বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে পরীমনি একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তাঁর অভিনয় দক্ষতা, জনপ্রিয়তা এবং ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনা তাঁকে সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে রেখেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে—পরীমনি কি ঢালিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়িকা? বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, তিনি বর্তমানে ছবিপ্রতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা সম্মানী হিসেবে নিচ্ছেন। তবে তাঁর সঠিক পারিশ্রমিক নিয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন, কারণ এটি ছবির ধরন, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এবং তাঁর জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভর করে। এই প্রতিবেদনে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পরীমনির চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবির মাধ্যমে। প্রথম দিকে তিনি তেমন বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক পাননি। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়, এবং তিনি একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন। ‘রানা প্লাজা’, ‘দহন’, ‘স্বপ্নজাল’—এই সিনেমাগুলো তাঁর ক্যারিয়ারে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শোনা যায়, ক্যারিয়ারের শীর্ষ সময়ে তিনি ছবিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সম্মানী নিয়েছিলেন। তবে ২০২১ সালে মাদককাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পর তাঁর ক্যারিয়ারে কিছুটা ভাটা পড়ে। এরপরও তিনি আবার ফিরে এসেছেন এবং ‘গুণিন’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অফ সুন্দরবন’—এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, তিনি এখনো উল্লেখযোগ্য পারিশ্রমিক নিচ্ছেন, যা অন্যান্য নায়িকাদের সঙ্গে তুলনায় বেশি হতে পারে।
যশ হতে চলেছেন ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খলনায়ক।
এই আলোচনার পেছনে একটি বড় কারণ হলো ঢালিউডে নায়িকাদের পারিশ্রমিকের সাধারণ চিত্র। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে নায়করা সাধারণত নায়িকাদের তুলনায় বেশি পারিশ্রমিক পান। উদাহরণস্বরূপ, শাকিব খানের মতো শীর্ষ নায়ক ছবিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন। অন্যদিকে, নায়িকাদের মধ্যে অপু বিশ্বাস একসময় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন, যদিও এখন তিনি ৪ থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে কাজ করছেন। তমা মির্জা বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং শবনম বুবলী ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা নিচ্ছেন বলে জানা যায়। এই প্রেক্ষাপটে পরীমনির পারিশ্রমিক যদি ১০ লাখ বা তার বেশি হয়, তাহলে তিনি অনেক নায়িকার চেয়ে এগিয়ে আছেন। তবে তিনি সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত কিনা, তা নির্ভর করে সঠিক তথ্যের ওপর।
বিষয়টি আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য ঢালিউডের বাজার বিশ্লেষণ করা দরকার। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে বাজেট সাধারণত কম থাকে। বেশিরভাগ ছবির বাজেট ১ কোটি থেকে ২ কোটি টাকার মধ্যে হয়। এই বাজেটের মধ্যে নায়ক-নায়িকার পারিশ্রমিক, প্রযোজনা খরচ, প্রচারণা—সবকিছু মেটাতে হয়। ফলে নায়িকাদের পারিশ্রমিক বেশি হলেও তা নায়কদের তুলনায় কমই থাকে। পরীমনির ক্ষেত্রে তাঁর জনপ্রিয়তা এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু তাঁকে একটি আলাদা অবস্থানে নিয়ে গেছে। তিনি শুধু সিনেমাতেই নন, বিজ্ঞাপন এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও কাজ করছেন, যা তাঁর আয়ের আরেকটি উৎস। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তাঁর ‘বিউটি সার্কাস’ ওয়েব ফিল্মটি দর্শকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছিল।
তবে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি—পারিশ্রমিকের পরিমাণ সবসময় প্রকাশ্যে আসে না। অনেক সময় নায়ক-নায়িকারা নিজেরাই এই তথ্য গোপন রাখেন। পরীমনির ক্ষেত্রেও তেমনটি হতে পারে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা, যেমন বারবার বিয়ে বা মাদক মামলা, তাঁর ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেললেও তাঁর চাহিদা কমেনি। ২০২২ সালে শরীফুল রাজের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি মাতৃত্বকালীন বিরতি নিয়েছিলেন। এরপর আবার কাজে ফিরে এসেছেন। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘ফেলুবক্সী’ মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এই ছবিতে তাঁর পারিশ্রমিক কত, তা জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, তিনি এখনো ১০ লাখ টাকার কাছাকাছি বা তার বেশি নিচ্ছেন।
চাঁদ বনাম চাঁদমালা: মোদি-রাহুলের রাজনৈতিক যাত্রায় কে এগিয়ে?
এখন প্রশ্ন হলো, পরীমনি কি সত্যিই সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়িকা? তমা মির্জার মতো নায়িকারা যখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন, তখন পরীমনির অবস্থান কোথায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর জনপ্রিয়তা এবং বিতর্কিত ইমেজ তাঁকে আলাদা একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করেছে। তবে সংখ্যার দিক থেকে তমা মির্জা বা মাহিয়া মাহি (যিনি একসময় ১০ লাখ টাকা নিতেন) তাঁর সমান বা এগিয়েও থাকতে পারেন। ঢালিউডে নায়িকাদের পারিশ্রমিক সাধারণত ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে থাকে। এই হিসেবে পরীমনি শীর্ষে না থাকলেও তিনি অবশ্যই প্রথম সারির নায়িকাদের একজন।
শেষ কথা হিসেবে বলা যায়, পরীমনির পারিশ্রমিক নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও তাঁর ক্যারিয়ার এবং জনপ্রিয়তা তাঁকে ঢালিউডের অন্যতম প্রভাবশালী নায়িকা করে তুলেছে। তিনি যদি ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন, তবে তিনি সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্তদের তালিকায় থাকতে পারেন। তবে এই বিষয়ে আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ পেলে সঠিক চিত্রটি জানা যাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত, পরীমনি তাঁর অভিনয় আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে দর্শকদের মন জয় করে যাচ্ছেন—এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।