বিশ্বের ধর্মীয় চিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০৬০ সালের দিকে, ইসলাম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে খ্রিষ্টধর্ম সংখ্যাগরিষ্ঠতার শীর্ষে থাকলেও, জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি এবং ধর্মান্তরের হারের কারণে এই পরিবর্তন ঘটতে পারে। এই সময়ে খ্রিষ্টান ও হিন্দু জনগোষ্ঠীর অবস্থানও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সংবাদে আমরা বিষয়টির পেছনের কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ঘটনার পূর্ণ বিবরণ বোঝার জন্য প্রথমে বর্তমান পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেওয়া দরকার। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে এখন খ্রিষ্টানদের সংখ্যা প্রায় ২৪০ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে, মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৮০ কোটি, যা বিশ্বের ২৪ শতাংশ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১১০ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। এই তিনটি ধর্মই বিশ্বের প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। গবেষকরা বলছেন, আগামী কয়েক দশকে এই সংখ্যার ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আসবে। ইসলামের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ধর্মান্তরের প্রবণতা এই পরিবর্তনের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কীভাবে এই পরিবর্তন ঘটবে, তা বোঝার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে তাকাতে হবে। পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্মহার বিশ্বের অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি। গড়ে একজন মুসলিম নারী তাদের জীবদ্দশায় ২.৯টি সন্তানের জন্ম দেন, যেখানে খ্রিষ্টানদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২.৬ এবং হিন্দুদের ক্ষেত্রে ২.৪। এছাড়া, ইসলামে ধর্মান্তরের হারও তুলনামূলকভাবে বেশি। বিশেষ করে আফ্রিকা, এশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করছেন। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জনসংখ্যা ২০১৭ সালে ৩৩ লাখ ছিল, যা ২০৫০ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হতে পারে। এই দ্রুত বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা খ্রিষ্টানদের সমান হতে পারে এবং ২০৬০ সালের দিকে তাদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিষয়টির গভীরতা বাড়াতে আরও কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য জানা দরকার। খ্রিষ্টধর্ম এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম হলেও, এর বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতা বাড়ছে, যার ফলে অনেকে ধর্ম ত্যাগ করছেন। ফলে, খ্রিষ্টান জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তা ইসলামের মতো দ্রুত নয়। ২০৫০ সাল নাগাদ খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ২৯২ কোটিতে পৌঁছাতে পারে, কিন্তু মুসলিম জনসংখ্যা তখন ২৭৬ কোটির কাছাকাছি হবে। এই হিসাবে ২০৬০ সালের দিকে ইসলাম শীর্ষে চলে আসতে পারে। হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে, বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে। ২০৫০ সাল নাগাদ হিন্দুদের সংখ্যা ১৪০ কোটি ছাড়াতে পারে, যা তাদের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে ধরে রাখবে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন। ইসলাম যদি বৃহত্তম ধর্ম হয়, তবে এটি বিশ্ব রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং সমাজে গভীর প্রভাব ফেলবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রভাব বাড়তে পারে, যেমন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এছাড়া, ইউরোপের মতো অঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে নতুন গতিশীলতা তৈরি করতে পারে। খ্রিষ্টানদের জন্য এটি সংখ্যাগত শ্রেষ্ঠত্ব হারানোর অর্থ হলেও, তাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রভাব কমবে না। হিন্দুদের ক্ষেত্রে, ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এই ধর্মকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে, তবে বিশ্বব্যাপী প্রভাব সীমিত থাকতে পারে।
সহজ কথায়, এই পরিবর্তন জনসংখ্যার গতিবিধির একটি স্বাভাবিক ফল। ইসলামের দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে উচ্চ জন্মহার এবং ধর্মান্তর দুটোই কাজ করছে। খ্রিষ্টধর্ম সংখ্যায় বাড়লেও, অন্যান্য ধর্মের তুলনায় এর গতি কম। হিন্দু ধর্মও এগিয়ে যাবে, কিন্তু ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। তবে, এই পরিসংখ্যান শুধু ভবিষ্যদ্বাণী, বাস্তবে অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। যেমন, অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষার হার বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই প্রবণতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত, ধর্মীয় পরিবর্তন বিশ্বের বৈচিত্র্যের একটি অংশ। ইসলাম যদি শীর্ষে ওঠে, তবে এটি মানুষের বিশ্বাস ও জীবনযাত্রার নতুন দিক উন্মোচন করবে। খ্রিষ্টান ও হিন্দুরা তাদের নিজস্ব স্থান ধরে রাখবে, তবে সংখ্যার দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে পারে। এই বিষয়ে আরও গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতের চিত্র আরও স্পষ্ট করবে।