হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া বুধবার সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গাজা যুদ্ধের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মূল তথ্য
- ৬২ বছর বয়সী হানিয়া তেহরানে একটি বাসভবনে অবস্থান করছিলেন
- ইরানের প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি তেহরানে গিয়েছিলেন
- হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী তার বাসভবনে হামলা চালিয়েছে
- হানিয়ার একজন বডিগার্ডও এই হামলায় নিহত হয়েছেন
- ইসরায়েল এখনও পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি
ইরানে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ: সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা
পটভূমি ও প্রাসঙ্গিকতা
ইসমাইল হানিয়া ২০১৭ সাল থেকে হামাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ২০০৬ সালে প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত অক্টোবরে হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন।হানিয়ার মৃত্যু হামাসের জন্য একটি বড় ধাক্কা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটির একজন শীর্ষ নেতা ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের সাথে যোগাযোগের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যু গাজা যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।
প্রতিক্রিয়া ও হুমকি
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড এক বিবৃতিতে বলেছে, “হানিয়ার হত্যাকাণ্ড যুদ্ধকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে এবং এর বড় প্রভাব পড়বে।” ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) হুমকি দিয়ে বলেছে, “এই অপরাধের জন্য শত্রুরা অবশ্যই মূল্য দিতে হবে।” ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হানিয়ার মৃত্যুকে “একটি জঘন্য অপরাধ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গাজায় যুদ্ধ বিদ্ধস্ত শিশুদের করুণ পরিণতি: এক গভীর পর্যালোচনা
সম্ভাব্য প্রভাব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হানিয়ার মৃত্যু নিম্নলিখিত প্রভাব ফেলতে পারে:
- হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা জটিল হয়ে যেতে পারে
- হামাস আরও বেশি সহিংস প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে
- ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে
- হামাসের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে পারে
- আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে
CNN-এর রাজনৈতিক বিশ্লেষক বারাক রাভিদ বলেছেন, “হানিয়ার মৃত্যু আলোচনার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।”
ইসমাইল হানিয়ার জীবনী
ইসমাইল হানিয়া ১৯৬২ সালে গাজা শহরের আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামাতা ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় বর্তমান ইসরায়েলের আশকেলন থেকে উদ্বাস্তু হয়েছিলেন।প্রথম ইন্তিফাদার সময় তিনি হামাসের সাথে যুক্ত হন। ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালে ইসরায়েল তাকে কারাগারে আটক রাখে। ১৯৯২ সালে তাকে লেবাননে নির্বাসিত করা হয়।১৯৯৭ সালে তিনি হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের সহকারী হন। ২০০৬ সালে হামাস নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হন।২০১৭ সালে তিনি হামাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান নির্বাচিত হন। ২০২০ সাল থেকে তিনি কাতারে বসবাস করছিলেন।
পরিসংখ্যান
- হানিয়া ৬২ বছর বয়সে মারা গেছেন
- তিনি ২০০৬-২০০৭ সালে প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন
- ২০১৭ সাল থেকে তিনি হামাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান ছিলেন
- গত ১০ মাসে তার ৬০ জন আত্মীয় গাজায় নিহত হয়েছেন
ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং গাজা যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। হামাস প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চ্যালেঞ্জ হবে উত্তেজনা প্রশমিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা।