Mahalaya Tarpan: মহালয়া এসে গেছে। পিতৃপক্ষের শেষ দিনে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে তর্পণ করার রীতি রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তর্পণ কি শুধুমাত্র গঙ্গায় করতে হয়, নাকি অন্য জলাশয়েও করা যায়? চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে বিস্তারিত।
তর্পণের তাৎপর্য
তর্পণ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘তৃপ’ ধাতু থেকে, যার অর্থ হল তৃপ্তি সাধন করা। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, পিতৃপক্ষে পূর্বপুরুষরা পিতৃলোক থেকে মর্ত্যলোকে আসেন জল ও পিণ্ডের আশায়। তাই এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে জল ও অন্নদান করে তৃপ্তি সাধন করাই হল তর্পণের মূল উদ্দেশ্য।
তর্পণের স্থান নিয়ে ভুল ধারণা
অনেকেই মনে করেন যে তর্পণ শুধুমাত্র গঙ্গা নদীতেই করতে হয়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। শাস্ত্রমতে, তর্পণ যেকোনো জলাশয়েই করা যায়। গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী প্রভৃতি পবিত্র নদীতে তর্পণ করলে তা অবশ্যই বিশেষ ফলপ্রসূ হয়। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে অন্য জলাশয়ে তর্পণ করা যায় না।
Most Expensive Mango in the World: হিমসাগর নয়, আমের রাজত্বের শাহেন্ শা অন্য কেউ
বিকল্প জলাশয়ে তর্পণের বিধান
শাস্ত্রজ্ঞরা জানিয়েছেন, গঙ্গা বা অন্য পবিত্র নদীর কাছে না থাকলে নিম্নলিখিত যেকোনো জলাশয়ে তর্পণ করা যেতে পারে:
– পুকুর
– দীঘি
– জলাশয়
– কুয়ো
– নদী
– সমুদ্র
এমনকি বাড়িতেও তর্পণ করা যায়। সেক্ষেত্রে একটি পাত্রে জল নিয়ে তর্পণ করতে হবে।
তর্পণের পদ্ধতি
তর্পণের সময় নিম্নলিখিত উপকরণগুলি ব্যবহার করা হয়:
– জল
– তিল
– চন্দন
– তুলসীপাতা
– ত্রিপত্রী
পিতৃ ও মাতৃ তর্পণের সময় এই উপকরণগুলি ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য তর্পণের ক্ষেত্রে তিলের পরিবর্তে ধান বা যব ব্যবহার করা হয়।
Kidney: গরমকালে কিভাবে সুস্থ রাখবেন কিডনি? [বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ]
মহালয়ায় তর্পণের বিশেষ তাৎপর্য
মহালয়া হল পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবীপক্ষের সূচনা। এই দিন তর্পণ করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে:
1. পিতৃপক্ষের সমাপ্তি: মহালয়ায় পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে এবং দেবীপক্ষের সূচনা হয়।
2. সকল পূর্বপুরুষের স্মরণ: এই দিন সকল পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়।
3. দেবী দুর্গার আগমন: বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন।
4. চণ্ডীপাঠের রীতি: মহালয়ার দিন অতি প্রত্যুষে চণ্ডীপাঠ করার রীতি রয়েছে।
তর্পণের ব্যাপকতা
তর্পণ শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের জন্য নয়, এর মাধ্যমে সমগ্র মানব সভ্যতার কল্যাণ কামনা করা হয়। শাস্ত্রজ্ঞ নবকুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তর্পণ মন্ত্রে বলা হয়, “তৃপ্যন্তু সর্বমানবা”, অর্থাৎ সমস্ত মানুষ তৃপ্তিলাভ করুক।
এছাড়াও তর্পণের সময় নিম্নলিখিত গোষ্ঠীগুলিকেও স্মরণ করা হয়:
– যাঁদের পুত্র নেই
– যাঁদের কেউ নেই
– জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধু-বান্ধব
– যাঁরা জলের জন্য আকাঙ্ক্ষিত
মহিলাদের তর্পণ করার অধিকার
প্রাচীন কাল থেকেই মহিলারাও তর্পণ করে আসছেন। রামায়ণে উল্লেখ আছে, সীতা দশরথের পিণ্ডদান করেছিলেন। তাই মহিলাদেরও তর্পণ করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
মহালয়ায় তর্পণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু রীতি। এর মাধ্যমে আমরা শুধু পূর্বপুরুষদের স্মরণই করি না, সমগ্র মানব সভ্যতার কল্যাণ কামনা করি। তর্পণ করার জন্য গঙ্গা বা অন্য কোনো বিশেষ নদীর প্রয়োজন নেই। যেকোনো জলাশয় বা এমনকি বাড়িতেও তর্পণ করা যায়। মূল বিষয় হল শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে এই রীতি পালন করা।