দুর্গাপূজার বিসর্জনের দিন ইছামতী নদীতে ভারত-বাংলাদেশের মিলনমেলা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার সেই দৃশ্য দেখা গেল না। বাংলাদেশ থেকে কোনো প্রতিমা এসে ইছামতী নদীতে ভাসেনি। ফলে বিসর্জন দেখতে আসা পর্যটকরা হতাশ হয়েছেন।
প্রতি বছর দুর্গাপূজার বিসর্জনের দিন ইছামতী নদীতে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়। দুই দেশের মানুষ একসঙ্গে প্রতিমা বিসর্জন করেন। কিন্তু এবার সেই ঐতিহ্য ভাঙল। বাংলাদেশ থেকে কোনো প্রতিমা এসে ইছামতী নদীতে ভাসেনি।
উত্তর ২৪ পরগনার টাকি শহরে ইছামতী নদীর তীরে প্রতি বছর এই অনন্য দৃশ্য দেখা যায়। দুই দেশের মানুষ একসঙ্গে প্রতিমা বিসর্জন করেন, উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেন। কিন্তু এবার সেই দৃশ্য দেখা গেল না।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা থেকে প্রতি বছর প্রতিমা আসত ইছামতীতে বিসর্জনের জন্য। কিন্তু এবার সেখান থেকে কোনো প্রতিমা আসেনি। শুধুমাত্র ভারতের দিক থেকেই প্রতিমা বিসর্জন করা হয়েছে।
এই ঘটনায় হতাশ হয়েছেন পর্যটকরা। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসেছিলেন এই অনন্য দৃশ্য দেখার জন্য। কিন্তু তাঁদের আশা পূরণ হয়নি।
টাকির স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে প্রতিমা আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। এবার একেবারেই আসেনি। এর ফলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগও কমে গেছে।
টাকির পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ঘটনায় তাঁদের ব্যবসায় প্রভাব পড়বে। কারণ অনেক পর্যটক শুধুমাত্র এই দৃশ্য দেখার জন্যই টাকিতে আসেন।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছে কেন এবার প্রতিমা আসেনি। কিন্তু এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। যাতে আগামী বছর থেকে আবার এই ঐতিহ্য ফিরে আসে।
২০২১ সালে UNESCO ইছামতী নদীতে দুর্গা বিসর্জনকে Intangible Cultural Heritage of Humanity তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এর ফলে এই উৎসবের গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছিল।
গত বছর প্রায় ৫০,০০০ পর্যটক এসেছিলেন টাকিতে এই দৃশ্য দেখার জন্য। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রায় ১০ কোটি টাকার রাজস্ব এসেছিল। কিন্তু এবার সেই পরিমাণ অনেক কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টাকির পৌরসভার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন যাতে আগামী বছর থেকে আবার এই ঐতিহ্য ফিরে আসে। এর জন্য তারা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
ইছামতী নদীতে দুর্গা বিসর্জন শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে। এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ায় উভয় দেশের মানুষই দুঃখিত।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারাও চান যাতে এই ঐতিহ্য ফিরে আসে। কারণ এর মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে।
পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মন্ত্রী বলেছেন, তারা এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে নজর দিচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী বছর থেকে আবার এই অনুষ্ঠান পূর্ণ মর্যাদায় পালিত হবে।
ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অনেকে লিখেছেন, এই ঐতিহ্য হারিয়ে গেলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে।
বিসর্জনে বিদায়ের সুর: মা দুর্গার আগমনী বার্তা আসছে বছরের জন্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই এই ঐতিহ্য বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করা যাচ্ছে, আগামী বছর থেকে আবার ইছামতী নদীতে দুই দেশের মানুষ একসঙ্গে দুর্গা বিসর্জন করবেন। যাতে এই অনন্য ঐতিহ্য বজায় থাকে এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।