কোরআন থেকে মেয়েদের ১০০টি ইসলামিক নাম: অর্থসহ সেরা তালিকা

Islamic Names for Girls from Quran: ইসলাম ধর্মে নবজাতকের জন্য একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেক মুসলিম বাবা-মা তাদের কন্যার জন্য পবিত্র কোরআন থেকে একটি…

মনীষা মুখার্জী

 

Islamic Names for Girls from Quran: ইসলাম ধর্মে নবজাতকের জন্য একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেক মুসলিম বাবা-মা তাদের কন্যার জন্য পবিত্র কোরআন থেকে একটি নাম বেছে নিতে চান, যা তাদের সন্তানের জীবনে আশীর্বাদ বয়ে আনবে। কোরআন হলো আল্লাহর বাণী এবং এর প্রতিটি শব্দই অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাই কোরআন থেকে নেওয়া নামগুলো কেবল শ্রুতিমধুরই নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য। এই নামগুলো মুসলিম পরিচয়ের ধারক এবং আল্লাহর সঙ্গে একটি সুন্দর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম হতে পারে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ইসলামিক স্কলারদের মতে, একটি ভালো নাম শিশুর ব্যক্তিত্বের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই নিবন্ধে, আমরা কোরআন থেকে বেছে নেওয়া ১০০টি ইসলামিক নাম, তাদের অর্থ এবং প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করেছি। এই তালিকাটি আপনাকে আপনার ছোট্ট রাজকন্যার জন্য সেরা নামটি বেছে নিতে সাহায্য করবে, যা একই সাথে আধুনিক, শ্রুতিমধুর এবং ইসলামিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণ।

কেন কোরআন থেকে নাম নির্বাচন করবেন?

কোরআন থেকে নাম নির্বাচন করার পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, এই নামগুলো সরাসরি আল্লাহর কালাম থেকে নেওয়া, তাই এগুলো অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময় বলে বিশ্বাস করা হয়। দ্বিতীয়ত, কোরআনে উল্লেখিত নামগুলোর অর্থ অত্যন্ত গভীর এবং ইতিবাচক, যা শিশুর জীবনে সাফল্য ও আল্লাহর রহমত বয়ে আনতে পারে। দারুল ইফতা (দেওবন্দ)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও অর্থবহ ইসলামিক নাম রাখার ওপর জোর দিয়ে থাকে। পরিশেষে, এই নামগুলো মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং শিশুর ইসলামিক পরিচয়কে আরও দৃঢ় করে।

কোরআন থেকে মেয়েদের ১০০টি নামের তালিকা

এখানে কোরআন থেকে নেওয়া ১০০টি সুন্দর এবং অর্থবহ ইসলামিক নাম উপস্থাপন করা হলো। প্রতিটি নামের পাশে এর অর্থ এবং কোরআনের কোন সূরায় উল্লেখ রয়েছে, তা দেওয়া হয়েছে, যা আপনাকে সঠিক নামটি বেছে নিতে সাহায্য করবে।

সরাসরি কোরআনে উল্লেখিত এবং গুণবাচক নাম

এই অংশে সেই নামগুলো তুলে ধরা হয়েছে যা সরাসরি কোরআনের আয়াতে উল্লেখ আছে বা কোরআনের বিভিন্ন শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং যা আল্লাহর গুণাবলী বা ইতিবাচক অর্থ বহন করে।

