James Anderson Retirement News 2024: জেমস অ্যান্ডারসনের টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণের এক যুগের অবসান ঘটল। গত ১২ জুলাই, ২০২৪ তারিখে লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের পর এই ঘোষণা আসে। ৪১ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন তাঁর ২১ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৭০৪টি উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হিসেবে অবসর নিলেন।
অ্যান্ডারসনের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ড এক ইনিংস ও ১১৪ রানে জয়লাভ করে। এই ম্যাচে তিনি মোট ৪টি উইকেট নেন। যদিও শেষ বলে একটি ক্যাচ ফেলে ফেলায় পাঁচ উইকেট নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে দলের জয়ের সাথে সাথে নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানতে পেরে তিনি সন্তুষ্ট।
অ্যান্ডারসনের অবসরের সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করে নেওয়া হয়নি। গত মাসে ম্যানচেস্টারের একটি হোটেলে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রব কি, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবং অধিনায়ক বেন স্টোকস অ্যান্ডারসনের সাথে ৯০ মিনিটের এক বৈঠকে মিলিত হন। সেখানেই তাঁরা অ্যান্ডারসনকে জানান যে এখন নতুন অধ্যায় শুরু করার সময় এসেছে।
Zimbabwe vs India: বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পতন: জিম্বাবুয়ের মাটিতে ভারতের অপ্রত্যাশিত হার!
অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান অসাধারণ। তিনি ১৮৮টি টেস্টে ৭০৪টি উইকেট নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ৩২টি পাঁচ উইকেট ও ৩টি দশ উইকেটের সংগ্রহ। তাঁর বোলিং গড় ২৬.৪৫ এবং স্ট্রাইক রেট ৫৬.৮। সর্বোচ্চ বোলিং ফিগার ৭/৪২।
তিনি পেস বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ স্টুয়ার্ট ব্রড, যিনি ৬০৪টি উইকেট নিয়ে অবসর নিয়েছেন। অ্যান্ডারসন উইকেটকিপারের হাতে সর্বাধিক ক্যাচ করানো বোলার (২৪৯টি) এবং সর্বমোট সর্বাধিক ক্যাচ করানো বোলার (৪৬৭টি)।
অ্যান্ডারসনের অবসরের পর ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণে অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে রব কি নতুন প্রজন্মের বোলারদের নিয়ে আশাবাদী। ক্রিস ওকস, মার্ক উড, গাস অ্যাটকিনসন, ব্রাইডন কার্স, ম্যাথিউ পটস, জোশ টাং, ওলি রবিনসন প্রমুখ তরুণ পেসারদের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি।
অবসরের পর অ্যান্ডারসন ইংল্যান্ড দলের কোচিং স্টাফে যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে। তিনি ফাস্ট বোলিং মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এর মাধ্যমে তাঁর বিশাল অভিজ্ঞতা নতুন প্রজন্মের বোলারদের কাজে লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অ্যান্ডারসনের অবসরে ক্রিকেট বিশ্বের বিভিন্ন তারকা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম লিখেছেন, “আপনার সুইং মোকাবিলা করা একটা সৌভাগ্যের বিষয় ছিল, জিমি! এই সুন্দর খেলাটি এখন তার সেরা খেলোয়াড়দের একজনকে হারাবে। খেলার প্রতি আপনার অবিশ্বাস্য অবদান চমৎকার ছিল। আপনার প্রতি বিশাল শ্রদ্ধা, গোট!”
