স্টাফ রিপোর্টার
১৫ মার্চ ২০২৫, ৫:৩২ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

যাদবপুরে যা চলছে, তা কি সত্যিই সাংবাদিকতা?

যাদবপুরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিকদের সঙ্গে সেখানকার ছাত্র ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা সামনে এসেছে, যা গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং সাংবাদিকতার মান নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনায় সাংবাদিকদের উপর হামলা, তাদের ক্যামেরা ও সরঞ্জাম কেড়ে নেওয়া এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, এটি গণমাধ্যমের একপেশে আচরণের ফল, যেখানে অনেকে বলছেন যে এই ধরনের ঘটনা বাংলার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সাংবাদিকতার সীমারেখা নিয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পাঠকের কাছে এটি স্পষ্ট হওয়া দরকার যে, এই ঘটনা কেবল একটি সংঘর্ষ নয়, বরং এটি গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

ঘটনার পূর্ণ বিবরণ জানতে গেলে বোঝা যায়, এটি ঘটেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। ১৩ মার্চ, ২০২৫ তারিখে রিপাবলিক বাংলার একটি সাংবাদিক দল সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে যায়। তাদের দাবি, তারা ক্যাম্পাসের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রিপোর্টিং করছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি তখনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন ছাত্ররা তাদের উপস্থিতিতে আপত্তি জানায়। রিপাবলিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছাত্ররা তাদের সাংবাদিকদের ঘিরে ফেলে, হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়, শারীরিকভাবে আঘাত করে এবং তাদের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়। চ্যানেলের এডিটর-ইন-চিফ অর্ণব গোস্বামী এই ঘটনাকে “সাংবাদিকতার স্বাধীনতার উপর আক্রমণ” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “যাদবপুর কোনো বিচ্ছিন্ন জায়গা নয়। বাংলায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। আমাদের সাংবাদিকরা আবার যাবে, সত্য তুলে ধরবে।” তবে ছাত্রদের বক্তব্য ভিন্ন। তারা দাবি করেছে, সাংবাদিকরা উস্কানিমূলক প্রশ্ন করে তাদের বিরক্ত করছিলেন, যার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এই ঘটনার পিছনে আরও গভীরে গেলে দেখা যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র। এখানকার ছাত্ররা তাদের মতামত প্রকাশে সোচ্চার এবং বহিরাগতদের প্রতি সতর্ক থাকে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, রিপাবলিকের সাংবাদিকরা যখন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন, তখন তারা এমনভাবে প্রশ্ন করছিলেন, যা ছাত্রদের কাছে আগ্রাসী ও পক্ষপাতমূলক মনে হয়েছে। একজন ছাত্র নাম প্রকাশ না করে বলেন, “তারা আমাদের কথা শুনতে আসেনি, এসেছিল আমাদের বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ করতে।” এরপরই উভয় পক্ষের মধ্যে তর্ক বাড়তে থাকে এবং হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। রিপাবলিকের দাবি, তাদের একজন সাংবাদিকের হাতে গুরুতর চোট লেগেছে, যদিও এখনো কোনো মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। অন্যদিকে, ছাত্ররা বলছে, তারা শুধু নিজেদের জায়গা ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে চেয়েছিল।

প্রাসঙ্গিক তথ্য যোগ করলে বোঝা যায়, বাংলায় গণমাধ্যম এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিচারাধীন বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, সংবাদ পরিবেশনে কোনো বাধা নেই, তবে ব্যক্তিগত মতামত পরিবেশন করা যাবে না। এই প্রেক্ষিতে অনেকে মনে করেন, রিপাবলিকের মতো চ্যানেল প্রায়ই সংবাদের আড়ালে নিজেদের এজেন্ডা চালায়। যাদবপুরের ঘটনায়ও ছাত্রদের অভিযোগ, সাংবাদিকরা নিরপেক্ষতা বজায় না রেখে তাদের বিরুদ্ধে একপেশে কথা বলছিলেন। এছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলায় সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। ২০২৩ সালে একটি রিপোর্টে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গে ১৫টির বেশি সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন, যা গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই ঘটনা দেখায় যে সাংবাদিকতা এখন অনেক সময় তথ্যের চেয়ে বিতর্কের দিকে ঝুঁকছে। রিপাবলিক দাবি করছে, তারা সত্য উদঘাটনের জন্য কাজ করছে, কিন্তু ছাত্রদের কাছে এটি তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা। পুলিশ এখনো কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে, কিন্তু তদন্তে কতটা অগ্রগতি হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে মতভেদ তীব্র। একদল বলছে, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষা করা দরকার, অন্যদলের মতে, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা বাড়ানো উচিত।

বিষয়টির আরেকটি দিক হলো, এই ঘটনা সাংবাদিকতার সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সত্য তুলে ধরাই কি সাংবাদিকতার একমাত্র লক্ষ্য, নাকি দর্শকদের আকর্ষণ করতে বিতর্ক সৃষ্টি করাও এর অংশ? যাদবপুরের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, গণমাধ্যম এবং জনগণের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনই তাদের কাজের ধরনও পরীক্ষার মুখে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ ও প্রশাসনের নীরবতা বিষয়টিকে আরও জটিল করছে। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনা থেকে কী শিক্ষা নেওয়া হয়। সাংবাদিকতা কি তার মূল পথে ফিরবে, নাকি এটি কেবল আরেকটি উত্তেজনার ঘটনা হয়ে থাকবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বঙ্গ রাজনীতির রঙিন মঞ্চে পাঁচ চরিত্র: কেউ রং ছড়ালেন, কেউ গৃহবন্দি জ্বরে

যাদবপুরে যা চলছে, তা কি সত্যিই সাংবাদিকতা?

দেশজুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি: IBA-র সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে, UFBU-র ডাক ২৪-২৫ মার্চ

প্রযুক্তি জগতে ধাক্কা: ২০২৫-এর প্রথম ৭৩ দিনে বিশ্বজুড়ে ৩৮,২৫২ কর্মী ছাঁটাই, আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি**

আইএসএল প্লে-অফের রোমাঞ্চ শুরু: ফাইনাল ও মোহনবাগানের সেমিফাইনালের তারিখ ঘোষণা!

সুনীতাদের উদ্ধারে মহাকাশে পাড়ি দিল মাস্কের স্পেসএক্স, কবে ফিরবেন এই চার মহাকাশচারী?

আধার কার্ডে ছবি বদলানোর নতুন নিয়ম: বারবার পরিবর্তনে জরিমানার আশঙ্কা?

BSNL-এর নতুন ধামাকা: ১৮০ দিনের ভ্যালিডিটি সহ আনলিমিটেড কলের সুবিধা

স্বাস্থ্যসাথী: ৯ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার গল্প, কোন রোগে কত টাকা জানুন!

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে মোদীর কূটনৈতিক সাফল্য: পুতিনের কণ্ঠে ভারতের প্রশংসা

১০

সন্ত্রাসের উৎস কে না জানে?’ পাকিস্তানের দিকে দিল্লির তীক্ষ্ণ আঙুল

১১

বাবু ল্যান্ড সাপ্তাহিক বন্ধের তারিখ, টিকিট মূল্য, সময়সীমা

১২

“চীন-আমেরিকা উত্তেজনা: যুদ্ধের আশঙ্কা নাকি বাণিজ্যিক চাপ? ডিপসিকের পর আলিবাবার বাজারে ফের জল্পনা

১৩

অবসরের ঘোষণা ভেঙে মাঠে ফেরা: ফুটবলের শীর্ষ ১১ তারকার গল্প

১৪

FZ-S Fi Hybrid: ভারতের প্রথম ১৫০ সিসি হাইব্রিড বাইকের দুর্দান্ত স্পেসিফিকেশন ও দাম জানুন!

১৫

মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি: ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক ঐতিহাসিক নিদর্শন

১৬

জলসিড়ি সেন্ট্রাল পার্ক: প্রকৃতির কোলে সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত বিনোদন কেন্দ্র

১৭

Agniveer Recruitment 2025: দশম-দ্বাদশ পাশ করলেই ভারতীয় সেনায় চাকরির সুবর্ণ সুযোগ!

১৮

৫০ টি জুম্মা মোবারক স্ট্যাটাস বাংলা

১৯

“আজকের রাশিফল ১৫ ই মার্চ ২০২৫: আপনার ভাগ্য কী বলছে জানুন এক নজরে!”

২০
close