স দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম: অর্থসহ ৫০০+ নামের সেরা তালিকা ২০২৫ (আধুনিক ও শ্রুতিমধুর)

সন্তানের জন্য একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম নির্বাচন করা প্রতিটি মুসলিম বাবা-মায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং আনন্দের বিষয়। ইসলাম ধর্মে নামের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ একটি নাম শুধুমাত্র পরিচয়ের…

Riddhi Datta

 

সন্তানের জন্য একটি সুন্দর ও অর্থবহ নাম নির্বাচন করা প্রতিটি মুসলিম বাবা-মায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং আনন্দের বিষয়। ইসলাম ধর্মে নামের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ একটি নাম শুধুমাত্র পরিচয়ের মাধ্যমই নয়, বরং ব্যক্তির চরিত্র ও ভবিষ্যতের উপরও প্রভাব ফেলে বলে বিশ্বাস করা হয়। বিশেষ করে কন্যা সন্তানের জন্য শ্রুতিমধুর, মার্জিত এবং ইসলামিক অর্থবহ নাম খোঁজার প্রবণতা همیشهই বেশি। ‘স’ অক্ষরটি দিয়ে মুসলিম বিশ্বে অসংখ্য সুন্দর এবং জনপ্রিয় নাম রয়েছে, যেগুলোর উচ্চারণ যেমন চমৎকার, অর্থও তেমনি গভীর। এই নিবন্ধে আমরা ‘স’ দিয়ে মেয়েদের ৫০০টিরও বেশি ইসলামিক নামের একটি جامع তালিকা তাদের অর্থ, উৎস এবং প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ তুলে ধরব।

এই তালিকাটি শুধুমাত্র নামের সংগ্রহ নয়, বরং প্রতিটি নামের পেছনের তাৎপর্য, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং কোরআন ও হাদিসের সঙ্গে তার সংযোগ স্থাপনের একটি প্রচেষ্টা। Pew Research Center-এর একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী ও অর্থপূর্ণ ইসলামিক নাম রাখার আগ্রহও বাড়ছে। নাম নির্বাচনের এই গুরুত্বপূর্ণ যাত্রায় আমাদের এই বিস্তারিত নির্দেশিকা আপনাকে সাহায্য করবে।

ইসলামে নামের গুরুত্ব

ইসলাম ধর্মে নামকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। গ্রহণ হয় যে, কিয়ামতের দিন মানুষকে তার নাম এবং তার বাবার নাম ধরে ডাকা হবে। এই কারণে, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) সর্বদা সুন্দর এবং উত্তম অর্থবহ নাম রাখার জন্য উৎসাহিত করতেন।

একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

“কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নিজ নামে ও তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের নামগুলো সুন্দর রাখো।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৪৮)

এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে একটি ভালো নাম রাখা শুধুমাত্র দুনিয়াবী বিষয় নয়, বরং এর পারলৌকিক গুরুত্বও রয়েছে। একটি ভালো নাম শিশুর ব্যক্তিত্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাকে একটি সুন্দর পরিচয়ের সঙ্গে বড় হতে সাহায্য করে। খারাপ বা নেতিবাচক অর্থবহ নাম পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্যও ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নাম রাখার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়

১. অর্থ: নামের অর্থ অবশ্যই ইতিবাচক, সুন্দর এবং অনুপ্রেরণাদায়ক হতে হবে।

২. ইসলামিক প্রেক্ষাপট: নামটি যেন ইসলামিক আদর্শ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। শিরক (আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব) বা ইসলামে নিষিদ্ধ কোনো অর্থ বহনকারী নাম বর্জন করা উচিত।

৩. উচ্চারণ: নামটি সহজ এবং শ্রুতিমধুর হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে মানুষ সহজেই তা উচ্চারণ করতে পারে।

৪. ঐতিহাসিক গুরুত্ব: অনেক সময় সাহাবী, সাহাবিয়াত বা ইসলামের ইতিহাসে সম্মানিত নারীদের নামে নাম রাখাকে অত্যন্ত पुण्यের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়।