অ্যান্ডারসন নিজেও তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “এটা একটা অবিশ্বাস্য ২০ বছর ছিল। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমি অভিভূত। প্রতিবার যখন এই জার্সি পরেছি, তখন ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচ জেতার চেষ্টা করেছি। এটা আলাদা ছিল। আবেগ ওঠানামা করছিল। প্রথম দিনে আমার মেয়েদের ঘণ্টা বাজাতে দেখা। এটা একটা অসাধারণ ২০ বছর ছিল।”
জেমস অ্যান্ডারসনের দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। তাঁর ক্যারিয়ারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত নিচে তুলে ধরা হলো:
জেমস অ্যান্ডারসনের দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। তাঁর ক্যারিয়ারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত নিচে তুলে ধরা হলো:
১. প্রথম টেস্ট উইকেট (২০০৩):
মে ২০০৩ সালে লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে অ্যান্ডারসন তাঁর প্রথম উইকেট নেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি মার্ক ভারমিউলেনকে বোল্ড করে এই অর্জন করেন।
২. অ্যাশেজে অসাধারণ পারফরম্যান্স (২০১০-১১):
২০১০-১১ সালের অ্যাশেজ সিরিজে অ্যান্ডারসন ২৪টি উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের ৩-১ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অ্যাডিলেডে তিনি রিকি পন্টিং ও মাইকেল ক্লার্ককে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে ২/৩-এ নামিয়ে আনেন।
৩. সচিন তেন্ডুলকারকে আউট (২০১২):
২০১২ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে স্পিনার-বান্ধব উইকেটে অ্যান্ডারসন সচিন তেন্ডুলকারকে আউট করেন। এই সিরিজে ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয়।
৪. ট্রেন্ট ব্রিজে দশ উইকেট (২০১৩):
২০১৩ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যান্ডারসন ১০ উইকেট নেন। এই ম্যাচে তিনি মাইকেল ক্লার্ককে একটি চমৎকার ডেলিভারিতে বোল্ড করেন।
৫. গ্লেন ম্যাকগ্রার রেকর্ড ভাঙা (২০১৮):
২০১৮ সালে কিয়া ওভালে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে মোহাম্মদ শামিকে আউট করে অ্যান্ডারসন গ্লেন ম্যাকগ্রার রেকর্ড ভেঙে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারি পেস বোলার হন।
৬. ৭০০ টেস্ট উইকেট (২০২৪):
মার্চ ২০২৪-এ অ্যান্ডারসন ৭০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন। তিনি প্রথম পেস বোলার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
৭. শেষ টেস্ট (২০২৪):
জুলাই ২০২৪-এ লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্ডারসন তাঁর শেষ টেস্ট খেলেন। এই ম্যাচে তিনি ৪টি উইকেট নিয়ে ৭০৪ উইকেট নিয়ে অবসর নেন।
জেমস অ্যান্ডারসনের দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অনেকগুলি স্মরণীয় বোলিং পারফরম্যান্স রয়েছে। তবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বোলিং পারফরম্যান্স নিম্নরূপ:
১. ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭/৪২ (সেপ্টেম্বর ২০১৭, লর্ডস):
এই ম্যাচে অ্যান্ডারসন তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার অর্জন করেন। এই পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি ৫০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক অতিক্রম করেন।
২. নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭/৪৩ (জুন ২০০৮, নটিংহাম):
ট্রেন্ট ব্রিজে অ্যান্ডারসন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করে দেন। এই পারফরম্যান্স তার প্রথম দিকের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা।
৩. পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬/১৭ (জুলাই ২০১০, ট্রেন্ট ব্রিজ):
এটি অ্যান্ডারসনের সবচেয়ে কম রানে ৬ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। তিনি মাত্র ১৫ ওভারে এই অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান।
৪. শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬/৪০ (জানুয়ারি ২০২১, গাল্লে):
বিদেশের মাটিতে অ্যান্ডারসনের সেরা বোলিং ফিগার। স্পিনার-বান্ধব পিচে তিনি এই অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান।
৫. ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬/৪২ (মে ২০১৫, ব্রিজটাউন):
বার্বাডোসের গরম আবহাওয়ায় অ্যান্ডারসন তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই চমৎকার পারফরম্যান্স দেখান।
অ্যান্ডারসনের অবসরের মধ্য দিয়ে শুধু ইংল্যান্ড নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের এক যুগের অবসান ঘটল। তাঁর দক্ষতা, দীর্ঘায়িত ক্যারিয়ার এবং খেলার প্রতি নিষ্ঠা আগামী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। যদিও তাঁর জায়গা পূরণ করা কঠিন হবে, তবে তিনি যে ঐতিহ্য রেখে গেলেন তা ইংল্যান্ড ক্রিকেটকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
মন্তব্য করুন