Italy work visa requirements 2024 for Bangladesh: ইতালির ২০২৪ সালের কাজের ভিসা লটারি নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এই লটারিতে ৬ লক্ষেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে, যা সরকার নির্ধারিত ১.৩৬ লক্ষ কোটার চেয়ে অনেক বেশি। এই পরিস্থিতি ইতালির শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মীর চাহিদা এবং বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ সম্পর্কে নতুন করে আলোচনা তুলেছে।
ইতালির শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের চাহিদা
ইতালির অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে বর্তমানে তীব্র শ্রমিক সংকট চলছে। এই সংকট মেটাতে সরকার ক্রমাগত বিদেশি শ্রমিক আমদানির কোটা বাড়াচ্ছে। ২০২৪ সালে এই কোটা ১.৩৬ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বিভিন্ন খাতে চাহিদার পরিসংখ্যান
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী:
- মৌসুমি পর্যটন ও কৃষি খাতে ২,৬০,৯৫৩টি আবেদন
- নির্মাণ ও ব্যবসা খাতে ২,৫৩,৪৭৩টি আবেদন
- গৃহকর্মী ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৮৬,০৭৪টি আবেদন
এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, ইতালির শ্রমবাজারে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের কর্মীদের চাহিদা ব্যাপক।
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য সুখবর
ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্টোনিও আলেসান্দ্রো সম্প্রতি জানিয়েছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের কাজের ভিসা আবেদন দ্রুত প্রক্রিয়া করার জন্য কাজ করছে। এর জন্য রোম থেকে অতিরিক্ত কর্মী পাঠানো হয়েছে।
নতুন পদক্ষেপসমূহ
- ভিসা সেকশনের কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে
- পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া শুরু হয়েছে
- আগামী দুই মাসে বর্তমান ব্যাকলগের একটি বড় অংশ নিষ্পত্তি করা হবে
তবে রাষ্ট্রদূত সতর্ক করে দিয়েছেন যে, “নুলা ওস্তা” (কাজের অনুমতি) থাকলেও ভিসা পাওয়া নিশ্চিত নয়। দুর্নীতি এড়াতে এবং জাল দলিল সনাক্ত করতে বিশেষ যাচাই করা হয়।
অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, খরচ এবং সতর্কতা
২০২৪ সালের কাজের ভিসা কোটা
ইতালি সরকার ২০২৪ সালের জন্য মোট ১,৩৬,০০০ কাজের ভিসা ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে:
- ৯৩,৫৫০টি মৌসুমি কর্মীদের জন্য
- বাকিগুলো অন্যান্য খাতের জন্য বরাদ্দ
আবেদন প্রক্রিয়া
ইতালির কাজের ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। সাধারণত এই প্রক্রিয়া ২ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
প্রধান ধাপসমূহ
- পূর্ব-অনুমোদন: ইতালিয়ান হোস্ট কোম্পানি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনলাইনে “নুলা ওস্তা” আবেদন জমা দেবে।
- ভিসা আবেদন: “নুলা ওস্তা” পাওয়ার পর, কর্মী তার নিজ দেশের ইতালিয়ান দূতাবাসে কাজের ভিসার জন্য আবেদন করবেন।
- অবস্থান অনুমতি: ভিসা পেয়ে ইতালিতে পৌঁছানোর ৮ দিনের মধ্যে “পারমেসো দি সোজোর্নো” বা অবস্থান অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে।
- আঙুলের ছাপ: পুলিশ স্টেশনে নির্ধারিত সময়ে আঙুলের ছাপ দিতে হবে।
- অবস্থান অনুমতিপত্র সংগ্রহ: পুলিশ স্টেশন থেকে তৈরি হলে অবস্থান অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
সাম্প্রতিক পরিবর্তন ও সতর্কতা
ইতালি সরকার সম্প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে:
- জাল দলিলের কারণে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জন্য সব “নুলা ওস্তা” এর বৈধতা স্থগিত করা হয়েছে।
- এখন থেকে দূতাবাস শুধুমাত্র ইতালির প্রাদেশিক ইমিগ্রেশন অফিস (“স্পোর্টেলো উনিকো” – SUI) থেকে নিশ্চিতকরণ পাওয়ার পরই কাজের ভিসা ইস্যু করবে।
- যাচাই প্রক্রিয়া চলাকালীন আবেদনকারীদের পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইতালি সরকার ২০২৬ সাল নাগাদ বার্ষিক কাজের ভিসা কোটা ১,৬৫,০০০-এ উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তবে শিল্প সংগঠনগুলো মনে করছে এই সংখ্যাও অপ্রতুল।