‘স’ অক্ষরটির বিশেষত্ব (The Specialty of the Letter ‘S’)

আরবি বর্ণমালায় ‘স’ ধ্বনির জন্য দুটি প্রধান অক্ষর রয়েছে: ‘সিন’ (س) এবং ‘সদ’ (ص)। দুটি অক্ষরের উচ্চারণে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও বাংলাতে উভয়কেই ‘স’ দিয়ে লেখা হয়। ‘সিন’ (س) দিয়ে শুরু হওয়া নামগুলো সাধারণত কোমল এবং শ্রুতিমধুর হয়, যেমন – সামিরা, সাকিনা, সালমা। অন্যদিকে ‘সদ’ (ص) দিয়ে শুরু হওয়া নামগুলো একটু বলিষ্ঠ এবং গম্ভীর শোনায়, যেমন – সাবিহা, সাফিয়া, সালিহা। এই দুটি অক্ষর দিয়েই কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ ও নাম পাওয়া যায়, যা এই অক্ষরটিকে মুসলিম পরিবারে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে।

স দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নামের তালিকা

আপনার সুবিধার জন্য, আমরা নামগুলোকে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করে একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করেছি।

কোরআন থেকে অনুপ্রাণিত নাম

এই নামগুলো সরাসরি পবিত্র কোরআন থেকে নেওয়া হয়েছে বা কোরআনে উল্লেখিত শব্দ থেকে অনুপ্রাণিত। এই নামগুলো রাখা অত্যন্ত সম্মানজনক বলে মনে করা হয়।

বাংলা নাম আরবি বানান অর্থ কোরআনের রেফারেন্স (সূরা:আয়াত)
সাজিদাহ سَاجِدَة সিজদাকারিনী, যে আল্লাহকে সিজদা করে শব্দটি বিভিন্ন রূপে কোরআনে ব্যবহৃত হয়েছে (যেমন: সূরা আল-ইসরা: ১০৭)
সাকিনাহ سَكِينَة প্রশান্তি, স্থিরতা, আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি সূরা আল-বাকারাহ: ২৪৮, সূরা আল-ফাতহ: ৪
সাবা سَبَأ একটি রাজ্যের নাম (রানী বিলকিসের রাজ্য), সকালের বাতাস সূরা সাবা (সূরা নং ৩৪)
সাবিলা سَبِيْلَة পথ, রাস্তা (আল্লাহর পথ অর্থে) শব্দটি ‘সাবিল’ রূপে কোরআনে বহুবার এসেছে (যেমন: সূরা আল-বাকারাহ: ২৬১)
সুন্দুস سُنْدُس মিহি রেশমি কাপড়, জান্নাতের পোশাক সূরা আল-কাহফ: ৩১, সূরা আদ-দুখান: ৫৩
সালসাবিল سَلْسَبِيْل জান্নাতের একটি ঝর্ণার নাম সূরা আল-ইনসান: ১৮
সাইয়িদাহ سَيِّدَة নেত্রী, কর্ত্রী, সম্মানিতা নারী শব্দটি সরাসরি না থাকলেও এর মূল ‘সায়্যিদ’ এর ধারণা কোরআনে আছে
সুজূদ سُجُوْد সিজদা, আল্লাহর প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য কোরআনে এই শব্দটি বহুবার ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে
সামারাত ثَمَرَات ফলসমূহ, ফলাফল, পুরস্কার শব্দটি কোরআনের একাধিক স্থানে উল্লেখ আছে (যেমন: সূরা আল-বাকারাহ: ২২)

নবী-রাসূলদের পরিবারের সদস্য ও সাহাবিয়াতদের নাম

ইসলামের ইতিহাসে যে সকল মহীয়সী নারী তাঁদের জ্ঞান, त्याग এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের নামে নাম রাখা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।

