Iron rich fruits and vegetables: আয়রন আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ। এটি রক্ত তৈরি, অক্সিজেন পরিবহন এবং শক্তি উৎপাদনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। আয়রনের অভাবে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে, যা শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং মানসিক বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে। তাই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
আয়রনের প্রয়োজনীয়তা
আয়রন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ পদার্থ। এটি হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা রক্ত কণিকাগুলিকে লাল রং দেয় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে। আয়রনের প্রয়োজনীয়তা নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য অপরিহার্য:
- রক্ত উৎপাদন: আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য অপরিহার্য, যা রক্ত কণিকাগুলিকে লাল রং দেয়।
- অক্সিজেন পরিবহন: হিমোগ্লোবিন শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহন করে।
- শক্তি উৎপাদন: আয়রন শরীরের কোষগুলিতে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: পর্যাপ্ত আয়রন গ্রহণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা: আয়রন মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশ ও কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে। এগুলি দুই ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত হিম আয়রন এবং উদ্ভিদ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত নন-হিম আয়রন। হিম আয়রন শরীর সহজে শোষণ করতে পারে, অন্যদিকে নন-হিম আয়রনের শোষণ প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে জটিল।
প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত হিম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
- লাল মাংস: গরু, খাসি, ভেড়ার মাংস আয়রনের উত্তম উৎস। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে প্রায় ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
- কলিজা: কলিজা আয়রনের একটি চমৎকার উৎস। ১০০ গ্রাম গরুর কলিজায় প্রায় ৬.৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
- মুরগি: মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে প্রায় ১.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
- মাছ: সামুদ্রিক মাছ যেমন টুনা, সার্ডিন, স্যামন ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম টুনা মাছে প্রায় ১.৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
- ডিম: ডিমের কুসুমে প্রচুর আয়রন থাকে। একটি বড় ডিমে প্রায় ১.৬ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
উদ্ভিদ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত নন-হিম আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
- শাক-সবজি: পালং শাক, ব্রকলি, কচু শাক, লাল শাক ইত্যাদি আয়রনের উত্তম উৎস। ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রায় ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
- ডাল: মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন থাকে। ১০০ গ্রাম মসুর ডালে প্রায় ৭.৬ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
- বীজ ও বাদাম: কুমড়ার বীজ, তিল, কাজু বাদাম, বাদাম ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন থাকে। ১০০ গ্রাম কুমড়ার বীজে প্রায় ৮.৮ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
- শুকনো ফল: কিসমিস, খেজুর, আপ্রিকট ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন থাকে। ১০০ গ্রাম কিসমিসে প্রায় ২.৬ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
- হোল গ্রেইন: ওটস, ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন থাকে। ১০০ গ্রাম ওটসে প্রায় ৪.৭ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের পুষ্টিগুণ
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারগুলি শুধুমাত্র আয়রন সরবরাহ করে না, বরং এগুলি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানও সরবরাহ করে। নিম্নলিখিত টেবিলে কয়েকটি আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের পুষ্টিগুণ দেখানো হলো:
খাবার (১০০ গ্রাম) | আয়রন (মিলিগ্রাম) | প্রোটিন (গ্রাম) | ভিটামিন সি (মিলিগ্রাম) | ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম) |
---|---|---|---|---|
গরুর মাংস | 2.7 | 26 | 0 | 18 |
কলিজা | 6.5 | 20 | 1 | 11 |
পালং শাক | 2.7 | 2.9 | 28 | 99 |
মসুর ডাল | 7.6 | 24 | 4 | 35 |
কুমড়ার বীজ | 8.8 | 30 | 1 | 46 |
আয়রনের দৈনিক প্রয়োজনীয়তা
আয়রনের দৈনিক প্রয়োজনীয়তা ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম এবং মহিলাদের জন্য ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই পরিমাণ বেড়ে ২৭ মিলিগ্রাম হয়।
আয়রন শোষণে সহায়ক উপাদান
আয়রন শোষণের জন্য কিছু উপাদান সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এগুলি হল:
- ভিটামিন সি: লেবু, কমলা, আমলকি, পেঁপে ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
- ভিটামিন এ: গাজর, মিষ্টি আলু, কুমড়া ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে, যা আয়রন শোষণে সহায়তা করে।
- ভিটামিন বি১২: মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন বি১২ থাকে, যা আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
- কপার: বাদাম, শুকনো ফল, সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর কপার থাকে, যা আয়রন শোষণে সহায়তা করে।
আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টিকারী উপাদান
কিছু খাদ্য উপাদান আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। এগুলি হল:
- ক্যাফেইন: চা, কফি ইত্যাদিতে থাকা ক্যাফেইন আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।
- ক্যালসিয়াম: দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- ফাইটেট: ডাল, শস্য ইত্যাদিতে থাকা ফাইটেট আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- পলিফেনল: চা, কফি, রেড ওয়াইনে থাকা পলিফেনল আয়রন শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।