ইতালির কাজের ভিসা ২০২৪ নিয়ে বাংলাদেশি আবেদনকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও, প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। সরকারের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আরও কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। তবে ইতালির শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মীর চাহিদা বাড়ছে, যা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ইতিবাচক সংকেত। আগামী দিনগুলোতে এই খাতে আরও সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশা করা যায়।
Indian Visa: চিকিৎসার ছাড়া বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা বন্ধ, হাজার হাজার আবেদন অপেক্ষমাণ
ইতালিতে কাজ করতে চাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য কাজের ভিসা আবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সফল হতে হলে কিছু অপরিহার্য ডকুমেন্ট প্রয়োজন। নিচে এই ডকুমেন্টগুলোর একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:
মূল ডকুমেন্টস
- বৈধ পাসপোর্ট: পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৩ মাস বেশি থাকতে হবে এবং কমপক্ষে দুটি খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
- স্বাক্ষরিত চাকরির চুক্তিপত্র: নিয়োগকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রের একটি কপি।
- নুলা ওস্তা (Nulla Osta): মূল নুলা ওস্তা এবং একটি অতিরিক্ত কপি।
- ভিসা আবেদন ফরম: সম্পূর্ণ পূরণকৃত ইতালিয়ান দীর্ঘমেয়াদি ভিসা আবেদন ফরম।
অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি: ইতালির ভিসা ফটো প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সাম্প্রতিক ছবি।
- আবাসনের প্রমাণ: ইতালিতে থাকার জায়গার প্রমাণপত্র।
- আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ: পর্যাপ্ত অর্থের যোগান আছে তার প্রমাণপত্র।
- শিক্ষাগত ও পেশাগত সার্টিফিকেট: প্রাসঙ্গিক ডিগ্রি, ডিপ্লোমা এবং অন্যান্য যোগ্যতার সনদপত্র।
- স্বাস্থ্য বীমা: ইতালিতে চিকিৎসা খরচ কভার করে এমন বীমার প্রমাণপত্র।
- ভ্রমণের প্রমাণ: নিশ্চিত করা টিকিট (বিমান/ফেরি/ট্রেন/বাস/ট্যাক্সি) যা শেনগেন সীমানা অতিক্রম এবং ইতালিতে প্রবেশ দেখায়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- ভিসা ফি প্রদানের প্রমাণ: ভিসা এবং সেবা ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র।
- S.U.I. লেটার: স্পোর্টেলো উনিকো পের ল’ইমিগ্রাজিওনে থেকে প্রাপ্ত অনুমোদন পত্র।
- বাসস্থানের প্রমাণ: সাম্প্রতিক ইউটিলিটি বিল, ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা টেলিফোন অ্যাকাউন্ট যাতে আবেদনকারীর নাম এবং ঠিকানা থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- সকল ডকুমেন্ট ইংরেজি বা ইতালিয়ান ভাষায় হতে হবে। অন্য ভাষায় থাকলে অফিসিয়াল অনুবাদ প্রয়োজন।
- ডকুমেন্টগুলোর মূল কপি এবং ফটোকপি উভয়ই নিয়ে যেতে হবে।
- আবেদন জমা দেওয়ার আগে সকল ডকুমেন্ট সঠিকভাবে সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অসম্পূর্ণ আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।
ইতালির কাজের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ইতালিয়ান দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা জেনে নেওয়া উচিত।
ইতালির ভিসা করতে খরচ: ২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্য
ইতালির ভিসা করতে বিভিন্ন ধরনের খরচ রয়েছে। ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে নতুন ফি কার্যকর হয়েছে। আসুন জেনে নেই বিভিন্ন ধরনের ভিসার জন্য কী পরিমাণ খরচ হতে পারে:
শেনগেন ভিসা ফি
- সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য: ৯০ ইউরো (প্রায় ৮,০৯০ টাকা)
- ৬-১২ বছর বয়সীদের জন্য: ৪৫ ইউরো (প্রায় ৪,০৫০ টাকা)
- ৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য: বিনামূল্যে
দীর্ঘমেয়াদী ভিসা ফি
- অধিকাংশ ক্ষেত্রে: ১১৬ ইউরো (প্রায় ১০,৩৬০ টাকা)
- শিক্ষা সংক্রান্ত ভিসা: ৫০ ইউরো (প্রায় ৪,৪৭০ টাকা)
অতিরিক্ত খরচ
- ভিএফএস সার্ভিস চার্জ: ৫৩১ টাকা
- কুরিয়ার সুবিধা: ৬৬৯ টাকা (প্রতি আবেদন)
- প্রিমিয়াম লাউঞ্জ সুবিধা: ২,৬৫৫ টাকা (প্রতি আবেদন)
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- ভিসা ফি পরিশোধ করতে হবে ‘VFS GLOBAL SERVICES PRIVATE LIMITED’ এর অনুকূলে।
- দিল্লি, চণ্ডীগড় ও জালন্ধরে নগদ টাকায় ফি পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।
- ভিসা প্রত্যাখ্যান হলে ফি ফেরত দেওয়া হয় না।
ইতালির ভিসা করতে এই খরচগুলো ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের খরচ যোগ হবে। তাই আগে থেকেই সব খরচের হিসাব করে রাখা ভালো।