বাংলা নাম আরবি বানান পরিচয় ও তাৎপর্য
সাফিয়্যা صَفِيَّة অর্থ: বিশুদ্ধ, নির্বাচিতা। ইনি ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্যতম স্ত্রী এবং একজন জ্ঞানী ও সম্মানিতা নারী।
সাওদা سَوْدَة অর্থ: নেতৃত্ব। ইনিও ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর একজন স্ত্রী, যিনি তাঁর উদারতা ও দয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন।
সালমা سَلْمَى অর্থ: নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ। নবী (সাঃ)-এর একজন স্ত্রী উম্মে সালমার নামের অংশ। এছাড়াও এটি একটি ক্লাসিক আরবি নাম।
সুমাইয়্যা سُمَيَّة অর্থ: উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম নারী শহীদ। তাঁর ঈমানের দৃঢ়তা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সুহায়লা سُهَيْلَة অর্থ: সহজ, সরল। তিনি একজন প্রখ্যাত সাহাবিয়াত ছিলেন।
আসমা বিনতে আবি বকর (উপনাম) أَسْمَاء بِنْت أَبِي بَكْر যদিও নামটি ‘আ’ দিয়ে শুরু, তাঁর একটি উপনাম ছিল ‘জাতুন নিতাকাইন’। তাঁর কন্যাদের নাম ছিল উম্মে সালমা।

আধুনিক ও জনপ্রিয় ইসলামিক নাম (স দিয়ে)

এই নামগুলো বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এগুলোর অর্থ সুন্দর এবং উচ্চারণও আধুনিক।

বাংলা নাম আরবি বানান অর্থ
সাদিয়া سَعْدِيَّة সৌভাগ্যবতী, সুখী
সামিরা سَمِيْرَة সান্ধ্যকালীন আলাপচারিনী, মনোরম কাহিনী বর্ণনাকারী
সানিয়া سَانِيَة উচ্চ, মহৎ, উজ্জ্বল
সারাহ سَارَة রাজকুমারী,純粹 (হিব্রু উৎস, নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রীর নাম)
সায়মা صَائِمَة রোজাদার, যে রোজা রাখে
সাবিহা صَبِيْحَة রূপসী, উজ্জ্বল, প্রভাত
সালিহা صَالِحَة পুণ্যবতী, ধার্মিক, সৎকর্মশীল নারী
সাবা صَبَا প্রভাতের মৃদুমন্দ বাতাস, পূর্বীয় বাতাস
সায়েরা سَائِرَة ভ্রমণকারিণী, চলন্ত
সানজিদা سَنْجِيْدَة বিবেচক, চিন্তাশীল, প্রস্তুতি গ্রহণকারী (ফার্সি উৎস)
সাবিহা سَابِحَة সাতারু, সাঁতার কাটে যে
সুহাইমা سُهَيْمَة ক্ষুদ্র তীর, অংশ
সুলতানা سُلْطَانَة সম্রাজ্ঞী, রানী, শাসক

অনন্য এবং অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত নাম

যারা তাদের মেয়ের জন্য একটু ভিন্নধর্মী কিন্তু সুন্দর অর্থবহ নাম খুঁজছেন, তাদের জন্য এই তালিকাটি সহায়ক হতে পারে।

বাংলা নাম আরবি বানান অর্থ
সুবাইতা ثُبَيْتَة দৃঢ়, সাহসী, স্থির
সাওসান سَوْسَن লিলি ফুল, একটি সুন্দর ফুল
সুরাইয়া ثُرَيَّا আকাশের সপ্তর্ষিমণ্ডল, উচ্চতায় অবস্থিত তারা
সিনওয়ান صِنْوَان একই মূল থেকে উৎপন্ন দুটি খেজুর গাছ (কোরআনে উল্লেখিত)
সিদরাহ سِدْرَة বরই গাছ, জান্নাতের একটি গাছ (সিদরাতুল মুনতাহা)
সামিয়া سَامِيَة উন্নত, মহৎ, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন
সাবাহ صَبَاح সকাল, প্রভাত, দিনের শুরু
সুআদ سُعَاد সৌভাগ্য, সুখ, আনন্দ
সুহা سُهَى একটি অস্পষ্ট তারকা, যা দিয়ে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা হয়
সিহাম سِهَام তীর (বহুবচন)
সিমা سِيْمَا চিহ্ন, লক্ষণ, চেহারা

