অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) নামক একটি সংস্থা সম্প্রতি ভারতের ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রীর সম্পত্তির হিসাব প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবচেয়ে কম সম্পদের অধিকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।এডিআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা। এই পরিমাণ অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীদের তুলনায় অত্যন্ত কম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাতবার সংসদ সদস্য এবং তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২১ শে জুলাই: রক্তাক্ত ইতিহাসের পটভূমিতে মমতা ব্যানার্জির অগ্নিকন্যা
কম সম্পদের অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি টাকার কিছু বেশি। পিনারাই বিজয়ন দীর্ঘদিন ধরে কেরালার রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন এবং বর্তমানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কম সম্পদের অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণও ১ কোটি টাকার কিছু বেশি। মনোহর লাল খাট্টার বিজেপির নেতা হিসেবে পরিচিত এবং ২০১৪ সাল থেকে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এডিআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ২৯ জনই (শতকরা ৯৭ ভাগ) কোটিপতি। তাদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ৩৩.৯৬ কোটি টাকা।সবচেয়ে বেশি সম্পদের অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী হলেন অন্ধ্র প্রদেশের জগনমোহন রেড্ডি, যাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৫১০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খান্ডু, যাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৬৩ কোটি টাকার বেশি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বল্প সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপির অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র কেয়া ঘোষ বলেছেন, “উনি নিজেই বলেছেন যে ছবি বিক্রি, গান লেখা বা বইয়ের রয়্যালটি থেকে তার খরচ চলে। তা সেই হিসাবগুলো কোথায় গেল? তার মাপের একজন নেত্রীর এই সম্পত্তি সত্যিই হাস্যকর। নিজেকে এতটাই সৎ আর সহজ সরল দেখানোর পেছনে অন্য কোনও কারণ নেই তো?”অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেছেন, “একটা দলে যে সবাই সৎ হবে, এটা তো আশা করা যায় না। কিন্তু এটাও দেখতে হবে, দুর্নীতির প্রশ্নে মমতা ব্যানার্জী কিন্তু জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলেন। খুবই বড় একজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাকে কিন্তু দল আর মন্ত্রীসভা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবতা নাকি অলীক কল্পনা?
নিম্নলিখিত তালিকায় ভারতের কয়েকজন প্রধান মুখ্যমন্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হলো:
মুখ্যমন্ত্রী | রাজ্য | সম্পত্তির পরিমাণ (টাকায়) |
---|---|---|
জগনমোহন রেড্ডি | অন্ধ্র প্রদেশ | ৫১০ কোটি |
প্রেমা খান্ডু | অরুণাচল প্রদেশ | ১৬৩ কোটি |
মনোহর লাল খাট্টার | হরিয়ানা | ১ কোটির কিছু বেশি |
পিনারাই বিজয়ন | কেরালা | ১ কোটির কিছু বেশি |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় | পশ্চিমবঙ্গ | ১৫ লক্ষ |
মুখ্যমন্ত্রীদের সম্পত্তির পরিমাণ তাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। কম সম্পদের অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীরা নিজেদের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে পারেন। অন্যদিকে, বেশি সম্পদের অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে পারে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে, তাঁর স্বল্প সম্পত্তি তাঁর সাদাসিধে জীবনযাপনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতন নেন না, সবটাই চলে যায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে। এটি তাঁর জনকল্যাণমুখী ভাবমূর্তি তৈরিতে সাহায্য করে।
ভারতের মুখ্যমন্ত্রীদের সম্পত্তির হিসাব থেকে দেখা যায় যে, অধিকাংশ মুখ্যমন্ত্রীই কোটিপতি। তবে কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী, যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পিনারাই বিজয়ন ও মনোহর লাল খাট্টার, তুলনামূলকভাবে কম সম্পদের অধিকারী। এই তথ্য জনসাধারণের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।যদিও সম্পত্তির পরিমাণ একজন নেতার সততা বা দক্ষতার একমাত্র মাপকাঠি নয়, তবুও এটি জনগণের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভবিষ্যতে এই তথ্য ভোটারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই মুখ্যমন্ত্রীদের সম্পত্তির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন