iQOO Z10x full specifications: ভারতীয় স্মার্টফোন বাজারে মধ্যম বাজেটের সেগমেন্টে এপ্রিল ২০২৫ সালে iQOO Z10x লঞ্চ হয়েছে। এটি iQOO Z9x এর উত্তরসূরি হিসেবে বাজারে এসেছে যা কিনা বড় ব্যাটারি, ভালো প্রসেসর এবং আধুনিক ডিজাইন নিয়ে এসেছে। ১৩,৪৯৯ টাকা থেকে শুরু করা এই ফোনে রয়েছে ৬৫০০ mAh এর বিশাল ব্যাটারি, ডাইমেনসিটি ৭৩০০ চিপসেট এবং ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটের ডিসপ্লে। আসুন জেনে নেই এই ফোনের বিস্তারিত স্পেসিফিকেশন, বিশেষত্ব এবং দাম সম্পর্কে।
iQOO Z10x এর প্রধান বৈশিষ্ট্য
iQOO Z10x একটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি স্মার্টফোন যা কিনা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, বিশাল ব্যাটারি এবং আকর্ষণীয় ডিজাইন দিয়ে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করছে। এটিতে রয়েছে ৬.৭২ ইঞ্চি ফুল এইচডি+ এলসিডি ডিসপ্লে যার রিফ্রেশ রেট ১২০Hz এবং ব্রাইটনেস ১০৫০ নিটস। ফোনটি মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ৭৩০০ প্রসেসর দ্বারা চালিত যা ৬জিবি এবং ৮জিবি র্যাম অপশন সহ আসে। কিছু প্রতিযোগী ফোনের তুলনায় এই ফোনের পারফরম্যান্স বেশ ভালো হওয়ার ফলে এটি গেমারদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি
iQOO Z10x দুটি আকর্ষণীয় কালার অপশনে পাওয়া যায় – আল্ট্রামারিন এবং টাইটানিয়াম। ফোনটির ম্যাট-গ্লিটার ফিনিশ এবং গ্লসি ক্যামেরা আইল্যান্ড একে প্রিমিয়াম লুক দেয়। এর IP64 রেটিং এবং মিলিটারি-গ্রেড ডিউরাবিলিটি সার্টিফিকেশন এই মূল্যের জন্য একটি বড় প্লাস পয়েন্ট। ২০৪ গ্রাম ওজন এবং ৮.১ মিমি পুরুত্ব সহ ফোনটি হাতে ধরা মোটামুটি আরামদায়ক।
ডিসপ্লে এবং পারফরম্যান্স
ডিসপ্লে
iQOO Z10x এ রয়েছে ৬.৭২ ইঞ্চি ফুল এইচডি+ এলসিডি ডিসপ্লে যার রেজোলিউশন ১০৮০×২৪০৮ পিক্সেল। ১২০Hz রিফ্রেশ রেট সহ এই ডিসপ্লে স্মুথ স্ক্রোলিং এবং গেমিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য দারুণ। যদিও এটি AMOLED ডিসপ্লে নয়, তবে এর কালার অ্যাকুরেসি (ক্যালম্যান ডিসপ্লে টেস্টে গড় DeltaE ১.৭) এবং ১০৫০ নিটস ব্রাইটনেস ভালো ভিউয়িং এক্সপেরিয়েন্স প্রদান করে।
পারফরম্যান্স
iQOO Z10x মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ৭৩০০ প্রসেসর দিয়ে চালিত যার মধ্যে রয়েছে ৪টি ২.৫ GHz কর্টেক্স-A78 এবং ৪টি ২.০ GHz কর্টেক্স-A55 কোর। এর মালি-G615 MC2 GPU গেমিংয়ের জন্য ভালো পারফরম্যান্স দেয়। AnTuTu বেঞ্চমার্কে এটি ৬৮৮,৪৭৫ স্কোর করেছে, যা এই মূল্যের ফোনের মধ্যে ভিভো T4x এবং CMF Phone 1 এর থেকে সামান্য বেশি। গিকবেঞ্চ রেজাল্টেও এটি সিঙ্গেল কোরে ১,০২৮ এবং মাল্টি কোরে ২,৮১৬ স্কোর করেছে।
UFS 3.1 স্টোরেজ টেকনোলজি এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে, যা দ্রুত অ্যাপ লোডিং এবং স্মুথ মাল্টিটাস্কিং নিশ্চিত করে। ফোনটি FuntouchOS 15 সহ Android 15 অপারেটিং সিস্টেম চালায় এবং কোম্পানি ২ বছরের Android আপডেট এবং ৩ বছরের সিকিউরিটি আপডেট প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ক্যামেরা সিস্টেম
iQOO Z10x এ রয়েছে ডুয়াল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ যার মধ্যে একটি ৫০MP মেইন ক্যামেরা এবং একটি ২MP ডেপথ সেন্সর রয়েছে। মেইন ক্যামেরাটি বেশ ভালো ফটো তুলতে সক্ষম, তবে লো-লাইট কন্ডিশনে এর পারফরম্যান্স মোটামুটি। ফোনে বিভিন্ন ক্যামেরা ফিচার রয়েছে যেমন নাইট মোড, পোট্রেট মোড, পানোরামা, স্লো-মোশন, টাইম-ল্যাপস, প্রো মোড ইত্যাদি।
সেলফি প্রেমীদের জন্য ফোনে একটি ৮MP ফ্রন্ট ক্যামেরা রয়েছে যা পাঞ্চ-হোল ডিজাইনের ভিতরে অবস্থিত। ভিডিও রেকর্ডিং এর ক্ষেত্রে, রিয়ার ক্যামেরা ৪K রেজোলিউশনে ভিডিও রেকর্ড করতে পারে যখন ফ্রন্ট ক্যামেরা ১০৮০p রেজোলিউশনে ভিডিও রেকর্ড করে।