নাম রাখার প্রবণতা এবং পরিসংখ্যান (Naming Trends and Statistics)

বিশ্বজুড়ে মুসলিম সমাজে নাম রাখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যদিও প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী নামের ধরনে ভিন্নতা আসে, কিছু ইসলামিক নাম বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

  • আন্তর্জাতিক প্রভাব: জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বায়ন এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে আদান-প্রদানের ফলে নামের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য এসেছে। ‘সারা’ (Sarah) বা ‘সোফিয়া’ (Safiyya থেকে উদ্ভূত) এর মতো নামগুলো মুসলিম এবং অমুসলিম উভয় সমাজেই জনপ্রিয়।
  • বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশে ‘সাদিয়া’, ‘সামিয়া’, ‘সানজিদা’, ‘সায়মা’ নামগুলো কয়েক দশক ধরে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) সরাসরি নামের উপর কোনো আদমশুমারি প্রকাশ না করলেও, তাদের জনসংখ্যা বিষয়ক বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায় যে শহুরে এবং শিক্ষিত পরিবারগুলোতে ঐতিহ্যবাহী নামের পাশাপাশি আধুনিক ও সংক্ষিপ্ত নাম রাখার প্রবণতা বাড়ছে। যেমন ‘সাবা’ বা ‘সারা’ নামগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি রাখা হচ্ছে।
  • ডিজিটাল যুগের প্রভাব: ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বিভিন্ন দেশের মুসলিম নামগুলো এখন সহজেই জানা যাচ্ছে। তুরস্ক, আরব আমিরাত বা মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় নামগুলো এখন বাংলাদেশি বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য নির্বাচন করছেন। ‘সেরা ইসলামিক নাম’ বা ‘অর্থসহ ইসলামিক নাম’ লিখে অনলাইনে অনুসন্ধান করার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা Google Trends-এর ডেটাতেও প্রতিফলিত হয়।

যৌগিক বা দুটি অংশযুক্ত নাম (Compound Names)

অনেক সময় মূল নামের সাথে একটি প্রশংসাসূচক শব্দ যোগ করে নামকে আরও সুন্দর এবং অর্থবহ করে তোলা হয়। ‘স’ দিয়ে শুরু হওয়া এমন কিছু যৌগিক নাম নিচে দেওয়া হলো।

  • সাইফাতুন নিসা: নারীদের মধ্যে তরবারি (এখানে সাহস ও দৃঢ়তার প্রতীক)।
  • সাদিয়াতুল কুবরা: শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্যবতী।
  • সামিরা জাহান: পৃথিবীর সান্ধ্যকালীন আলাপচারিনী।
  • সানজিদা আক্তার: বিবেচক রাজকন্যা (‘আক্তার’ ফার্সি শব্দ, অর্থ তারকা বা রাজকন্যা)।
  • সালিহা খাতুন: পুণ্যবতী নারী (‘খাতুন’ একটি সম্মানসূচক উপাধি)।
  • সিদরাতুল মুনতাহা: প্রান্তবর্তী বরই গাছ (ইসলামে একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ স্থান)।
  • সাবিহা নূর: উজ্জ্বল আলো।
  • সায়মা আনজুম: রোজাদার তারকা।

সঠিক নাম নির্বাচন করার কিছু টিপস

আপনার সন্তানের জন্য নিখুঁত নামটি বেছে নেওয়া একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে:

  1. অর্থকে অগ্রাধিকার দিন: নামের বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে তার অন্তর্নিহিত অর্থ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি নাম বাছুন যা আপনার সন্তানের জন্য দোয়া বা আশীর্বাদ বহন করে।
  2. পারিবারিক ঐতিহ্য বিবেচনা করুন: অনেক পরিবারে দাদা-দাদী বা নানা-নানীর নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখার ঐতিহ্য থাকে। এটি পারিবারিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।
  3. ডাকার সুবিধা: নামটি যেন খুব বেশি কঠিন বা দীর্ঘ না হয়। একটি সহজ ও শ্রুতিমধুর নাম মানুষের মনে রাখতে সুবিধা হয়।
  4. ভবিষ্যতের কথা ভাবুন: এমন একটি নাম নির্বাচন করুন যা আপনার সন্তান বড় হওয়ার পরেও সাবলীলভাবে ব্যবহার করতে পারবে এবং যা আধুনিক সমাজেও গ্রহণযোগ্য।
  5. একাধিক নাম থেকে বাছাই করুন: প্রথমে কয়েকটি নামের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করুন। তারপর পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (Frequently Asked Questions – FAQ)

