Auto Rickshaws: Unveiling the Secret Behind Their 3 Wheels: অটোরিকশা বা তিন চাকার যানটি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত উষ্ণ ও উপগ্রীষ্ম জলবায়ুর দেশগুলিতে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম। এই যানটি মূলত টানা রিকশা বা সাইকেল রিকশার মোটরচালিত সংস্করণ। অধিকাংশ অটোরিকশার তিনটি চাকা থাকে এবং এগুলি কাত হয় না।
অটোরিকশা তৈরির ইতিহাস ১৯৩০ এর দশকে জাপানে শুরু হয়েছিল। সে সময় জাপান ছিল এশিয়ার সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশ এবং তারা মোটরসাইকেল ভিত্তিক সস্তা তিন চাকার যান তৈরির উদ্যোগ নেয়। ১৯৩১ সালে প্রকাশিত Mazda-Go নামের একটি তিন চাকার খোলা “ট্রাক”কে প্রায়শই অটোরিকশার পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পরবর্তীতে জাপান সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে প্রায় ২০,০০০টি ব্যবহৃত তিন চাকার যান বিতরণ করে। এগুলি কিছু অঞ্চলে, বিশেষত থাইল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৬৫ সালে জাপান সরকার দেশে তিন চাকার যানের লাইসেন্স বাতিল করার পর থাইল্যান্ড স্থানীয়ভাবে এর উৎপাদন ও ডিজাইন শুরু করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অটোরিকশার উৎপাদন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে Daihatsu Midget এর নক-ডাউন প্রোডাকশন দিয়ে। তবে ফিলিপাইনের ট্রাইসাইকেল এর ব্যতিক্রম, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি সেনাবাহিনী কর্তৃক আনীত Rikuo Type 97 মোটরসাইকেলের সাইডকার থেকে উদ্ভূত।
অটোরিকশা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন – wheel, Adaidaita Sahu, Keke-napep, Maruwa, auto rickshaw, auto, baby taxi, bajaj, bao-bao, chand gari, easy bike, jonnybee, lapa, lapa-lapa, mototaxi, pigeon, pragya, tuktuk, tukxi, এবং tum-tum।
অটোরিকশা সাধারণত তিন ধরনের হয়:
১. সবচেয়ে প্রচলিত ধরনটিতে থাকে ধাতব বডি বা খোলা ফ্রেম, তিনটি চাকা, ক্যানভাসের ছাদ ও পার্শ্ব পর্দা, সামনে চালকের জন্য ছোট কেবিন এবং পিছনে মালামাল বা যাত্রী বহনের জায়গা।
২. আরেকটি ধরনে থাকে বিস্তৃত সাইডকার যুক্ত মোটরসাইকেল।
৩. তৃতীয় ধরনে মোটরসাইকেল যাত্রী কম্পার্টমেন্ট টেনে নিয়ে যায়।২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতের Bajaj Auto বিশ্বের সবচেয়ে বড় অটোরিকশা নির্মাতা। ২০১৯ অর্থবছরে তারা ৭৮০,০০০টি অটোরিকশা বিক্রি করেছে।
অটোরিকশা কেন তিন চাকার হয় তার কয়েকটি কারণ:
১. স্থিতিশীলতা: তিনটি চাকা যানটিকে অধিক স্থিতিশীল করে। দুই চাকার যানের তুলনায় তিন চাকার যান সহজে উল্টে যায় না।
২. লোড বহন ক্ষমতা: তিনটি চাকা থাকায় অটোরিকশা অধিক ওজন বহন করতে পারে। এটি যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের জন্য উপযুক্ত।
৩. সহজ চালনা: তিন চাকার কারণে অটোরিকশা চালানো অপেক্ষাকৃত সহজ। এটি কম গতিতে চলে এবং সংকীর্ণ রাস্তায়ও সহজে চলাচল করতে পারে।
৪. কম খরচ: দুই চাকার যানের তুলনায় তিন চাকার যান অধিক স্থায়ী ও কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। এটি খরচ কমায়।
৫. নিরাপত্তা: তিনটি চাকা থাকায় যানটি অধিক নিরাপদ। দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে।
৬. বহুমুখী ব্যবহার: তিন চাকার ডিজাইন অটোরিকশাকে যাত্রী ও মালামাল উভয় পরিবহনের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
অটোরিকশা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলি ভাড়ার যান হিসেবেও ব্যবহৃত হয় আবার ব্যক্তিগত ব্যবহারেও নেওয়া হয়। বিশেষত উষ্ণ বা উপগ্রীষ্ম জলবায়ুর দেশগুলিতে এগুলি বেশি জনপ্রিয় কারণ এগুলি সাধারণত সম্পূর্ণ বদ্ধ নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও এগুলি বেশি দেখা যায় কারণ এগুলি তুলনামূলকভাবে কম খরচে কেনা ও চালানো যায়।
চমকপ্রদ! নতুন Jawa 350 – ক্লাসিক স্টাইলে আধুনিক প্রযুক্তির মিলন, দাম মাত্র ২ লক্ষ টাকা!
ভারতে অটোরিকশা দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মোট ৫,৮৮৭টি অটোরিকশা দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটি ২০১৬ সালের ৬,০৯৫টি দুর্ঘটনার তুলনায় কম। ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৬,৩৬৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে এবং সর্বনিম্ন ৫,৪৩০টি দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০১৫ সালে। অটোরিকশা পরিবেশবান্ধব পরিবহন মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে অনেক দেশে বৈদ্যুতিক অটোরিকশা চালু হয়েছে যা বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করছে। গ্যাস চালিত অটোরিকশা দুই-স্ট্রোক ইঞ্জিনের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি পরিষ্কার।
অটোরিকশা শহুরে পরিবহন ব্যবস্থায় একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এগুলি স্বল্প দূরত্বের যাত্রা এবং “শেষ মাইল” পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এগুলি অন্যান্য গণপরিবহন মাধ্যমের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং কম খরচের কারণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।বর্তমানে অটোরিকশার ডিজাইন ও প্রযুক্তি ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। বৈদ্যুতিক অটোরিকশা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। যেমন – বিক্রয় কার্ট হিসেবে ব্যবহার, ছোট অগ্নিনির্বাপক যান হিসেবে ব্যবহার ইত্যাদি।
সামগ্রিকভাবে, অটোরিকশা তার তিন চাকার ডিজাইনের কারণে একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও বহুমুখী পরিবহন মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও পরিবেশবান্ধব রূপে আমাদের সামনে আসবে বলে আশা করা যায়।