও জার্মানিকে অতিক্রম করে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়, তা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিসরে নজর রাখার বিষয় হবে।