ভারত আগামী দশ মাসের মধ্যে চ্যাটজিপিটি এবং ডিপসিক-এর মতো নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল তৈরি করতে চলেছে। কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও আইটি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা করেছেন যে এই স্বদেশী এআই মডেলটি ভারতীয় প্রেক্ষাপট, ভাষা এবং সংস্কৃতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ ভারতকে বিশ্বব্যাপী এআই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে।
বৈষ্ণব উৎকর্ষ ওড়িশা কনক্লেভে জানিয়েছেন যে এআই মডেলের কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এখন সরকার এমন একটি সিস্টেম তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে যা ভারতীয় ব্যবহারকারীদের অনন্য চাহিদা পূরণ করবে2। গত দেড় বছর ধরে সরকারি দলগুলি স্টার্টআপ, গবেষক এবং অধ্যাপকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছে। সরকার ইতিমধ্যে নিজস্ব ফাউন্ডেশনাল মডেল তৈরির প্রস্তাব আহ্বান করেছে।
ভারতের এআই উদ্যোগকে শক্তিশালী করতে সরকার ১৮,৬৯৩টি উচ্চ-প্রযুক্তির গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) সমৃদ্ধ একটি সুবিধা স্থাপন করেছে8। তুলনামূলকভাবে, ডিপসিক এআই ২,০০০ জিপিইউ দিয়ে চালিত হয়, যখন চ্যাটজিপিটি ২৫,০০০ জিপিইউ ব্যবহার করে প্রশিক্ষিত হয়েছে। এই উল্লেখযোগ্য পরিকাঠামো ভারতকে বিশ্বমানের এআই মডেল তৈরিতে সক্ষম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়া এআই মিশন, যা ৭ মার্চ ২০২৪-এ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল, দেশে এআই বিকাশের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে5। ১০,৩৭২ কোটি টাকার বাজেট সহ এই মিশন সাতটি মূল স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এর অংশ হিসেবে, ইন্ডিয়া এআই ইনোভেশন সেন্টার (আইএআইসি) ৩০ জানুয়ারি ২০২৫-এ একটি প্রস্তাব আহ্বান করেছিল9। মাত্র এক মাসের মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ৬৭টি প্রস্তাব জমা পড়েছে।
প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলির মধ্যে ২২টি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) এবং লার্জ মাল্টিমোডাল মডেল (এলএমএম) এর মতো ফাউন্ডেশনাল মডেলের উপর কেন্দ্রিত6। অন্য ৪৫টি প্রস্তাব ডোমেন-নির্দিষ্ট স্মল ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এসএলএম) নিয়ে কাজ করবে, যা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং আর্থিক পরিষেবা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোকপাত করবে। এসব প্রস্তাবে অর্থায়ন এবং জিপিইউ সম্পদে অ্যাক্সেসের অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভারতের এআই মডেল কেবল একটি প্রযুক্তিগত সাফল্যই নয়, বরং এটি দেশের সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যকে সম্মান করার একটি প্রয়াসও বটে। মন্ত্রী বৈষ্ণব জোর দিয়ে বলেছেন যে এই মডেলটি সংস্কৃত, তামিল, তেলুগু, মারাঠি এবং বাংলা সহ হিন্দি ভাষাকেও সমর্থন করবে8। এটি ভারতের ২২টি নির্ধারিত ভাষায় এআই-চালিত সমাধান প্রদানের জন্য ডিজিটাল ইন্ডিয়া ভাষিণী উদ্যোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সরকার ভাষিণী প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৩৫০+ এআই-ভিত্তিক ভাষা মডেল বিকাশ করেছে। এগুলি অটোমেটিক স্পিচ রিকগনিশন (এএসআর), মেশিন ট্রান্সলেশন (এমটি), টেক্সট-টু-স্পিচ (টিটিএস), অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন (ওসিআর), ট্রান্সলিটারেশন এবং টেক্সচুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ ডিটেকশন সহ ১৭+ ভাষা পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করে।
ইন্ডিয়া এআই ইতিমধ্যে মেটার সাথে সহযোগিতা করে আইআইটি জোধপুরে শ্রীজন—একটি জেনারেটিভ এআই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়া, অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই) এর সহযোগিতায় “যুবএআই ইনিশিয়েটিভ ফর স্কিলিং অ্যান্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং” নামে একটি উদ্যোগ চালু করেছে6। এটি ভারতে ওপেন সোর্স এআই এর বিকাশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫-২৬ এ শিক্ষাক্ষেত্রে একটি এআই উৎকর্ষ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে7। এই উদ্যোগটি দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষা এবং শিক্ষাগত রূপান্তরকে তীব্র করবে, যা শেষ পর্যন্ত ভারতের যুবসমাজকে ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করবে।
সাম্প্রতিক খবর অনুসারে, ওপেনএআই এবং মেটা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাথে ভারতে সম্ভাব্য এআই সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করছে। এই আলোচনাগুলি চ্যাটজিপিটি’র ভারতে বিতরণ, এন্টারপ্রাইজ এআই সমাধান এবং স্থানীয় ডাটা হোস্টিং সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে চলছে।
ভারতের নিজস্ব এআই মডেল বিকাশ শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত অর্জনই নয়, বরং দেশের ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব এবং বিশ্বব্যাপী এআই বাজারে নেতৃত্বমূলক অবস্থান অর্জনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগ ভারতীয় স্টার্টআপ, গবেষক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য অসংখ্য সুযোগ খুলে দেবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অবদান রাখবে।