baby hungry crying: নতুন বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো শিশুর মনের কথা বোঝা। বিশেষ করে যখন সে খিদেয় ছটফট করে, কিন্তু মুখে বলতে পারে না। অনেক বাবা-মা ভাবেন, শিশু কাঁদলেই হয়তো তার খিদে পেয়েছে। কিন্তু সত্যিটা হলো, কান্না হলো খিদের একেবারে শেষ পর্যায়ের লক্ষণ। তার অনেক আগেই আপনার ছোট্ট সোনামণি নানা ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করে যে তার পেট খালি। এই প্রাথমিক সংকেতগুলো যদি আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে শিশুকে শান্তভাবে খাওয়ানো অনেক সহজ হয়ে যায় এবং মা-বাবার সঙ্গে তার আত্মিক বাঁধন আরও দৃঢ় হয়। এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানব, কীভাবে বুঝবেন শিশুর খিদে পেয়েছে এবং কান্নার আগেই তার প্রয়োজন মেটাবেন।
প্রাথমিক লক্ষণ: যখন খিদে সবে শুরু
শিশুর খিদে পাওয়ার প্রথম দিকের লক্ষণগুলো খুব শান্ত এবং সূক্ষ্ম হয়। এই সময়ে শিশু সাধারণত শান্ত থাকে এবং আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে তার খাওয়ার সময় হয়েছে। এই লক্ষণগুলো চিনতে পারলে শিশুকে খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত হওয়ার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়।
মাথা ঘুরিয়ে খোঁজা (Rooting)
এটি নবজাতকদের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। আপনি যদি শিশুর গালে আলতো করে আঙুল ছোঁয়ান, সে সেই দিকেই মুখ ঘুরিয়ে নেবে এবং ঠোঁট দিয়ে চোষার মতো ভঙ্গি করবে। বোতল বা স্তন্যপানের জন্য সে এভাবেই প্রস্তুতি নেয়। চার মাস বয়সের পর এই রিফ্লেক্সটি একটি ঐচ্ছিক পরিণত হয়।
মেয়েদের চাকরি: অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি
হাত মুখে দেওয়া
শিশুরা প্রায়ই তাদের হাত বা আঙুল মুখে দেয়। এটি খিদের একটি অন্যতম সাধারণ লক্ষণ। তারা হাতের মুঠি মুখে দিয়ে চুষতে শুরু করে, যা দেখে বোঝা যায় যে তাদের খিদে পেয়েছে।
ঠোঁট চাটা বা চোষার মতো শব্দ করা
শিশু যখন ঠোঁট চাটে বা মুখ দিয়ে চোষার মতো শব্দ করে, তখন বুঝতে হবে সে খেতে চাইছে। এই লক্ষণটি প্রায়ই দেখা যায় এবং এটি খিদের একটি স্পষ্ট প্রাথমিক ইঙ্গিত।
অস্থির হয়ে ওঠা এবং জেগে থাকা
ঘুম থেকে উঠে যদি শিশু শান্ত না থেকে একটু ছটফট করে বা আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তবে এটিও খিদের লক্ষণ হতে পারে। খাবারের কথা ভাবলে শিশুরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং তাদের নড়াচড়া বেড়ে যায়।
খিদে বাড়ছে: মাঝারি পর্যায়ের লক্ষণ
যদি প্রাথমিক লক্ষণগুলো খেয়াল না করা হয় বা দেরিতে সাড়া দেওয়া হয়, তখন শিশু আরও স্পষ্ট কিছু ইশারার মাধ্যমে তার খিদে প্রকাশ করে। এই লক্ষণগুলো আগের চেয়ে কিছুটা জোরালো হয়।
হাত-পা ছোড়াছুড়ি করা
খিদে বাড়ার সাথে সাথে শিশু তার হাত ও পা আরও বেশি নাড়াচাড়া করতে শুরু করে। তার শরীরের নড়াচড়া বেড়ে যায় এবং সে অস্থিরতা প্রকাশ করে।
দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
খিদে পেলে অনেক শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। এটি তার শারীরিক উত্তেজনার একটি লক্ষণ, যা খাবারের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
হাতের মুঠি শক্ত করা
শিশু যখন তার ছোট্ট হাতের মুঠি শক্ত করে ফেলে, তখন বুঝতে হবে তার ধৈর্য কমে আসছে এবং খিদে তীব্র হচ্ছে। এটি তার হতাশা প্রকাশের একটি উপায়।
মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকা
যে ব্যক্তি শিশুকে নিয়মিত খাওয়ান, শিশু তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে পারে। তার চোখের চাহনিতেই ফুটে ওঠে খাবারের আকুতি। মনে হতে পারে, সে যেন বলছে, “কখন খেতে দেবে?”
কান্নাই কি শেষ কথা?
অনেক নতুন বাবা-মা মনে করেন, কান্না করলেই বুঝতে হবে শিশুর খিদে পেয়েছে। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। কান্না হলো খিদের একেবারে শেষ ধাপ, যাকে বলা হয় ‘লেট কিউ’ বা বিলম্বিত সংকেত। যখন একটি শিশু খিদেয় কাঁদতে শুরু করে, তার মানে সে বোঝানোর সমস্ত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন সে কষ্ট পাচ্ছে।
খিদে পেলে শিশুর কান্না সাধারণত ছোট, নিচু স্বরের এবং ওঠা-নামা করে। এই অবস্থায় শিশুকে শান্ত করে তারপর খাওয়ানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ কান্নারত অবস্থায় শিশু সঠিকভাবে মায়ের দুধ বা বোতলের নিপল মুখে নিতে পারে না। তাই কান্নার আগেই তার খিদের লক্ষণগুলো চিনে নেওয়া জরুরি।
খিদের কান্না নাকি অন্য কিছু?
শিশুরা শুধু খিদে পেলেই কাঁদে না, তাদের কান্নার আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনাকে খিদের কান্না এবং অন্য কান্নার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে।
- ভেজা ডায়াপার: ডায়াপার ভিজে গেলে বা ময়লা হলে শিশুরা অস্বস্তিতে কাঁদে।
- ঘুম পাওয়া: অনেক সময় শিশুরা ক্লান্ত বা অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘ্যানঘ্যান করে কাঁদে।
- শারীরিক অস্বস্তি: পেটে গ্যাস, জ্বর বা অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতার কারণেও শিশু কাঁদতে পারে।
- আদর বা মনোযোগের অভাব: কখনও কখনও শিশুরা শুধু মায়ের কোল বা একটু আদর চায়। একাকী বোধ করলেও তারা কান্নার মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান: কোন পাশে থাকলে সবচেয়ে ভালো?
শিশুর পেট ভরেছে কিনা তা বোঝার উপায়
শিশুকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়ানো যেমন ঠিক নয়, তেমনই কম খাওয়ানোও উচিত নয়। তাই শিশুর খিদে পেয়েছে কিনা তা বোঝার পাশাপাশি তার পেট ভরেছে কিনা, সেই লক্ষণগুলোও জানা দরকার।
- মুখ বন্ধ করে ফেলা: পেট ভরে গেলে শিশু নিজে থেকেই মুখ বন্ধ করে নেয়।
- মাথা ঘুরিয়ে নেওয়া: আপনি যদি আরও খাওয়াতে চান, সে মুখ ঘুরিয়ে নেবে।
- শরীর শিথিল করা: খাওয়ার পর শিশুর শরীর শান্ত ও শিথিল হয়ে আসে এবং সে তার হাতের মুঠি খুলে দেয়।
- খাওয়া থামিয়ে দেওয়া: পেট ভরে গেলে শিশু দুধ বা বোতল চোষা বন্ধ করে দেয় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে।
- আশেপাশে মনোযোগ দেওয়া: চার মাস বয়সের পর থেকে শিশুরা খাওয়ার সময়ও চারপাশের পরিবেশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। যদি শিশু খাওয়ার চেয়ে অন্য দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, তবে বুঝতে হবে তার পেট ভরে গেছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা শিশুদের খিদের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন, তারা শিশুদের প্রয়োজন দ্রুত বুঝতে পারেন। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আগে ৬৪% মা শিশুর আঙুল চোষাকে খিদের লক্ষণ হিসেবে চিনতে পারতেন, যা কার্যক্রমের পরে ১০০% হয়ে যায়। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬১.৭% মা তাদের শিশুর অন্তত দুটি বা তার বেশি খিদের লক্ষণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেন। আরও একটি আকর্ষণীয় তথ্য হলো, যেসব মায়েরা শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান (Exclusive Breastfeeding), তারা ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো মায়েদের চেয়ে শিশুর খিদের সংকেত ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
সবশেষে বলা যায়, আপনার শিশুর খিদে পেয়েছে কিনা তা বোঝা একটি অভিজ্ঞতার বিষয়। প্রথম দিকে কিছুটা কঠিন মনে হলেও, ধীরে ধীরে আপনি আপনার সন্তানের ভাষা ঠিকই বুঝতে পারবেন। তার সূক্ষ্ম ইশারাগুলো খেয়াল করুন এবং কান্নার আগেই তার চাহিদা পূরণ করুন। এতে শুধু তার পেটই ভরবে না, আপনাদের মধ্যে বিশ্বাস ও ভালোবাসার সম্পর্ক আরও গভীর হবে।