List of Hezbollah Hamas leaders killed by Israel 2023: অক্টোবর ৭, ২০২৩ থেকে ইসরায়েল কর্তৃক হামাস ও হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, যিনি অক্টোবর ৭ এর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের এই হত্যাকাণ্ডের তালিকায় রয়েছে হামাস ও হিজবুল্লাহর আরও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে হত্যা করা হয়। তিনি দশকের পর দশক ধরে ইসরায়েলের সাথে সংঘাতে হিজবুল্লাহকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ইরানের সমর্থনে একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীতে পরিণত করেছেন।হামাসের আরেক শীর্ষ নেতা ফাতাহ শরিফকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে লেবাননে হত্যা করা হয়। এছাড়া হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার আলি কারাকিকেও হত্যা করা হয়েছে।
Hamas Leader News: কিভাবে নিহত হলেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া তেহরান?
নাসরাল্লাহকে হত্যার সময় এই আক্রমণে ২০ জনেরও বেশি বিভিন্ন পদমর্যাদার যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে।হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের উপ-প্রধান নাবিল কাওউককেও ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে একটি বিমান হামলায় হত্যা করা হয়। মোহাম্মদ সরুর নামে হিজবুল্লাহর ড্রোন ইউনিটের প্রধানকেও হত্যা করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ প্রথমবারের মতো এই যুদ্ধে ইসরায়েলের গভীরে বিস্ফোরক ও অনুসন্ধানমূলক ড্রোন পাঠিয়েছিল।হিজবুল্লাহর মিসাইল ইউনিটের প্রধান ইব্রাহিম কুবাইসিকেও হত্যা করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, কুবাইসি ২০০০ সালে উত্তর সীমান্তে তিনজন ইসরায়েলি সৈন্যকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।হিজবুল্লাহর আরেক শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মদ নাসেরকে ৩ জুলাই একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় হত্যা করা হয়। ইসরায়েলের দাবি, নাসের দক্ষিণ-পশ্চিম লেবানন থেকে ইসরায়েলে হামলা চালানোর দায়িত্বে ছিলেন। লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, নাসের দক্ষিণ সীমান্ত এলাকার একটি অংশের অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন।হিজবুল্লাহর আরেক শীর্ষ ফিল্ড কমান্ডার তালেব আবদাল্লাহকে ১২ জুন হত্যা করা হয়।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে। লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, আবদাল্লাহ দক্ষিণ সীমান্তের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন এবং নাসেরের সমপর্যায়ের ছিলেন।হামাসের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ দেইফকে ১ আগস্ট ইসরায়েলি বিমান হামলায় হত্যা করা হয়।
দেইফ ২০০০ সালের প্রথম দিক থেকেই ইসরায়েলের হত্যা তালিকায় ছিলেন।হামাসের আরেক শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়েহকে ৩১ জুলাই তেহরান সফরকালে হত্যা করা হয়। তিনি ২০১৭ সাল থেকে হামাসের নেতৃত্বে ছিলেন। ইরানের বিপ্লবী গার্ড জানিয়েছে, তাকে একটি স্বল্প দূরত্বের প্রক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।হামাসের উপ-প্রধান সালেহ আল-আরুরিকে ২ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে বৈরুতের দাহিয়েহ এলাকায় একটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় হত্যা করা হয়।
আরুরি হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন।হামাসের উপ-সামরিক কমান্ডার মারওয়ান ইসাকে মার্চ মাসে একটি ইসরায়েলি হামলায় হত্যা করা হয়েছে বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে। তিনি দেইফ ও সিনওয়ারের সাথে ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি চাহিদার তালিকায় ছিলেন।এই হত্যাকাণ্ডগুলো গাজায় চলমান যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ইসরায়েল দাবি করছে এগুলো হামাস ও হিজবুল্লাহর সামরিক ক্ষমতা দুর্বল করার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু অনেকে মনে করছেন এতে শুধু উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে।গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪২,৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ইসরায়েলের উপর হিজবুল্লাহর ১৭৫ রকেট হামলা: উত্তেজনা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে
অন্যদিকে গত অক্টোবরে হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিলেন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।এই হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক ইসরায়েলি এগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু যাদের আত্মীয়স্বজন এখনও গাজায় জিম্মি আছেন তারা উদ্বিগ্ন যে এতে তাদের মুক্তির সম্ভাবনা কমে যাবে।অনেক ফিলিস্তিনি মনে করছেন এসব হত্যাকাণ্ডে যুদ্ধের অবসান হবে না।
কেউ কেউ বলছেন এতে ইসরায়েলের “গণহত্যা” চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা থাকবে না। আবার কেউ কেউ সিনওয়ারকে শহীদ হিসেবে দেখছেন।এই হত্যাকাণ্ডগুলো নিঃসন্দেহে গাজা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। তবে এর ফলে কী হবে তা এখনও অনিশ্চিত। হয়তো এতে যুদ্ধ আরও তীব্র হবে, নাহয় শান্তি প্রক্রিয়ার পথ খুলে যাবে। যাই হোক, এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।