ক্রমিক নাম (বাংলা) নাম (আরবি) অর্থ কোরআনের রেফারেন্স/প্রাসঙ্গিকতা
আফিফা عفيفة পুণ্যবতী, সাধ্বী, সতী সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর মূল ‘ইফফাহ’ (عفة) শব্দটি পবিত্রতা বোঝাতে সূরা আন-নূরের ৩৩ নং আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে।
আয়াত آيات আল্লাহর নিদর্শন বা চিহ্ন কোরআনের বহু আয়াতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন সূরা বাকারার ২৫২ নং আয়াতে।
আদিলা عادلة ন্যায়পরায়ণ, যিনি সুবিচার করেন সরাসরি উল্লিখিত না হলেও ‘আদল’ (عدل) শব্দটি থেকে উদ্ভূত, যা কোরআনে ন্যায়বিচারের প্রতীক।
আফনান أفنان গাছের শাখা-প্রশাখা সূরা আর-রাহমানের ৪৮ নং আয়াতে জান্নাতের গাছের শাখার বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়েছে।
আমিনা آمنة নিরাপদ, বিশ্বস্ত সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর মূল ‘আমন’ (أمن) শব্দটি নিরাপত্তা অর্থে কোরআনে বহুবার এসেছে।
আলিয়া عليا উচ্চ, মহৎ সূরা মারইয়ামের ৫৭ নং আয়াতে উচ্চ মর্যাদা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
আনহার أنهار নদীসমূহ, ঝর্ণাধারা জান্নাতের বর্ণনায় কোরআনের বহু জায়গায় শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন সূরা মুহাম্মাদের ১৫ নং আয়াতে।
আসমা أسماء নামসমূহ, সুন্দর নাম সূরা আল-আ’রাফের ১৮০ নং আয়াতে “আল-আসমাউল হুসনা” (সুন্দর নামসমূহ) প্রসঙ্গে এসেছে।
আতিকা عتيقة সম্মানিত, প্রাচীন, মুক্ত সূরা আল-হজ্জের ২৯ এবং ৩৩ নং আয়াতে ‘বায়তুল আতিক’ (প্রাচীন ঘর) বা কাবা ঘরকে বোঝানো হয়েছে।
১০ বতুল بتول কুমারী, যিনি নিজেকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেছেন এটি হযরত মারইয়াম (আ.)-এর একটি উপাধি হিসেবে পরিচিত।
১১ বুশরা بشرى সুসংবাদ কোরআনের অনেক আয়াতে সুসংবাদ অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন সূরা বাকারার ৯৭ নং আয়াতে।
১২ দানিয়া دانية নিকটবর্তী, ঘনিষ্ঠ সূরা আল-হাক্কাহ’র ২৩ নং আয়াতে জান্নাতের ফলের বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়েছে, যা হাতের নাগালে থাকবে।
১৩ দুহা ضحى সকালের প্রথম ভাগের আলো, পূর্বাহ্ন পবিত্র কোরআনের ৯৩ তম সূরাটির নাম ‘সূরা আদ-দুহা’।
১৪ এশা عشاء রাতের নামাজ, সন্ধ্যার পর ‘এশা’ শব্দটি নামাজের সময় হিসেবে সূরা নূরের ৫৮ নং আয়াতে উল্লেখ আছে।
১৫ ফারাহ فرح আনন্দ, সুখ সূরা আত-তাওবার ৮১ নং আয়াতে আনন্দ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
১৬ ফিরদাউস فردوس জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর, উদ্যান সূরা আল-কাহাফের ১০৭ এবং সূরা আল-মুমিনুনের ১১ নং আয়াতে জান্নাতের নাম হিসেবে উল্লেখ আছে।
১৭ ফারিহা فرحة সুখী, আনন্দিত সূরা আত-তাওবার ৮১ নং আয়াতের ‘ফারাহ’ শব্দ থেকে উদ্ভূত।
১৮ হামিদা حامدة প্রশংসাকারী সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর মূল ‘হামদ’ (حمد) শব্দটি আল্লাহর প্রশংসা অর্থে কোরআনে বহুবার ব্যবহৃত।
১৯ হানীফা حنيفة একনিষ্ঠ, যিনি আল্লাহর প্রতি অনুগত সূরা আল-বাকারার ১৩৫ নং আয়াতে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অনুসারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২০ হুর حور জান্নাতের সুন্দরী নারী, আয়তলোচনা জান্নাতের সঙ্গিনীদের বর্ণনায় কোরআনে বহুবার এসেছে, যেমন সূরা আর-রাহমানের ৭২ নং আয়াতে।
২১ ইহসান إحسان দয়া, অনুগ্রহ, উত্তম কাজ সূরা আর-রাহমানের ৬০ নং আয়াতে ‘ইহসান’ শব্দটি উত্তম কাজের প্রতিদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২২ ইলহাম إلهام অনুপ্রেরণা, ঐশী জ্ঞান সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর মূল ধারণাটি কোরআনে বিদ্যমান।
২৩ ঈমান إيمان বিশ্বাস, আস্থা কোরআনের অন্যতম মূল ভিত্তি এবং বহু আয়াতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
