Jagadhatri Puja Festival Guide: জগদ্ধাত্রী পূজা বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মা জগদ্ধাত্রীর আশীর্বাদ লাভের জন্য ভক্তরা বিশেষ পূজা পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এই নিবন্ধে আমরা জগদ্ধাত্রী পূজার বিস্তারিত পদ্ধতি ও ফর্দমালা সম্পর্কে জানব।
জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য
জগদ্ধাত্রী শব্দের অর্থ হল জগতের ধারণকারিণী। তিনি মা দুর্গারই এক রূপ। পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুর বধের পর দেবতারা অহংকারী হয়ে উঠলে মা দুর্গা তাদের অহংকার চূর্ণ করার জন্য জগদ্ধাত্রী রূপে আবির্ভূত হন।১৮ শতকে নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রথম জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন করেন। তারপর থেকে বাংলার বিভিন্ন জেলায় এই পূজা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে চন্দননগর, কৃষ্ণনগর, চাঁদপাড়া প্রভৃতি স্থানে জগদ্ধাত্রী পূজা খুব জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়।
জগদ্ধাত্রী পূজার তারিখ ও সময়
২০২৪ সালে জগদ্ধাত্রী পূজার তারিখগুলি হল:
- অষ্টমী: ২০ নভেম্বর, ২০২৪ (বুধবার)
- নবমী: ২১ নভেম্বর, ২০২৪ (বৃহস্পতিবার)
- দশমী: ২২ নভেম্বর, ২০২৪ (শুক্রবার)
সাধারণত অষ্টমী তিথিতে পূজা শুরু হয় এবং দশমী তিথিতে বিসর্জন দেওয়া হয়।
দুর্গাপুজো ২০২৪: কলা বউ কি সত্যিই গণেশের বউ? জানলে অবাক হবেন আসল রহস্য!
জগদ্ধাত্রী পূজার পদ্ধতি
জগদ্ধাত্রী পূজার পদ্ধতি দুর্গা পূজার অনুরূপ। তবে কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে:
পূজার প্রস্তুতি
- পূজার আগের দিন সন্ধ্যায় কলাবউ স্নান করানো হয়
- পূজার দিন সকালে স্নান সেরে পূজারী শুদ্ধ হন
- মণ্ডপ ও প্রতিমা সাজানো হয়
বোধন
- অষ্টমী তিথিতে বোধন অনুষ্ঠান করা হয়
- নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়
- মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়
প্রধান পূজা
- নবমী তিথিতে প্রধান পূজা অনুষ্ঠিত হয়
- সকালে স্নান, ধ্যান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়
- ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়
- পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়
- আরতি করা হয়
- ভোগ নিবেদন করা হয়
বিসর্জন
- দশমী তিথিতে বিসর্জন অনুষ্ঠান হয়
- প্রতিমা নদী বা জলাশয়ে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়
জগদ্ধাত্রী পূজার ফর্দমালা
জগদ্ধাত্রী পূজার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা:
পূজার উপকরণ
- প্রতিমা
- আসন
- ঘট
- প্রদীপ
- ধূপ-ধুনা
- চন্দন
- সিঁদুর
- কুমকুম
- অক্ষত
- পুষ্প
- তুলসী পাতা
- বেলপাতা
- দূর্বা
- নৈবেদ্য
- ফল
- মিষ্টি
- পানীয় জল
পূজার বস্ত্র ও অলংকার
- লাল শাড়ি
- গহনা (মুকুট, হার, চুড়ি ইত্যাদি)
- উপবীত
অন্যান্য সামগ্রী
- শঙ্খ
- ঘণ্টা
- কাঁসর
- ঢাক-ঢোল
- আরতির থালা
- ফুলের মালা
- প্রসাদের বাটি
জগদ্ধাত্রী পূজার মন্ত্র
জগদ্ধাত্রী পূজার সময় নিম্নলিখিত মন্ত্র জপ করা হয়:
ওঁ হ্রীং শ্রীং ক্লীং জগদ্ধাত্র্যৈ নমঃ
এছাড়া চণ্ডী পাঠ ও দেবী সূক্ত পাঠ করা হয়।
জগদ্ধাত্রী পূজার বিশেষত্ব
জগদ্ধাত্রী পূজার কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য:
- মা জগদ্ধাত্রীর প্রতিমা সিংহবাহিনী ও চতুর্ভুজা
- হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ ধারণ করেন
- লাল বস্ত্র পরিহিতা ও অলংকার ভূষিতা
- মৃত হস্তীর উপর দাঁড়িয়ে থাকেন
- শোলার সাজ ও চালচিত্র দিয়ে প্রতিমা সাজানো হয়
জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলিত স্থান
জগদ্ধাত্রী পূজা মূলত পশ্চিমবঙ্গের নিম্নলিখিত স্থানগুলিতে জনপ্রিয়:
- চন্দননগর (হুগলি জেলা)
- কৃষ্ণনগর (নদীয়া জেলা)
- চাঁদপাড়া (উত্তর ২৪ পরগনা)
- ঈশ্বরীপুর (২৪ পরগনা)
- বহরমপুর (মুর্শিদাবাদ জেলা)
এছাড়া কলকাতা, হাওড়া প্রভৃতি শহরেও জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
বিসর্জনে বিদায়ের সুর: মা দুর্গার আগমনী বার্তা আসছে বছরের জন্য
জগদ্ধাত্রী পূজার সামাজিক প্রভাব
জগদ্ধাত্রী পূজা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই নয়, এর সামাজিক প্রভাবও যথেষ্ট:
- সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়
- স্থানীয় শিল্প ও ব্যবসার উন্নতি হয়
- সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়
- পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটে
- যুব সমাজের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়
জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এই পূজার মাধ্যমে ভক্তরা মা জগদ্ধাত্রীর আশীর্বাদ কামনা করেন। পূজা পদ্ধতি ও ফর্দমালা মেনে এই উৎসব পালন করলে মায়ের কৃপা লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই পূজায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।