স্টাফ রিপোর্টার
১১ মার্চ ২০২৫, ৩:৫৯ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

Staying in touch with an ex: সম্পর্কের ইতি টানার পরও অনেক সময় মনের কোণে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়—প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? কখনো মনে হয় পুরনো দিনগুলোর স্মৃতি ফিরে আসবে, আবার কখনো ভয় হয়—এটা কি নতুন করে মানসিক জটিলতার দরজা খুলে দেবে? জীবনের এই সূক্ষ্ম সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যাই। কেউ কেউ ভাবেন, বন্ধুত্বের খাতিরে যোগাযোগ রাখা যেতে পারে, আবার কেউ মনে করেন, অতীতকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। তাহলে কী করা উচিত? এই ব্লগে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করবো, যাতে আপনি নিজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। চলুন, একসঙ্গে এই জটিল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখি।

প্রথমেই বোঝা যাক: কেন এই প্রশ্ন মনে আসে?

সম্পর্ক ভাঙার পর প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ—এই প্রশ্নটা আমাদের মনে আসে কারণ আমরা মানুষ, আর মানুষের মন সবসময়ই আবেগ আর যুক্তির মাঝে দোলাচলে থাকে। একদিকে পুরনো স্মৃতি, ভালোবাসা, বা অভ্যাস আমাদের টানে, অন্যদিকে বর্তমান জীবনের শান্তি আর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা আমাদের সতর্ক করে। অনেকের কাছে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ মানে একটা আরামদায়ক অতীতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা, আবার কারো কাছে এটা শুধুই অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা। এই ব্লগে আমরা এই দুই দিকই বিশ্লেষণ করবো, যাতে আপনি বুঝতে পারেন আপনার জন্য কোনটা সঠিক।

৭টি লক্ষণ যা দেখায় আপনি ২০২৫ সালে ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রস্তুত

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পিছনে কী কী কারণ থাকতে পারে?

মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো বোঝা জরুরি। কেন আমরা প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাই? চলুন, এর কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ দেখে নিই:

আবেগের টান এখনো কাজ করে

সম্পর্ক ভাঙলেও আবেগের বন্ধন এত সহজে ছিঁড়ে না। হয়তো আপনি এখনো তার কথা ভাবেন, তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়ে। এই আবেগের টানই অনেক সময় আমাদের ফোন তুলে একটা মেসেজ পাঠাতে প্ররোচিত করে। কিন্তু এটা কি সত্যিই ভালো ফল দেবে, নাকি শুধু পুরনো ক্ষত খুঁচিয়ে তুলবে?

বন্ধুত্ব বজায় রাখার ইচ্ছা

কিছু ক্ষেত্রে সম্পর্ক ভাঙার পরও দুজনের মধ্যে একটা সুস্থ বন্ধুত্ব থেকে যায়। যদি আপনার প্রাক্তনের সঙ্গে এমন সমীকরণ থাকে, তাহলে যোগাযোগ রাখা খারাপ কিছু নয়। তবে এখানে সীমারেখা ঠিক রাখা খুব জরুরি, যাতে পুরনো আবেগ আবার জেগে না ওঠে।

অভ্যাসের বশে

দীর্ঘদিনের সম্পর্কে থাকলে প্রাক্তনের সঙ্গে কথা বলা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়। সম্পর্ক শেষ হলেও সেই অভ্যাস সহজে যায় না। ফলে অনেকে না বুঝেই যোগাযোগ চালিয়ে যান, যদিও এটা তাদের জন্য ভালো নাও হতে পারে।

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ভালো-মন্দ দিক

এবার আসি মূল প্রশ্নের কাছে—প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? এর উত্তর দেওয়ার আগে আমাদের ভালো-মন্দ দুই দিকই বিবেচনা করতে হবে।