২৪ ইরাম إرم একটি প্রাচীন শহরের নাম, স্তম্ভের শহর সূরা আল-ফাজরের ৭ নং আয়াতে ‘ইরাম’ শহরের উল্লেখ আছে।
২৫ জান্নাত جنة বেহেশত, বাগান কোরআনে অসংখ্যবার জান্নাতের বর্ণনায় এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
২৬ লায়লা ليلى রাত ‘লাইল’ (ليل) শব্দটি কোরআনে বহুবার এসেছে, যেমন ‘সূরা আল-লাইল’।
২৭ লুলু لؤلؤ মুক্তা সূরা আর-রাহমানের ২২ নং আয়াতে জান্নাতের বর্ণনায় মুক্তার কথা বলা হয়েছে।
২৮ মারওয়া مروة মক্কার একটি পবিত্র পাহাড়ের নাম সূরা আল-বাকারার ১৫৮ নং আয়াতে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের কথা উল্লেখ আছে।
২৯ মারইয়াম مريم হযরত ঈসা (আ.)-এর মায়ের নাম কোরআনের ১৯ তম সূরাটির নাম ‘সূরা মারইয়াম’ এবং তাঁর নাম বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে।
৩০ মাওয়া مأوى আশ্রয়স্থল সূরা আন-নাজমের ১৫ নং আয়াতে ‘জান্নাতুল মাওয়া’ বা আশ্রয়স্থল হিসেবে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে।
৩১ মুমিনা مؤمنة বিশ্বাসী নারী সূরা আন-নিসার ৯২ নং আয়াতে এবং অন্যান্য স্থানে বিশ্বাসী নারীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩২ মুনা منى ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা এর মূল শব্দ ‘তামান্না’ (تمنى) থেকে উদ্ভূত, যা আকাঙ্ক্ষা বোঝায়।
৩৩ মুজনা مزنة সাদা মেঘ সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর অর্থ সুন্দর।
৩৪ নাঈমা نعيمة সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য সূরা আল-গাশিয়ার ৮ নং আয়াতে সুখী মুখমণ্ডল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
৩৫ নাজওয়া نجوى গোপন পরামর্শ, কানে কানে কথা বলা সূরা আল-মুজাদালার ৮ নং আয়াতে এই শব্দটি উল্লেখ আছে।
৩৬ নিসা نساء নারী পবিত্র কোরআনের চতুর্থ সূরাটির নাম ‘সূরা আন-নিসা’।
৩৭ নূর نور আলো, জ্যোতি কোরআনের ২৪ তম সূরাটির নাম ‘সূরা আন-নূর’। আল্লাহর একটি গুণবাচক নামও।
৩৮ রাবাব رباب সাদা মেঘ সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি সুন্দর আরবি নাম।
৩৯ রাবওয়া ربوة উঁচু ভূমি, সবুজ উপত্যকা সূরা আল-বাকারার ২৬৫ নং আয়াতে উঁচু উর্বর ভূমি বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৪০ রাফাহ رفاه আরাম, স্বাচ্ছন্দ্য সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর অর্থ ইতিবাচক।
৪১ রাহিmah رحمة দয়া, করুণা কোরআনে আল্লাহর গুণ ‘আর-রাহমান’ ও ‘আর-রাহিম’ এর মূল এটি। বহু আয়াতে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৪২ রাইহানা ريحانة সুগন্ধি গাছ বা ফুল সূরা আর-রাহমানের ১২ নং আয়াতে ‘রাইহান’ শব্দটি সুগন্ধি গাছের প্রসঙ্গে এসেছে।
৪৩ রাওদাহ روضة বাগান, উদ্যান হাদিসে ‘রিয়াজুল জান্নাহ’ (জান্নাতের বাগান) কথাটি এসেছে। কোরআনে জান্নাতের বর্ণনায় এর ধারণা রয়েছে।
৪৪ রিহাদ رحاد নরম, কোমল সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর অর্থ সুন্দর।
৪৫ রুকাইয়া رقية উচ্চতর, আকর্ষণীয়, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যার নাম সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি ঐতিহাসিক ইসলামিক নাম।
৪৬ সাবা سبأ একটি প্রাচীন রাজ্যের নাম কোরআনের ২৭ তম সূরাটির নাম ‘সূরা সাবা’।
৪৭ সাফা صفا স্বচ্ছতা, মক্কার একটি পবিত্র পাহাড় সূরা আল-বাকারার ১৫৮ নং আয়াতে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের কথা উল্লেখ আছে।
৪৮ সাজিদা ساجدة সিজদাকারী, যিনি আল্লাহর সামনে নত হন সূরা আল-আ’রাফের ২০৬ নং আয়াতে সিজদাকারীদের কথা বলা হয়েছে।
৪৯ সাকিনা سكينة প্রশান্তি, আল্লাহর পক্ষ থেকে স্থিরতা সূরা আল-ফাতহের ৪ নং আয়াতে মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাজিলের কথা বলা হয়েছে।