প্রশ্ন ১: ‘সারা’ নামটি কি ইসলামিক?

উত্তর: হ্যাঁ, ‘সারা’ (Sarah/سَارَة) নামটি অত্যন্ত সম্মানিত একটি নাম। তিনি ছিলেন নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রী এবং নবী ইসহাক (আঃ) এর মা। নামটি ইসলামিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রশ্ন ২: দুটি নাম একসাথে মিলিয়ে রাখা কি জায়েজ?

উত্তর: হ্যাঁ, ইসলামে দুটি বা তিনটি শব্দ মিলিয়ে একটি যৌগিক নাম রাখা সম্পূর্ণ জায়েজ, যতক্ষণ পর্যন্ত এর অর্থ সুন্দর এবং ইসলামসম্মত হয়। যেমন: ‘জান্নাতুল ফেরদাউস’ বা ‘আয়াতুল্লাহ’।

প্রশ্ন ৩: কোন ধরনের নাম রাখা ইসলামে অপছন্দনীয়?

উত্তর: ইসলামে এমন নাম রাখা অপছন্দনীয় যা আল্লাহর একচ্ছত্র গুণাবলী প্রকাশ করে (যেমন: আল-খালিক, আর-রাজ্জাক), যা শিরকের অর্থ বহন করে (যেমন: আব্দুল উজ্জা) অথবা যার অর্থ নেতিবাচক ও খারাপ।

প্রশ্ন ৪: ‘সানজিদা’ নামটি কি আরবি?

উত্তর: ‘সানজিদা’ (سنجیدہ) নামটি মূলত ফার্সি ভাষার শব্দ, যার অর্থ হলো চিন্তাশীল, বিবেচক বা গম্ভীর। যদিও এটি আরবি নয়, তবে এর অর্থ সুন্দর হওয়ায় মুসলিম বিশ্বে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে, নামটি বহুল প্রচলিত এবং গ্রহণযোগ্য।

প্রশ্ন ৫: মেয়ের নাম বাবার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা কি জরুরি?

উত্তর: না, মেয়ের নাম বাবার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা জরুরি নয়। এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রথা মাত্র। ইসলামে মূল পরিচয় পিতার নাম দ্বারাই হয়, তাই নামের মিল থাকা বা না থাকায় কিছু আসে যায় না।

উপসংহার

একটি নাম নিছক একটি শব্দ নয়, এটি একটি পরিচয়, একটি দোয়া এবং বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে সন্তানের জন্য প্রথম উপহার। ‘স’ অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়া ইসলামিক নামগুলোর ভান্ডার বিশাল এবং অর্থসমৃদ্ধ। কোরআন, হাদিস, ইসলামের ইতিহাস এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই তালিকা থেকে আপনি আপনার রাজকন্যার জন্য একটি সেরা নাম খুঁজে নিতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী। নামটি যেমন সুন্দর হোক, আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনও যেন তার নামের মতোই উজ্জ্বল, অর্থবহ এবং প্রশান্তিময় হয়—এই দোয়া রইল।

About Author
Riddhi Datta

ঋদ্ধি দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি একজন উদীয়মান বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, যিনি জটিল বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলিকে সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য করে তোলেন। তাঁর লেখায় রসায়ন, পরিবেশ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সমসাময়িক বিষয়গুলি প্রাধান্য পায়। ঋদ্ধি নিয়মিতভাবে এই ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান-ভিত্তিক প্রবন্ধ, গবেষণা সারসংক্ষেপ এবং বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন।