Gorakhpur to Goa bus trip: ভারতের বিশাল ভূখণ্ড জুড়ে রয়েছে নানা রকম দূরপাল্লার বাস সার্ভিস। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ রুটটি হল গোরখপুর থেকে গোয়া পর্যন্ত। এই অবিশ্বাস্য যাত্রাপথে বাস চলে প্রায় ২,৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এবং সময় লাগে ৬০ ঘণ্টারও বেশি।
যাত্রাপথের বিস্তারিত বিবরণ
গোরখপুর থেকে শুরু হওয়া এই বাস যাত্রা উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র হয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছায় গোয়ার সৈকতে। পথে পড়ে বারাণসী, রেওয়া, জবলপুর, নাগপুর, ঔরঙ্গাবাদ, কোলহাপুর প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ শহর।এই দীর্ঘ যাত্রাপথে যাত্রীরা দেখতে পান ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য – গঙ্গার তীরভূমি থেকে শুরু করে বিন্ধ্য পর্বতমালা, মধ্য ভারতের জঙ্গল, দাক্ষিণাত্যের মালভূমি এবং শেষে পশ্চিম উপকূলের নয়নাভিরাম সৈকত।
গাড়িতে উঠলেই বমি হয়? বমি হবার সবচেয়ে বড় কারন এবং তার প্রতিকারের
বাস সার্ভিসের বিশেষত্ব
বর্তমানে এই রুটে একমাত্র Betrwanti Travels নামক একটি কোম্পানি বাস চালায়। তাদের AC 2+1 স্লিপার বাসে যাত্রীদের জন্য রয়েছে আরামদায়ক আসন ব্যবস্থা। এত দীর্ঘ সময়ের যাত্রার জন্য বাসে থাকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ।
অন্যান্য দীর্ঘ বাস রুট
গোরখপুর-গোয়া রুটের পরেই সবচেয়ে দীর্ঘ বাস যাত্রাপথগুলি হল:
রুট | দূরত্ব (কিমি) | সময় (ঘণ্টা) |
---|---|---|
বেঙ্গালুরু-জয়পুর | ২,২০০ | ৪৫ |
বেঙ্গালুরু-জৈসালমের | ২,০০০ | ৪৫ |
বেঙ্গালুরু-জৈতারণ | ১,৯৫৪ | ৪০ |
যাত্রার বৈশিষ্ট্য ও চ্যালেঞ্জ
এত দীর্ঘ সময়ের বাস যাত্রা নিঃসন্দেহে একটি অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ অভিযান। যাত্রীরা একটানা তিন দিন ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্য দিয়ে যাত্রা করেন। এর ফলে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ, ভাষা, খাবার ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।তবে এত দীর্ঘ যাত্রা বেশ চ্যালেঞ্জিংও বটে। যাত্রীদের দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বসে থাকতে হয়, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্তিকর। তাছাড়া পথে বিভিন্ন আবহাওয়া ও রাস্তার অবস্থার মোকাবেলা করতে হয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
লম্বা দূরত্বের বাস যাত্রার ধারণাটি নতুন নয়। ১৯৫৭ সালে লন্ডন থেকে কলকাতা পর্যন্ত একটি বাস সার্ভিস চালু হয়েছিল, যা ছিল সে সময়ের বিশ্বের দীর্ঘতম বাস রুট। এই যাত্রা শেষ করতে সময় লাগত প্রায় ৫০ দিন।সেই ঐতিহাসিক যাত্রাপথে বাস যেত ইংল্যান্ড থেকে বেলজিয়াম হয়ে পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ করত। এরপর নয়াদিল্লি, আগ্রা, এলাহাবাদ ও বারাণসী হয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাত কলকাতায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপট
বর্তমানে ভারতে দীর্ঘ দূরত্বের বাস যাত্রার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এর পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ:
- ট্রেনের তুলনায় বাসে যাত্রা অনেক সময় সস্তা ও সুবিধাজনক
- অনলাইন বুকিং প্ল্যাটফর্মের কারণে টিকিট কাটা সহজ হয়েছে
- আধুনিক AC বাসে যাত্রা আরামদায়ক
- বিমানের তুলনায় বাসে বেশি লাগেজ নেওয়া যায়
তবে এত দীর্ঘ যাত্রার জন্য অনেকেই এখনো ট্রেন বা বিমানকেই বেশি পছন্দ করেন। কারণ এতে সময় কম লাগে এবং যাত্রা তুলনামূলক আরামদায়ক হয়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ভারতের রাস্তাঘাট ও হাইওয়ে ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার সাথে সাথে দীর্ঘ দূরত্বের বাস যাত্রার সুযোগও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী দিনে এই ধরনের যাত্রা আরও জনপ্রিয় হবে। কারণ:
- পরিবেশবান্ধব যানবাহন হিসেবে বাসের চাহিদা বাড়বে
- স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় আন্তঃশহর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে
- ইলেকট্রিক বাসের ব্যবহার বাড়লে দূরপাল্লার যাত্রা আরও সাশ্রয়ী হবে
তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে উন্নত পরিকাঠামো, নিরাপদ রাস্তাঘাট ও আধুনিক বাস ফ্লিট। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
চাঁদ বনাম চাঁদমালা: মোদি-রাহুলের রাজনৈতিক যাত্রায় কে এগিয়ে?
গোরখপুর থেকে গোয়া পর্যন্ত ভারতের দীর্ঘতম বাস যাত্রা শুধু একটি পরিবহন মাধ্যমই নয়, এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। এই যাত্রাপথে ভারতের বৈচিত্র্যময় ভূগোল, সংস্কৃতি ও মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে যাত্রীদের। যদিও এটি একটি চ্যালেঞ্জিং যাত্রা, তবুও সাহসী ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।ভবিষ্যতে যানবাহন প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোর উন্নতির সাথে সাথে এই ধরনের দীর্ঘ বাস যাত্রা আরও আরামদায়ক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। তবে এর জন্য প্রয়োজন সুষম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। সামগ্রিকভাবে, এই ধরনের দীর্ঘ বাস যাত্রা ভারতের বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ডকে একসূত্রে গাঁথার একটি অনন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।