৫০ সালিহা صالحة পুণ্যবতী, সৎকর্মশীল নারী কোরআনে বহুবার সৎকর্মশীল নারী-পুরুষের কথা বলা হয়েছে। যেমন, সূরা আন-নিসার ১২৪ নং আয়াতে।
৫১ সালসাবিল سلسبيل জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম সূরা আল-ইনসানের ১৮ নং আয়াতে এই ঝর্ণার নাম উল্লেখ আছে।
৫২ সামা سماء আকাশ কোরআনে বহুবার আকাশ অর্থে ‘সামা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৫৩ সিদরাহ سدرة একটি বরই গাছ, যা সপ্তম আকাশে অবস্থিত সূরা আন-নাজমের ১৪ নং আয়াতে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’র উল্লেখ আছে।
৫৪ সুন্দুস سندس মিহি রেশমি কাপড় সূরা আল-কাহাফের ৩১ নং আয়াতে জান্নাতবাসীদের পোশাকের বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়েছে।
৫৫ শাফা شفا আরোগ্য, নিরাময় সূরা আশ-শু’আরার ৮০ নং আয়াতে আরোগ্যদানকারী হিসেবে আল্লাহর কথা বলা হয়েছে।
৫৬ শামস شمس সূর্য কোরআনের ৯১ তম সূরাটির নাম ‘সূরা আশ-শামস’।
৫৭ শিফা شفاء আরোগ্য, নিরাময় সূরা ইউনুসের ৫৭ নং আয়াতে কোরআনকে অন্তরের জন্য ‘শিফা’ বা আরোগ্য বলা হয়েছে।
৫৮ সুহা سها একটি ছোট তারা সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি ক্লাসিক্যাল আরবি নাম।
৫৯ তাহিরা طاهرة পবিত্র, বিশুদ্ধ সূরা আল-মুদ্দাস্‌সিরের ৪ নং আয়াতে পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে।
৬০ তাকওয়া تقوى আল্লাহভীতি, পরহেজগারি কোরআনের অন্যতম একটি মূল ধারণা, যেমন সূরা আল-বাকারার ২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে।
৬১ তাসনিম تسنيم জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম সূরা আল-মুতাফফিফিনের ২৭ নং আয়াতে এর উল্লেখ আছে।
৬২ তাওবা توبة অনুশোচনা, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কোরআনের নবম সূরাটির নাম ‘সূরা আত-তাওবা’।
৬৩ ইয়াকুত ياقوت রুবি বা পদ্মরাগমণি সূরা আর-রাহমানের ৫৮ নং আয়াতে জান্নাতের হুরদের বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়েছে।
৬৪ ইয়ামনা يمنى ডান দিক, সৌভাগ্য এর মূল ‘ইয়ামিন’ (يمين) শব্দটি সৌভাগ্য বা ডান দিক বোঝাতে কোরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
৬৫ ইয়াসমিন ياسمين একটি সুগন্ধি ফুল, জেসমিন সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি জনপ্রিয় এবং সুন্দর অর্থবহ নাম।
৬৬ ইয়াসিরা يسيرة সহজ, আরামপ্রদ সূরা আল-বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ মানুষের জন্য সহজ চান, এই অর্থে এর মূল ‘ইয়ুসর’ (يسر) ব্যবহৃত হয়েছে।
৬৭ যাহরা زهراء উজ্জ্বল, দীপ্তিময় সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর মূল ‘যাহর’ (زهر) অর্থ ফুল, যা জান্নাতের বর্ণনায় এসেছে।
৬৮ যাইনাব زينب একটি সুগন্ধি গাছের নাম, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যার নাম সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি ঐতিহাসিক ইসলামিক নাম।
৬৯ যাইতুন زيتون জলপাই সূরা আত-তীন-এর প্রথম আয়াতে আল্লাহ যাইতুনের কসম খেয়েছেন।
৭০ যিনাত زينة সৌন্দর্য, অলংকার সূরা আল-কাহাফের ৭ নং আয়াতে পৃথিবীর সৌন্দর্য বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
৭১ আয়েশা عائشة জীবন্ত, যিনি আরামে জীবনযাপন করেন সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় স্ত্রীর নাম এবং একটি অত্যন্ত সম্মানিত নাম।
৭২ বারিরাহ بريرة বিশ্বস্ত, ধার্মিক সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একজন বিখ্যাত সাহাবীর নাম।
৭৩ দুররাহ درة বড় মুক্তা এর মূল শব্দ ‘দুর’ (در) মুক্তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
