Egg or chicken first controversy: প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ ভেবে আসছে – আসলে কোনটা আগে এসেছিল, ডিম নাকি মুরগি? এই প্রশ্নটি শুধু একটি মজার ধাঁধা নয়, বরং এটি জীবনের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে গভীর দার্শনিক প্রশ্ন তোলে।
আধুনিক বিজ্ঞান এই প্রশ্নের একটি স্পষ্ট উত্তর দিয়েছে – ডিমই আগে এসেছিল।বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিম মুরগির চেয়ে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল। প্রথম ডিম দেখা গিয়েছিল প্রায় ৩৪০ মিলিয়ন বছর আগে, যখন সরীসৃপরা জলের বাইরে বসবাস শুরু করেছিল। অন্যদিকে, আধুনিক মুরগি মাত্র ১০,০০০ বছর আগে মানুষের দ্বারা পোষ মানানো হয়েছিল।কিন্তু এই সহজ উত্তরের পিছনে রয়েছে একটি জটিল ইতিহাস। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক আরিস্টটল থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত অনেকেই এই প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। আরিস্টটল মনে করতেন যে ডিম ও মুরগি দুটোই অনন্তকাল ধরে বিদ্যমান।
রাতের আতঙ্ক: আপনার ভয়ের স্বপ্ন কি আসলে একটি গুরুতর রোগের লক্ষণ?
কিন্তু বিবর্তনের তত্ত্ব আবিষ্কারের পর এই ধারণা পাল্টে যায়।বিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, প্রথম মুরগি একটি ডিম থেকেই জন্মেছিল। কিন্তু সেই ডিমটি ঠিক আধুনিক মুরগির মতো কোনো প্রাণী থেকে আসেনি। বরং তা এসেছিল একটি প্রাচীন পাখি থেকে, যা মুরগির পূর্বসূরি ছিল। এই প্রাচীন পাখিটি নিজেও একটি ডিম থেকে জন্মেছিল, যা আরও প্রাচীন কোনো প্রজাতি থেকে এসেছিল।এভাবে পিছনে যেতে থাকলে আমরা দেখব যে প্রথম ডিম এসেছিল সরীসৃপদের কাছ থেকে। সরীসৃপরা প্রথম প্রাণী যারা শক্ত খোলসযুক্ত ডিম পাড়তে পারত, যা জলের বাইরেও টিকে থাকতে পারত।
এই ধরনের ডিম পাওয়া গেছে প্রায় ৩১২ মিলিয়ন বছর পুরনো জীবাশ্মে।তাহলে মুরগি কখন এলো? আধুনিক মুরগি (Gallus gallus domesticus) হলো একটি পোষা পাখি, যা মানুষের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১০,০০০ বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলে বসবাসকারী লাল জঙ্গলি মুরগি (Red Junglefowl) থেকে আধুনিক মুরগির উৎপত্তি হয়েছে। মানুষ ধীরে ধীরে সবচেয়ে কম আক্রমণাত্মক পাখিগুলোকে বেছে নিয়ে প্রজনন করিয়েছে, যার ফলে বর্তমানের পোষা মুরগির জন্ম হয়েছে।এখন একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যাক। একটি গড় মুরগি বছরে ৩০০-৩২৫টি ডিম পাড়ে। একটি ডিম তৈরি করতে মুরগির ২৪-২৬ ঘণ্টা সময় লাগে। মুরগির বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার ডিমের আকারও বড় হতে থাকে।
মজার ব্যাপার হলো, মুরগির ডিমের রঙ মুরগির প্রজাতির উপর নির্ভর করে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ডিম সাধারণত বাদামী বা সাদা হয়, কিন্তু কিছু প্রজাতির মুরগি নীল, সবুজ এমনকি গোলাপী রঙের ডিমও পাড়তে পারে।ডিমের খোলসে প্রায় ১৭,০০০টি ছিদ্র থাকতে পারে। এই ছিদ্রগুলো ডিমের ভিতরে অক্সিজেন প্রবেশ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুরগি দিনে প্রায় ৫০ বার তার ডিম ঘোরায়, যাতে কুসুম খোলসের সাথে না লেগে যায়।ডিম শুধু খাদ্য হিসেবেই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। ডিমে লুটিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা ছানি ও পেশী অবক্ষয় প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ডিমের কুসুম ভিটামিন ডি-এর একটি প্রাকৃতিক উৎস।এখন আসি মূল প্রশ্নে – তাহলে কি ডিম-ই আসলে আগে এসেছিল? হ্যাঁ, কিন্তু এটা একটু জটিল। যদি আমরা সাধারণভাবে ডিমের কথা বলি, তাহলে নিঃসন্দেহে ডিম-ই আগে এসেছিল। কিন্তু যদি আমরা শুধুমাত্র মুরগির ডিমের কথা বলি, তাহলে উত্তরটা একটু ভিন্ন হবে।প্রথম “মুরগির ডিম” আসলে একটি প্রাক-মুরগি (proto-chicken) থেকে এসেছিল।
চিকেন বনাম ডিম: কোনটি বেশি পুষ্টিকর? পুষ্টিবিদরা যা বলছেন
এই প্রাক-মুরগি ছিল একটি প্রাণী যা আধুনিক মুরগির খুব কাছাকাছি কিন্তু পুরোপুরি মুরগি নয়। এই প্রাক-মুরগি একটি ডিম পাড়লো যেখানে জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে প্রথম আধুনিক মুরগি জন্মালো।সুতরাং, যদি আমরা কেবল মুরগির ডিমের কথা বলি, তাহলে প্রথম মুরগির ডিম এবং প্রথম মুরগি প্রায় একই সময়ে এসেছিল। কিন্তু যেহেতু সেই ডিমটি একটি প্রাক-মুরগি থেকে এসেছিল, তাই বলা যায় যে ডিম-ই আগে এসেছিল।এই প্রশ্নটি শুধু একটি মজার ধাঁধা নয়, এটি আমাদের জীবনের উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে। এটি দেখায় যে প্রকৃতিতে পরিবর্তন ধীরে ধীরে ঘটে, এবং নতুন প্রজাতির উদ্ভব একটি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
শেষ পর্যন্ত, এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের দেখায় যে জীবনের ইতিহাস কতটা বিস্ময়কর ও জটিল। প্রতিটি প্রজাতি, এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ মুরগিও, লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ফসল। এই জ্ঞান আমাদের প্রকৃতির প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল করে তোলে এবং জীবনের বিচিত্রতা ও জটিলতার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে।
মন্তব্য করুন