যেসব কারণে এটা ভালো হতে পারে

  • মানসিক শান্তি: যদি সম্পর্ক ভাঙার পর কোনো কথা অমীমাংসিত থেকে যায়, তাহলে যোগাযোগ করে সেটা পরিষ্কার করা যেতে পারে। এতে মনের ভার কমে।
  • সুস্থ সম্পর্ক: যদি দুজনেই পরিপক্কভাবে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে পারেন, তাহলে এটা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।
  • সাধারণ দায়িত্ব: যদি আপনাদের মধ্যে সন্তান বা অন্য কোনো সাধারণ দায়িত্ব থাকে, তাহলে যোগাযোগ রাখা বাধ্যতামূলকই বটে।

যেসব কারণে এটা ক্ষতিকর হতে পারে

  • আবেগের জটিলতা: পুরনো আবেগ আবার জেগে উঠলে বর্তমান জীবনে অশান্তি তৈরি হতে পারে।
  • নতুন সম্পর্কে বাধা: যদি আপনি নতুন জীবন শুরু করতে চান, তাহলে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • মানসিক চাপ: যদি সম্পর্ক ভাঙার কারণ বিশ্বাসঘাতকতা বা কষ্টদায়ক ঘটনা হয়, তাহলে যোগাযোগ আবার সেই ক্ষত উসকে দিতে পারে।
দিক ভালো দিক মন্দ দিক
আবেগ মানসিক শান্তি দিতে পারে পুরনো কষ্ট ফিরে আসতে পারে
বন্ধুত্ব সুস্থ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে সীমা লঙ্ঘনের ঝুঁকি থাকে
জীবনের গতি অতীতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারে নতুন শুরুতে বাধা হতে পারে

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

বিশেষজ্ঞদের মতামত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ তা নির্ভর করে আপনার মানসিক অবস্থা আর পরিস্থিতির ওপর।

  • ড. জন গটম্যান, একজন বিখ্যাত সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ, বলেন, “যদি আপনি অতীতের কষ্ট থেকে এখনো মুক্ত না হয়ে থাকেন, তাহলে যোগাযোগ এড়িয়ে চলাই ভালো।” তিনি আরো জানান, অতীতের সঙ্গে যোগাযোগ মানসিক নিরাময়ে বাধা দিতে পারে।
  • একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্পর্ক ভাঙার পর প্রথম ৬ মাস যারা প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য দ্রুত ভালো হয়।

তবে এটাও সত্যি যে, যদি দুজনের মধ্যে কোনো তিক্ততা না থাকে এবং উভয়েই পরিপক্কভাবে পরিস্থিতি সামলাতে পারে, তাহলে যোগাযোগ রাখা সমস্যার না-ও হতে পারে।

কখন যোগাযোগ এড়িয়ে চলা উচিত?

এবার আসি ব্যবহারিক দিকে। কিছু পরিস্থিতিতে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ—এর উত্তর স্পষ্টভাবে “না” হয়ে যায়। দেখে নিন কখন আপনার দূরে থাকা উচিত:

যদি সম্পর্কে আঘাত থাকে

বিশ্বাসঘাতকতা, মানসিক বা শারীরিক কষ্ট—যদি এমন কিছু থাকে, তাহলে যোগাযোগ শুধু আপনার মনকে আরো অস্থির করে তুলবে। এই ক্ষেত্রে নিজেকে প্রাধান্য দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

নতুন জীবন শুরু করতে চাইলে

আপনি যদি নতুন সম্পর্ক বা জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চান, তাহলে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ আপনাকে পিছনে টেনে ধরতে পারে। এটা আপনার নতুন সঙ্গীকেও অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।

যদি আবেগ নিয়ন্ত্রণে না থাকে

আপনি যদি এখনো প্রাক্তনের জন্য দুর্বলতা অনুভব করেন বা তার প্রতি রাগ পোষণ করেন, তাহলে যোগাযোগ এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ এটা আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করতে পারে।

মানসিক রোগ থেকে মুক্তি: ৮টি কার্যকর উপায় যা আপনার জীবন বদলে দেবে

কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন?

শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর আপনার নিজের হাতে। তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে:

  1. নিজের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করুন: আপনি কি সত্যিই অতীত থেকে মুক্ত? যোগাযোগ করলে আপনার মনের ওপর কী প্রভাব পড়বে?
  2. উদ্দেশ্য পরিষ্কার করুন: আপনি কেন যোগাযোগ রাখতে চান? এটা কি শুধুই আবেগের টান, নাকি সত্যিই কোনো যৌক্তিক কারণ আছে?
  3. সীমারেখা ঠিক করুন: যদি যোগাযোগ রাখেন, তাহলে কতটা দূরত্ব বজায় রাখবেন, সেটা আগে থেকে ঠিক করে নিন।

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? এর কোনো একক উত্তর নেই। এটা নির্ভর করে আপনার পরিস্থিতি, মানসিক প্রস্তুতি, এবং জীবনের লক্ষ্যের ওপর। যদি আপনি মনে করেন যোগাযোগ আপনার জীবনে ইতিবাচক কিছু যোগ করবে, তাহলে সাবধানে এগোন। কিন্তু যদি এটা আপনাকে পিছনে টেনে ধরে বা কষ্ট দেয়, তাহলে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

জীবন এগিয়ে চলার নাম। অতীতকে সম্মান করুন, কিন্তু তার জন্য বর্তমানকে বলি দিতে যাবেন না। আপনার মতামত কী? নিচে কমেন্ট করে জানান, আর এই ব্লগ যদি উপকারী মনে হয়, তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না!

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে নজর! বঙ্গের সব আসনে লড়তে প্রস্তুত আইএমআইএম

হোলির রঙে ব্যাঙ্ক বন্ধ: আগামীকাল থেকে টানা ৪ দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যাঙ্ক ছুটি, তালিকা দেখে নিন

কেকেআরের প্রস্তুতি শুরু: কলকাতায় নাইটদের ক্যাপ্টেন-কোচের সঙ্গে প্রকাশিত হল প্র্যাক্টিস সূচি

শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ির সামনে ‘ক্রিমিনাল’ পোস্টার: সিপিএম নেতার থানায় তলব!

কলকাতার Zakaria Street-এর মাস্ট ভিজিট ফুড স্টল: একটি খাদ্যপ্রেমীর স্বর্গভূমি

অলক্ষ্যে ঋত্বিক: ঋত্বিক ঘটকের জীবনালেখ্য নিয়ে আসছে বাঙালির প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র

আইপিএল-এ তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ! স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি!

দেওয়ালের কোন দিকে কোন রঙ শুভ? বাস্তুশাস্ত্রের চোখে একটি গভীর দৃষ্টিপাত

১০

ডিএলএফ-এমআরএফ-আমূল-পেটিএম: সংক্ষিপ্ত নামেই ভারত বিখ্যাত, এবার জেনে নিন এই ব্র্যান্ডগুলোর পুরো নাম!

১১

সেক্সসমনিয়া: ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক বিরল রহস্য

১২

ভীষণ ক্ষতিকর Non-Stick প্যানে রান্না করছেন না তো? জেনে নিন সেরা বিকল্পগুলো

১৩

কাক ডাকার ফলাফল: ইসলাম ও হিন্দু শাস্ত্রে কী বলা আছে?

১৪

দিনে ৮ ঘণ্টা AC চালালে মাসে কত ‘Electric Bill’ আসবে? সহজ হিসেবে নিশ্চিন্তে থাকুন

১৫

প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি বুদ্ধিমানের কাজ? একটি গভীর বিশ্লেষণ

১৬

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জাদু: কীভাবে ভারত হয়ে উঠল অপ্রতিরোধ্য?

১৭

বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন শিয়ালদা-কৃষ্ণনগর রুটে, ভাড়া কত জানেন?

১৮

ভারতে রাজ্যভিত্তিক হীরার মজুদ: কোন রাজ্য হীরা উৎপাদনে সেরা?

১৯

আলমারি কোন দিকে রাখা উচিত? বাস্তুশাস্ত্র ও আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইন

২০
close