৭৪ ফাইজা فائزة বিজয়ী, সফল সূরা আত-তাওবার ২০ নং আয়াতে সফলকাম ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে এর মূল ‘ফাউয’ (فوز) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৭৫ গালিবা غالبة বিজয়ী, প্রভাবশালী এর মূল ‘গালিব’ (غالب) শব্দটি সূরা ইউসুফের ২১ নং আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে।
৭৬ হালিমা حليمة ধৈর্যশীল, সহনশীল নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর দুধ-মাতার নাম। এর মূল ‘হিলম’ (حلم) অর্থ সহনশীলতা।
৭৭ হাফসা حفصة সিংহী, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর স্ত্রীর নাম সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি ঐতিহাসিক ইসলামিক নাম।
৭৮ ইফফাত عفت পবিত্রতা, সাধ্বী সূরা আন-নূরের ৩৩ নং আয়াতে এর মূল ধারণা রয়েছে।
৭৯ ইশরাক إشراق সূর্যোদয়, আলোকময় হওয়া সূরা সাদ-এর ১৮ নং আয়াতে ‘ইশরাক’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৮০ জামিলা جميلة সুন্দর, encantadora সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর মূল ‘জামাল’ (جمال) অর্থ সৌন্দর্য, যা সূরা ইউসুফে ব্যবহৃত হয়েছে।
৮১ কারিমা كريمة উদার, সম্মানিত সূরা আল-ইনফিতারের ৬ নং আয়াতে আল্লাহর গুণ ‘কারীম’ (كريم) উল্লেখ আছে।
৮২ লাবিবা لبيبة বুদ্ধিমান, জ্ঞানী সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর অর্থ অত্যন্ত ইতিবাচক।
৮৩ লায়লাতুল ليلة রাত ‘লাইলাতুল কদর’-এর মতো পবিত্র রাতের প্রসঙ্গে কোরআনে এসেছে।
৮৪ মাহেরা ماهرة দক্ষ, পারদর্শী সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি সুন্দর অর্থসহ নাম।
৮৫ মালিহা مليحة সুন্দর, আকর্ষণীয় সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর অর্থ খুবই সুন্দর।
৮৬ মাসউদা مسعودة সুখী, ভাগ্যবান এর মূল ‘সা’দ’ (سعد) অর্থ সৌভাগ্য।
৮৭ মায়মুনা ميمونة সৌভাগ্যবতী, আশীর্বাদপ্রাপ্ত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন স্ত্রীর নাম।
৮৮ নাদিরা نادرة দুর্লভ, অনন্য সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর অর্থ চমৎকার।
৮৯ নাফিসা نفيسة মূল্যবান, চমৎকার সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর অর্থ অত্যন্ত ইতিবাচক।
৯০ নাসিরা ناصرة সাহায্যকারী সূরা আল-বাকারার ২১৪ নং আয়াতে আল্লাহর সাহায্য ‘নাসর’ (نصر) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৯১ কানি’তা قانتة অনুগত, উপাসনাকারী সূরা আত-তাহরীমের ৫ নং আয়াতে অনুগত নারীদের গুণ হিসেবে উল্লেখ আছে।
৯২ রাযিয়া راضية সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত সূরা আল-ফাজরের ২৮ নং আয়াতে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট আত্মার কথা বলা হয়েছে।
৯৩ রুফাইদা رفيدة ছোট উপহার, সাহায্যকারী এটি একজন বিখ্যাত নারী সাহাবীর নাম, যিনি ইসলামের প্রথম নার্স হিসেবে পরিচিত।
৯৪ সাফিয়া صفية বিশুদ্ধ, নির্বাচিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন স্ত্রীর নাম। এর মূল ‘সাফা’ (صفا) থেকে উদ্ভূত।
৯৫ সামিরা سميرة যিনি রাতে কথা বলেন, গল্পকার সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি ক্লাসিক্যাল আরবি নাম।
৯৬ সারাহ سارة রাজকুমারী, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রীর নাম কোরআনে তাঁর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন সূরা হুদের ৭১-৭৩ নং আয়াতে।
৯৭ শামীমা شميمة সুগন্ধি, خوشبو সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এর অর্থ সুন্দর।
৯৮ তাহমিনা تهمينة শক্তিশালী, সাহসী সরাসরি উল্লিখিত না হলেও এটি একটি সুন্দর অর্থবহ নাম।
৯৯ উমামা أمامة নেতৃত্বদানকারী এটি নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাতনীর নাম ছিল।
১০০ ওয়াজিহা وجيهة সম্মানিত, বিশিষ্ট সূরা আল-ইমরানের ৪৫ নং আয়াতে হযরত ঈসা (আ.)-কে দুনিয়া ও আখিরাতে ‘ওয়াজিহ’ বা সম্মানিত বলা হয়েছে।

