অস্কারে বাংলা গান: ইমন চক্রবর্তীর ‘ইতি মা’ নিয়ে উচ্ছ্বাস

Iti maa Song by Iman Chakraborty Oscar Nomination: ২০২৫ সালের অস্কারের মনোনয়নে একটি বাংলা গান জায়গা করে নিয়েছে, যা বাঙালি সংগীত জগতের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পরিচালক ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়ের…

Sangita Chowdhury

 

Iti maa Song by Iman Chakraborty Oscar Nomination: ২০২৫ সালের অস্কারের মনোনয়নে একটি বাংলা গান জায়গা করে নিয়েছে, যা বাঙালি সংগীত জগতের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পরিচালক ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়ের ‘পুতুল’ ছবির জন্য গাওয়া ‘ইতি মা’ গানটি গেয়েছেন বিখ্যাত গায়িকা ইমন চক্রবর্তী। এই গানটি সেরা মৌলিক গান এবং সেরা মৌলিক আবহসঙ্গীত বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে, যা বাংলা সংগীতের জন্য এক অভূতপূর্ব সাফল্য।

ইমন চক্রবর্তীর এই অর্জন শুধু তাঁর নিজের জন্য নয়, সমগ্র বাঙালি সমাজের জন্যও গর্বের। এর আগে কোনো বাঙালি গায়িকা অস্কারের মনোনয়ন তালিকায় স্থান পাননি। লেডি গাগা, এড শিরান, মিলি সাইরাসের মতো বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের পাশাপাশি ইমনের নাম দেখা যাচ্ছে, যা বাংলা সংগীতের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন।’পুতুল’ ছবির এই বিশেষ গানটি গত ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছিল। মাত্র এক মাসের মধ্যেই এত বড় সাফল্য অর্জন করেছে, যা বাংলা চলচ্চিত্র ও সংগীত শিল্পের জন্য এক অভাবনীয় কৃতিত্ব। আগামী ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে প্রথম পর্বের নির্বাচন, যার ফলাফল প্রকাশ পাবে ১৭ ডিসেম্বর।

মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করা যেমন গর্বের তেমনি চাপের’শাস্ত্রীতে অভিনয় নিয়ে বললেন কোলাজ!

এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে একটি দক্ষ টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম। পরিচালক ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়, সুরকার সায়ন গাঙ্গুলি, গীতিকার অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং গায়িকা ইমন চক্রবর্তী – সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই গানটি তৈরি হয়েছে। অনির্বাণ ভট্টাচার্য নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই সাফল্যের খবর শেয়ার করে সমস্ত টিম মেম্বারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।ইমন চক্রবর্তীর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে সমগ্র বাঙালি সমাজ। বিশিষ্ট গায়িকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমন, সায়ন এবং ‘পুতুল’-এর গোটা টিমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “বাঙালি হিসেবে আমাদের আরও গর্বিত করে তুলেছেন আপনারা। দারুণ কাজ, দারুণ সব মানুষ।”

লেখিকা শ্রীময়ী কুণ্ডুও নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ইমনের সঙ্গে ছবি শেয়ার করে তাকে এই মনোনয়নের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে এর মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে আরও বেশি করে বাংলা গান পৌঁছে যাবে।এই ঘটনা শুধু ইমন চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি সমগ্র বাংলা সংগীত জগতের জন্য এক মাইলফলক। এর আগে ২০২৩ সালে ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’ নামে একটি ভারতীয় ডকুমেন্টারি অস্কার জিতেছিল, যেখানে সঞ্চারী দাস মল্লিক প্রথম বাঙালি হিসেবে অস্কার জয়ী টিমের অংশ ছিলেন।

কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো একটি বাংলা গান সরাসরি অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছে।বাংলা সংগীতের এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অনেক দিন ধরেই প্রতীক্ষিত ছিল। অতুলপ্রসাদ সেন থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে – এমন অনেক প্রতিভাবান শিল্পী বাংলা সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন।

ইমন চক্রবর্তীর এই সাফল্য সেই ঐতিহ্যকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।’ইতি মা’ গানটি শুধু একটি গান নয়, এটি বাংলা সংস্কৃতি ও ভাবের প্রতিনিধিত্ব করছে বিশ্ব দরবারে। এই গানের মাধ্যমে বাঙালি মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা এবং আবেগ বিশ্বের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এটি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য এক অনন্য সুযোগ, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরবে।ইমন চক্রবর্তীর এই সাফল্য শুধু তাঁর একার নয়, এটি সমগ্র বাংলা সংগীত শিল্পের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এর ফলে আরও অনেক প্রতিভাবান শিল্পী অনুপ্রাণিত হবেন এবং আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার জন্য উৎসাহিত হবেন। এটি বাংলা সংগীতের ভবিষ্যতের জন্য এক ইতিবাচক ইঙ্গিত।তবে এই সাফল্যের সাথে সাথে দায়িত্বও বেড়েছে। এখন বিশ্বের দৃষ্টি বাংলা সংগীতের দিকে। আমাদের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরও উন্নত মানের সংগীত সৃষ্টি করতে হবে। সাথে সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকেও ধরে রাখতে হবে।

এশিয়ার ১০টি দেশের জাতীয় সংগীত: যা আপনি জানতেন না!

‘ইতি মা’ গানের এই সাফল্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভাষা ও সীমানা কোনো বাধা নয়। যদি গানের ভাব ও সুর মানুষের হৃদয় ছুঁতে পারে, তাহলে তা বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেতে পারে। এটি আমাদের আরও বেশি করে আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।শেষ পর্যন্ত, ইমন চক্রবর্তী ও ‘পুতুল’ টিমের এই অর্জন শুধু বাংলা সংগীতের নয়, সমগ্র ভারতীয় সংগীত জগতের জন্যও গর্বের। এটি প্রমাণ করে যে আমাদের দেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে সমান মর্যাদা পেতে পারে। আশা করা যায়, এই সাফল্য আরও অনেক ভারতীয় শিল্পীকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের প্রতিভা দেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত করবে।অস্কারের চূড়ান্ত অনুষ্ঠান হবে আগামী ৩ মার্চ লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে। সেদিন সমগ্র বাঙালি সমাজ আশা নিয়ে থাকবে যে ‘ইতি মা’ গানটি অস্কার জিতে ইতিহাস রচনা করবে। যদিও ইমন চক্রবর্তী জানিয়েছেন যে তিনি এতটা প্রত্যাশা করেন না, তবুও এই মনোনয়নই তাঁর ও সমগ্র টিমের জন্য এক বিরাট সম্মান।

এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারি। ইমন চক্রবর্তী ও ‘পুতুল’ টিমের সাফল্য আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এটি প্রমাণ করে যে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান করে আমরা বিশ্ব দরবারে নিজেদের স্থান করে নিতে পারি।বাংলা সংগীতের এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের গর্বিত করে তোলে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কত সমৃদ্ধ এবং বিশ্বের দরবারে তার মূল্য কতটা। 

About Author