২০২৪ সালের প্রথম ৭ মাসে বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। লেয়ফস.এফওয়াই নামক একটি স্বাধীন ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছে। বড় থেকে ছোট, প্রায় সব ধরনের প্রযুক্তি কোম্পানিই এই ছাঁটাইয়ের ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে।টেসলা, অ্যামাজন, গুগল, টিকটক, স্ন্যাপ এবং মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ২০২৪ সালের প্রথম কয়েক মাসে বড় আকারের ছাঁটাই করেছে।
এছাড়া অনেক ছোট স্টার্টআপও কর্মী সংখ্যা কমিয়েছে, এমনকি কিছু কোম্পানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।মাইক্রোসফট জানুয়ারিতে তাদের গেমিং ইউনিট থেকে ২,০০০ কর্মচারী ছাঁটাই করে। এরপর জুনে আরও ১,০০০ জনকে ছাঁটাই করা হয় ক্লাউড বিজনেস অ্যাজুর এবং HoloLens মিক্সড রিয়েলিটি বিভাগ থেকে। জুলাইতে তৃতীয় দফায় প্রোডাক্ট ও প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট পদে ছাঁটাই হয়।গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট ৬৩০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, হার্ডওয়্যার, বিজ্ঞাপন বিক্রয় এবং AR টিম থেকে। এপ্রিলে আরও ২০০ জনকে ছাঁটাই করা হয়।অ্যাপল মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়ায় ৬১৪ জন কর্মীকে ছাঁটাই করেছে।
অ্যামাজন বছরের শুরুতে প্রাইম ভিডিও ও টুইচ থেকে শত শত কর্মী ছাঁটাই করে। এপ্রিলে AWS থেকেও শত শত কর্মী ছাঁটাই করা হয়।টেসলা এপ্রিলে ঘোষণা করে যে তারা বিশ্বব্যাপী কর্মীদের ১০% ছাঁটাই করবে, যা ১৪,০০০ এরও বেশি কর্মীকে প্রভাবিত করতে পারে। ডেল কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি বিক্রয় ও মার্কেটিং বিভাগে ছাঁটাই করেছে। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এতে ১২,৫০০ কর্মী প্রভাবিত হতে পারে।চিপ নির্মাতা ইন্টেল আগস্টের শুরুতে ঘোষণা করে যে তারা ১৫,০০০ কর্মী ছাঁটাই করবে, যা তাদের মোট কর্মীর ১৫%। IBM মার্কেটিং ও যোগাযোগ দলে ছাঁটাই করেছে। সিসকো ফেব্রুয়ারিতে ৪,০০০ এর বেশি কর্মী ছাঁটাই করে এবং আগস্টে আরও ৬,০০০ কর্মী ছাঁটাই করার ঘোষণা দেয়।
জার্মান সফটওয়্যার কোম্পানি SAP জানুয়ারিতে জানায় যে তারা প্রায় ৮,০০০ পদ পুনর্গঠন করবে। ক্লাউড-ভিত্তিক সেবা প্রদানকারী সেলসফোর্স জানুয়ারিতে ৭০০ কর্মী ছাঁটাই করে এবং কয়েক মাস পর আরও ৩০০ জনকে ছাঁটাই করে।এই ছাঁটাইয়ের পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। অনেক কোম্পানি খরচ কমানোর জন্য এবং AI-তে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ছাঁটাই করছে। কিছু কোম্পানি মহামারীর সময় অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়ার কারণে এখন ছাঁটাই করছে। আবার কিছু কোম্পানি AI-তে পিছিয়ে পড়ার কারণে বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।এই ছাঁটাইয়ের ফলে লক্ষ লক্ষ কর্মী ও তাদের পরিবার আর্থিক ও মানসিক চাপের মধ্যে পড়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এর ফলে নতুন AI স্টার্টআপ তৈরি হবে, যেখানে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। World Economic Forum-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে AI ৯৭ মিলিয়ন নতুন চাকরি সৃষ্টি করতে পারে।তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ছাঁটাইয়ের এই ধারা ২০২৪ সালের বাকি সময়েও চলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে AI-এর দ্রুত বিকাশের ফলে নতুন ধরনের দক্ষতার চাহিদা বাড়বে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। কর্মীদের জন্য AI দক্ষতা অর্জন করা এবং নিজেদের দক্ষতা আপডেট রাখা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
কোম্পানি | ছাঁটাইকৃত কর্মীর সংখ্যা |
---|---|
মাইক্রোসফট | ৩,০০০+ |
গুগল | ৮৩০+ |
অ্যাপল | ৬১৪ |
অ্যামাজন | শত শত |
টেসলা | ১৪,০০০+ |
ডেল | ১২,৫০০ (অনুমান) |
ইন্টেল | ১৫,০০০ |
সিসকো | ১০,০০০+ |
SAP | ৮,০০০ |
সেলসফোর্স | ১,০০০ |
এই ছাঁটাইয়ের ঘটনা প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এটি একই সাথে নতুন সুযোগও সৃষ্টি করছে। কোম্পানিগুলো এখন AI ও অটোমেশনে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে নতুন ধরনের চাকরি সৃষ্টি করবে। কর্মীদের জন্য নিজেদের দক্ষতা আপডেট রাখা এবং নতুন প্রযুক্তি শেখা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।