নাম রাখার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

সন্তানের জন্য ইসলামিক নাম নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:

১. অর্থের গুরুত্ব: নামের অর্থ যেন সুন্দর এবং ইতিবাচক হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি নেতিবাচক বা মন্দ অর্থবহ নাম শিশুর ব্যক্তিত্বের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। World Health Organization (WHO)-এর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একটি শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং পরিচয় তার মানসিক বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে।

২. সঠিক উচ্চারণ: নামটি যেন সহজ এবং শ্রুতিমধুর হয়, যাতে মানুষ সহজেই তা উচ্চারণ করতে পারে। ভুল উচ্চারণে নামের অর্থ বদলে যেতে পারে।

৩. সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতা: নামটি আপনার সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই কিনা, তা-ও বিবেচনা করা উচিত।

৪. আল্লাহর গুণবাচক নাম: আল্লাহর গুণবাচক নাম (যেমন: রাহমান, কারিম) রাখার ক্ষেত্রে নামের আগে ‘আব্দুল’ (عبد) বা ‘আমাতুল’ (أمة) যোগ করা উচিত, যার অর্থ আল্লাহর বান্দা বা বান্দী। যেমন: আমাতুর রাহমান।

উপসংহার

কোরআন থেকে আপনার মেয়ের জন্য একটি নাম নির্বাচন করা কেবল একটি ঐতিহ্য নয়, বরং এটি আপনার সন্তানের জন্য একটি দোয়া বা আশীর্বাদ। উপরে উল্লিখিত ১০০টি নাম এবং তাদের অর্থ আপনাকে একটি সুন্দর, অর্থবহ এবং ইসলামিক নাম বেছে নিতে সহায়তা করবে যা আপনার কন্যার জীবনকে আলোকিত করবে। প্রতিটি নামই কোরআনের গভীর জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে জড়িত, যা তাকে একজন সৎ ও আদর্শবান মুসলিম হিসেবে বেড়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করবে।

About Author
মনীষা মুখার্জী