Iron Dome Missile Defense: ইসরায়েলের আয়রন ডোম (Iron Dome) হলো একটি অত্যাধুনিক মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা দেশটিকে শত্রুপক্ষের রকেট ও মর্টার হামলা থেকে রক্ষা করে।
এটি ২০১১ সালে প্রথম কার্যকর হয় এবং তখন থেকে ইসরায়েলের নাগরিকদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।আয়রন ডোম একটি মোবাইল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম যা স্বল্প দূরত্বের রকেট, আর্টিলারি শেল এবং মর্টার হামলা প্রতিহত করতে পারে। এটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস এবং ইসরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এই সিস্টেম বিকশিত হয়েছে।
রাফাল-সুখোই-তেজস: ভারতীয় বায়ুসেনার অস্ত্রাগারে যে মারণাস্ত্র রয়েছে তা আপনাকে অবাক করবে!
আয়রন ডোম কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য এর প্রধান উপাদানগুলি জানা প্রয়োজন:
১. রাডার সিস্টেম: এটি আকাশে উড়ন্ত রকেট বা মিসাইল শনাক্ত করে।
২. ব্যাটল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ওয়েপন কন্ট্রোল সিস্টেম (BMC): এটি রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং হুমকি মূল্যায়ন করে।
৩. মিসাইল ফায়ারিং ইউনিট: এটি ইন্টারসেপ্টর মিসাইল ছোড়ে যা শত্রুর রকেটকে ধ্বংস করে।
১. রাডার শত্রুর ছোড়া রকেট শনাক্ত করে।
২. BMC সিস্টেম রকেটের গতিপথ গণনা করে এবং এটি কোথায় আঘাত হানবে তা নির্ধারণ করে।
৩. যদি রকেটটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে সিস্টেম একটি ইন্টারসেপ্টর মিসাইল ছোড়ে।
৪. ইন্টারসেপ্টর মিসাইল শত্রুর রকেটকে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়।
৫. যদি রকেটটি নিরাপদ এলাকায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে সিস্টেম কোনো ইন্টারসেপ্টর ছোড়ে না।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে আয়রন ডোম ৯০% এরও বেশি সফলতার হার অর্জন করেছে। ২০২১ সালের মে মাসে গাজা থেকে ছোড়া ৪,৩৬০টি রকেটের মধ্যে ৯০% প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাস্তব সফলতার হার ৮০-৮৫% এর মধ্যে।ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইরানের মিসাইল হামলার সময় আয়রন ডোম ৯৯% সফলতা অর্জন করেছে। ইরান ৩০০ এরও বেশি ড্রোন ও মিসাইল ছুড়েছিল, যার প্রায় সবগুলোই প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।আয়রন ডোমের সীমাবদ্ধতা:
১. এটি শুধুমাত্র ৪-৭০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ছোড়া রকেট প্রতিহত করতে পারে।
২. খুব কম উচ্চতায় উড়ে আসা রকেট বা মর্টার শেল প্রতিহত করা কঠিন।
৩. একসঙ্গে অনেক রকেট ছোড়া হলে সিস্টেম ওভারলোড হতে পারে।
৪. প্রতিটি ইন্টারসেপ্টর মিসাইলের খরচ প্রায় ৪০,০০০-৫০,০০০ ডলার, যা অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়রন ডোম প্রকল্পে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মার্কিন কংগ্রেস মোট ১.৬ বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে। ২০২২ সালে আরও ১ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করা হয়েছে।ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মেজর জেনারেল উদি শানি জানিয়েছেন, আগামী বছরগুলোতে আয়রন ডোম ব্যাটারি উন্নয়ন ও উৎপাদনে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। লক্ষ্য হলো ১০-১৫টি আয়রন ডোম ব্যাটারি স্থাপন করা।
ইসরায়েল আয়রন ডোম সিস্টেমকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. ইন্টারসেপশন রেঞ্জ ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো।
২. একসঙ্গে দুই দিক থেকে আসা রকেট প্রতিহত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি।
৩. লেজার-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খরচ কমানো।
৪. সমুদ্রে নৌবাহিনীর জাহাজে আয়রন ডোম স্থাপন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি সামরিক মহড়ায় ইসরায়েলি নৌবাহিনীর Sa’ar 6-class কর্ভেটে স্থাপিত আয়রন ডোমের উন্নত মডেল সফলভাবে রকেট, ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইল প্রতিহত করেছে।২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল, Sa’ar 6-class কর্ভেট INS Magen এর C-Dome ব্যাটারি প্রথমবারের মতো একটি অপারেশনাল ইন্টারসেপশন সম্পন্ন করে। এই সময় এলাত শহরের কাছে একটি ড্রোন ধ্বংস করা হয়।
পেজার থেকে ওয়াকি-টকি: ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য কি?
আয়রন ডোম ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এটি হাজার হাজার নাগরিকের জীবন রক্ষা করেছে এবং দেশটিকে শত্রু হামলা থেকে সুরক্ষিত রেখেছে। তবে এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। ইসরায়েল ক্রমাগত এই সিস্টেমকে উন্নত করার চেষ্টা করছে যাতে এটি আরও কার্যকর ও দক্ষ হয়ে ওঠে। আয়রন ডোম ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ক্ষমতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং অন্যান্য দেশও এই ধরনের সিস্টেম তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।