বিশাল ব্যাটারি এবং অন্যান্য ফিচার
ব্যাটারি এবং চার্জিং
iQOO Z10x এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার হল এর ৬৫০০ mAh এর বিশাল ব্যাটারি। এই ব্যাটারি হেভি ইউজারদের জন্যও পুরো দিন চলতে পারে। ফোনটি ৪৪W ফ্লাশ চার্জিং সাপোর্ট করে যা ব্যাটারিকে দ্রুত চার্জ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ফোনটিতে রিভার্স চার্জিং ফিচার আছে, যা অন্যান্য ডিভাইসকে চার্জ দিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সফটওয়্যার এবং কানেক্টিভিটি
iQOO Z10x অ্যান্ড্রয়েড ১৫ এর উপর ভিত্তি করে FuntouchOS 15 চালায়। সফটওয়্যারটি AI ইরেজার, স্ক্রিন ট্রান্সলেশন সহ বিভিন্ন AI ফিচার নিয়ে আসে। কিন্তু, ফোনে অনেক ব্লোটওয়্যার এবং স্প্যাম নোটিফিকেশন রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে কিছুটা খারাপ করতে পারে।
কানেক্টিভিটির দিক থেকে, ফোনটিতে 5G সাপোর্ট, Wi-Fi 6, ব্লুটুথ ৫.৪, ইনফ্রারেড ব্লাস্টার এবং USB Type-C পোর্ট রয়েছে7। ফোনে একটি সাইড-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রয়েছে যা বেশ দ্রুত কাজ করে।
মূল্য এবং উপলব্ধতা
iQOO Z10x ভারতীয় বাজারে তিনটি ভিন্ন কনফিগারেশনে পাওয়া যায়:
৬GB RAM + ১২৮GB স্টোরেজ: ₹১৩,৪৯৯
৮GB RAM + ১২৮GB স্টোরেজ: ₹১৪,৯৯৯
৮GB RAM + ২৫৬GB স্টোরেজ: ₹১৬,৪৯৯
ফোনটি অ্যামাজন.ইন এবং iQOO India ই-স্টোর থেকে ২২ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে কেনা যাচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড এবং EMI ব্যবহার করে ₹১,০০০ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়।
iQOO Z10x বনাম প্রতিযোগী ফোন
iQOO Z10x এর প্রধান প্রতিযোগীদের তুলনায় এটি বেশ কিছু সুবিধা দেয়। iQOO Z9x এর তুলনায় এটির ব্যাটারি লাইফ বেশি (২০ ঘন্টা ১৯ মিনিট বনাম ১৪ ঘন্টা ২১ মিনিট), চার্জিং দ্রুত (১ ঘন্টা ১ মিনিট বনাম ১ ঘন্টা ২৭ মিনিট) এবং ওজন কম (১৯৯ গ্রাম বনাম ২০৪ গ্রাম)।
অন্যান্য প্রতিযোগী ফোনের তুলনায় এটির ডিসপ্লে এলসিডি হওয়া একটি ডিজঅ্যাডভান্টেজ, কিন্তু বিশাল ব্যাটারি এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্স এই ঘাটতি পূরণ করে। কিছু প্রতিযোগী ফোনে AMOLED ডিসপ্লে এবং উচ্চ ব্রাইটনেস রয়েছে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম ব্যাটারি ক্যাপাসিটি রয়েছে।
iQOO Z10x এর পজিটিভ এবং নেগেটিভ দিকগুলি
পজিটিভ দিক
দুর্দান্ত ব্যাটারি লাইফ (৬৫০০ mAh)
প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্স (ডাইমেনসিটি ৭৩০০)
টেকসই এবং আকর্ষণীয় ডিজাইন
UFS 3.1 স্টোরেজ
IP64 রেটিং এবং মিলিটারি-গ্রেড ডিউরাবিলিটি
নেগেটিভ দিক
মোটামুটি ক্যামেরা পারফরম্যান্স
ব্লোটওয়্যার ভারী সফটওয়্যার
ব্যাটারি সাইজের তুলনায় ধীর চার্জিং (৪৪W)
এক্সপ্যান্ডেবল স্টোরেজ নেই
iQOO Z10x ১৫,০০০ টাকার নিচের সেগমেন্টে একটি ভালো স্মার্টফোন, যা বিশাল ব্যাটারি, ভালো পারফরম্যান্স এবং টেকসই ডিজাইন দিয়ে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করছে। এটি মূলত হেভি ব্যবহারকারী এবং গেমারদের জন্য একটি ভালো অপশন যারা দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ এবং মসৃণ পারফরম্যান্স চান।
যদিও ক্যামেরা পারফরম্যান্স এবং সফটওয়্যার অভিজ্ঞতার দিক থেকে এটি কিছুটা পিছিয়ে, তবে এর মূল্যের বিবেচনায় এটি একটি ভালো প্যাকেজ। iQOO Z10x সব মিলিয়ে একটি সুষম স্মার্টফোন যা বাজেট-সচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।২০২৫ সালের প্রথমার্ধে, iQOO Z10x তার প্রতিযোগীদের মধ্যে একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়েছে এবং মধ্যম বাজেটের স্মার্টফোন বাজারে একটি দুর্দান্ত অপশন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।