Pinki Haryan: পিঙ্কি হারিয়ানের জীবনের গল্প শুনলে অবাক হতে হয়। একসময় যিনি রাস্তায় ভিক্ষা করতেন এবং আবর্জনার স্তূপ থেকে খাবার খুঁজে বেড়াতেন, সেই পিঙ্কিই আজ একজন যোগ্য ডাক্তার। তাঁর এই অসাধারণ জীবন পরিবর্তনের গল্প অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
হিমাচল প্রদেশের ম্যাকলডগঞ্জে একটি বস্তিতে জন্মগ্রহণ করেন পিঙ্কি হারিয়ান। তাঁর পরিবার চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাত। পিঙ্কি বাবা-মায়ের সঙ্গে রাস্তায় ভিক্ষা করতেন এবং আবর্জনার স্তূপ থেকে খাবার খুঁজে বেড়াতেন। কিন্তু ২০০৪ সালে তাঁর জীবনে একটি বড় পরিবর্তন আসে। সেই সময় লোবসাং জামিয়াং নামে একজন তিব্বতি শরণার্থী ভিক্ষুক পিঙ্কিকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখেন। জামিয়াং ধর্মশালা-ভিত্তিক টং-লেন চ্যারিটেবল ট্রাস্টের পরিচালক ছিলেন। তিনি পিঙ্কির পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হন যে শিক্ষাই পিঙ্কির জীবন পরিবর্তনের একমাত্র উপায়।
পিঙ্কির বাবা কাশ্মীরী লাল প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু জামিয়াংয়ের অনেক বোঝানোর পর তিনি মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে রাজি হন। এরপর পিঙ্কি ধর্মশালার দয়ানন্দ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। তিনি টং-লেন চ্যারিটেবল ট্রাস্টের হোস্টেলে থাকতে শুরু করেন। প্রথম দিকে পিঙ্কি বাড়ি ও বাবা-মাকে মিস করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারেন যে পড়াশোনাই তাঁর দারিদ্র্য থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাত দখল: মোবাইল রিংটোনে ‘জাস্টিস’ দাবি
উমাং ফাউন্ডেশন নামক একটি এনজিওর সভাপতি অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, পিঙ্কি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতেন। তাঁর পরিশ্রমের ফল মিলতে শুরু করে। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (NEET) পাস করেন। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজের উচ্চ ফি দিতে না পারায় তাঁর স্বপ্ন আটকে যায়।
এরপর ২০১৮ সালে টং-লেন চ্যারিটেবল ট্রাস্টের যুক্তরাজ্য শাখার সহায়তায় পিঙ্কি চীনের একটি বিখ্যাত মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সম্প্রতি তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে ধর্মশালায় ফিরে এসেছেন। এখন তিনি ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এক্সামিনেশন (FMGE) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যাতে ভারতে চিকিৎসক হিসেবে প্র্যাকটিস করতে পারেন।
পিঙ্কি হারিয়ান বলেছেন, “শৈশব থেকেই দারিদ্র্য ছিল আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা। পরিবারকে কষ্টের মধ্যে দেখা খুব যন্ত্রণাদায়ক ছিল। স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল জীবনে সফল হওয়া। বস্তিতে বাস করা আমার পক্ষে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল। আমি একটি ভালো ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল জীবন চেয়েছিলাম।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, চার বছর বয়সে স্কুলে ভর্তির সময় সাক্ষাৎকারে তিনি ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। “সে সময় আমি জানতাম না ডাক্তাররা কী কাজ করেন, কিন্তু আমি সবসময় আমার সম্প্রদায়কে সাহায্য করতে চেয়েছি,” পিঙ্কি বলেছেন।
পিঙ্কির সাফল্য তাঁর পরিবারকেও অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর ভাই ও বোন এখন স্কুলে পড়াশোনা করছেন। পিঙ্কি জামিয়াংকে তাঁর “বস্তিবাসী থেকে ডাক্তার” হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হিসেবে শ্রেয় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তিনি (জামিয়াং) দরিদ্র ও অসহায় শিশুদের সাহায্য করার স্বপ্ন দেখতেন। স্কুলে থাকার সময় তিনি ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় সহায়তা। আমার প্রতি তাঁর বিশ্বাস আমাকে ভালো করার জন্য বড় অনুপ্রেরণা ছিল।”
Ambassador-এর নতুন মডেল দেখে চোখ কপালে উঠবে! ভারতীয় গাড়ি প্রেমীদের জন্য এই সুখবর
জামিয়াং বলেছেন, তিনি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দরিদ্র শিশুদের মৌলিক শিক্ষা দেওয়ার আশায়, যাতে তারা সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে। তিনি বলেছেন, “আমি বুঝতে পারিনি যে এই শিশুরা এত প্রতিভাবান। তারা রোল মডেল হয়ে উঠেছে এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করছে।”
অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, জামিয়াং মনে করেন শিশুদের “অর্থ উপার্জনের যন্ত্র” হিসেবে দেখা উচিত নয়। তার পরিবর্তে তাদের ভালো মানুষ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। শ্রীবাস্তব বলেছেন, “তিনি তাঁর সমগ্র জীবন বস্তিতে বসবাসকারী শিশুদের জন্য উৎসর্গ করেছেন। অনেকে, যারা একসময় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত, তিনি তাদের দত্তক নিয়েছেন এবং আজ তারা ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ও সাংবাদিক হয়েছে।”
পিঙ্কি হারিয়ানের গল্প প্রমাণ করে যে দৃঢ় সংকল্প ও সঠিক সহায়তা পেলে জীবনের যে কোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। তাঁর জীবন পরিবর্তনের গল্প অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যারা দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের কাছে পিঙ্কির গল্প আশার আলো জ্বালিয়েছে।
পিঙ্কির গল্প থেকে আমরা শিখতে পারি যে শিক্ষা ও সুযোগ পেলে প্রত্যেকেই নিজের জীবন বদলাতে পারে। এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সমাজের প্রত্যেক মানুষের মধ্যে অসীম সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। আমাদের দায়িত্ব হলো সেই সম্ভাবনাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
পিঙ্কির মতো আরও অনেক প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে আছে যারা সুযোগের অভাবে নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করতে পারছে না। তাই সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উচিত দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া। পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক সদস্যের উচিত নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এই ধরনের উদ্যোগে সহায়তা করা।
পিঙ্কি হারিয়ানের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে অসাধারণ সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। আমাদের দায়িত্ব হলো সেই সম্ভাবনাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। তাহলেই আমরা একটি সুন্দর ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারব, যেখানে প্রত্যেকের জন্য থাকবে উন্নতির সুযোগ।