Israel recent military operations 2024: লেবানন ও সিরিয়ায় হাজার হাজার পেজার ও ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণের পর, ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর দুই দফায় এই বিস্ফোরণে অন্তত ৩৭ জন নিহত এবং ২,৯৩১ জন আহত হয়েছে। হিজবুল্লাহ’র যোগাযোগ ব্যবস্থা লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।ইসরায়েল সরাসরি এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, লেবাননের সাথে যুদ্ধের “নতুন যুগ” শুরু হচ্ছে।
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে মৃত্যু বাড়ছে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের হুমকি
লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে মৃত্যু বাড়ছে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের হুমকি
তিনি ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর “চমৎকার অর্জন” প্রশংসা করেছেন। এই বক্তব্যকে ইসরায়েলের ভূমিকার পরোক্ষ স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।লেবানন ও মার্কিন কর্মকর্তারাও মনে করছেন ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এই হামলা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্ত করা উচিত।অ্যামনেস্টির ডেপুটি ডিরেক্টর আয়া মাজজুব বলেছেন, “সাম্প্রতিক দিনগুলোতে লেবানন ও সিরিয়ায় গণ বিস্ফোরণগুলো একটি ভয়ঙ্কর ডিস্টোপিয়ান দুঃস্বপ্নের লক্ষণ বহন করছে। এত বড় আকারে দৈনন্দিন টেলিকমিউনিকেশন ডিভাইসের মধ্যে লুকানো বিস্ফোরক ব্যবহার করে মারাত্মক হামলা চালানো অভূতপূর্ব।”
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ একটি শেল কোম্পানির মাধ্যমে এই পেজারগুলো সরবরাহ করেছিল। হাঙ্গেরি ভিত্তিক BAC Consulting নামের এই কোম্পানি পেজারগুলোতে বিস্ফোরক লাগিয়ে লেবাননে পাঠিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল কয়েকটি উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছে:
১. হিজবুল্লাহ’র নেটওয়ার্ক ম্যাপিং: বিস্ফোরণের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ’র হাজার হাজার অজানা সদস্য ও তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা।
২. যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা: হিজবুল্লাহ’র যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে তাদের কার্যক্রম ব্যাহত করা।
৩. মনোবল ভেঙে দেওয়া: হিজবুল্লাহ’র নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা প্রমাণ করে তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া।
৪. বৃহত্তর অভিযানের প্রস্তুতি: এই হামলার মাধ্যমে লেবাননে একটি বড় সামরিক অভিযানের পথ প্রশস্ত করা।
৫. বিভ্রান্তি সৃষ্টি: পর পর দুদিনের হামলায় হিজবুল্লাহ ও লেবাননে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া।
এই হামলার পর লেবাননে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে তাদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ফেলে দিচ্ছেন বা পরীক্ষার জন্য দোকানে নিয়ে যাচ্ছেন। আমেরিকান হাসপাতালে লেবাননের সেনাবাহিনী একটি অ্যাম্বুলেন্সে পাওয়া অবিস্ফোরিত ডিভাইস নিরাপদে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এই হামলাকে “গণহত্যা” ও “যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “ইসরায়েল মাত্র দুই মিনিটে কমপক্ষে ৫,০০০ লোককে হত্যা করতে চেয়েছিল।” তিনি ইসরায়েলকে “ন্যায়সঙ্গত শাস্তি” দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, “যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু উত্তরের দিকে সরে যাচ্ছে – সেখানে সম্পদ বরাদ্দ করা হচ্ছে।” এটি লেবাননের বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযানের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজায় যুদ্ধ বিদ্ধস্ত শিশুদের করুণ পরিণতি: এক গভীর পর্যালোচনা
গাজায় যুদ্ধ বিদ্ধস্ত শিশুদের করুণ পরিণতি: এক গভীর পর্যালোচনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বিস্তার রোধে সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।তবে পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। ইসরায়েল পরবর্তীতে কী ধরনের হামলা চালাবে তা স্পষ্ট নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসরায়েল হিজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে আরও জটিল ও কৌশলগত হামলা চালাতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে সাইবার হামলা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে আক্রমণ বা হিজবুল্লাহ’র অর্থায়ন ব্যবস্থা বন্ধ করার চেষ্টা।
যেকোনো পরিস্থিতিতে, এই ঘটনা প্রমাণ করেছে যে আধুনিক যুদ্ধ কেবল সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ব্যবহার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।পরিশেষে বলা যায়, ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতের এই নতুন অধ্যায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অন্যথায় এই অঞ্চলে আরেকটি ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে।