বিশ্বের শীর্ষ পঞ্চাশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় ভারত থেকে ৯টি নাম উঠে এসেছে, যা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক বড় সাফল্যের ইঙ্গিত দেয়। এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও জায়গা করে নিয়েছে, যা বাংলার শিক্ষার মান ও সম্ভাবনার প্রমাণ। কিন্তু ঠিক কোন প্রতিষ্ঠান কত নম্বরে রয়েছে? এই সংবাদে আমরা সেই বিষয়টি সহজ ভাষায় তুলে ধরব, যাতে আপনি এক নজরে পুরো চিত্রটা বুঝতে পারেন।
এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে বিশ্ববিখ্যাত কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংস, যিনি প্রতি বছর বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করেন। ২০২৫ সালের তালিকায় ভারতের ৯টি প্রতিষ্ঠান শীর্ষ ৫০-এ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (আইআইটি) এবং ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইআইএসইআর) এর মতো নামগুলো উল্লেখযোগ্য। পশ্চিমবঙ্গের কথা বললে, ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলকাতা (আইআইএসইআর কলকাতা) এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তবে বাংলার আরেকটি বড় নাম, যেমন জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, এই শীর্ষ ৫০-এ না থাকলেও তাদের অন্যান্য র্যাঙ্কিংয়ে ভালো অবস্থান রয়েছে।
এই র্যাঙ্কিংয়ের পেছনের গল্পটা বোঝার জন্য কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য জানা দরকার। কিউএস র্যাঙ্কিং তৈরি করা হয় শিক্ষার মান, গবেষণার প্রভাব, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কর্মসংস্থানের হারের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে। ভারতের যে ৯টি প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় এসেছে, তার মধ্যে আইআইটি দিল্লি, আইআইটি মুম্বাই, আইআইটি খড়গপুর এবং আইআইএসসি বেঙ্গালুরুর মতো নামগুলো শীর্ষে রয়েছে। আইআইএসইআর কলকাতা এই তালিকায় ৪০ থেকে ৫০-এর মধ্যে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, যা বাংলার জন্য গর্বের বিষয়। এই প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞান গবেষণায় তার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিখ্যাত এবং বিশ্বমানের গবেষক ও ছাত্র তৈরি করছে।
ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে বড় পরিবর্তন এসেছে। সরকারের নতুন শিক্ষানীতি (এনইপি ২০২০) এবং গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। আইআইটি ও আইআইএসইআর-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে বললে, আইআইএসইআর কলকাতা ছাড়াও জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ২০০-এর মধ্যে রয়েছে, যদিও এটি শীর্ষ ৫০-এ জায়গা করে নিতে পারেনি। বাংলার শিক্ষার ঐতিহ্য এবং গবেষণার প্রতি আগ্রহ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ফুটে উঠছে।
সহজভাবে বলতে গেলে, এই র্যাঙ্কিং শুধু একটা সংখ্যার খেলা নয়, এর পেছনে রয়েছে শিক্ষক, ছাত্র এবং গবেষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম। আইআইএসইআর কলকাতার কথাই ধরা যাক—এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বমঞ্চে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়, যার ফলে ছাত্ররা শুধু ডিগ্রি নিয়ে বেরোয় না, বরং বিশ্বমানের বিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে ওঠে। অন্যদিকে, আইআইটি খড়গপুর, যেটি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত, সেটিও শীর্ষ ৫০-এ রয়েছে এবং প্রকৌশল শিক্ষায় তার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছে।
এই সাফল্যের মধ্যেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। বাংলার আরও প্রতিষ্ঠান কেন শীর্ষে উঠে আসছে না? বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থায়নের অভাব, অবকাঠামোগত উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও কাজ করা দরকার। তবে আশার কথা হলো, বাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। আইআইএসইআর কলকাতা এবং আইআইটি খড়গপুরের এই অর্জন ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্যের পথ দেখাচ্ছে।
ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এই র্যাঙ্কিং একটা মাইলফলক। বাংলার প্রতিষ্ঠানগুলো এই তালিকায় জায়গা করে নিয়ে প্রমাণ করেছে যে, সঠিক পরিকল্পনা আর পরিশ্রম থাকলে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ভবিষ্যতে আরও বাঙালি প্রতিষ্ঠান যাতে এই তালিকায় আসে, সেটাই এখন সবার প্রত্যাশা।