জন ধন যোজনার বর্তমান অবস্থা
PMJDY প্রকল্পটি ২০১৪ সালে চালু হওয়ার পর থেকে ভারতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের অধীনে খোলা অনেক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ও জমার পরিমাণ
- মোট নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা: ১১.৩০ কোটি
- নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণ: ১৪,৭৫০ কোটি টাকা (২০ নভেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত)
এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জন ধন অ্যাকাউন্ট নিয়মিত ব্যবহার হচ্ছে না, যা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করছে।
নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের কারণ ও প্রভাব
জন ধন অ্যাকাউন্টগুলি নিষ্ক্রিয় হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:
- সচেতনতার অভাব: অনেক অ্যাকাউন্টধারী তাদের অ্যাকাউন্টের সুবিধা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত নন।
- ডিজিটাল সাক্ষরতার কমতি: গ্রামীণ এলাকায় ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবহারে অসুবিধা।
- আয়ের অভাব: নিয়মিত আয় না থাকায় অ্যাকাউন্টে লেনদেন কম।
- ব্যাংক শাখার দূরত্ব: অনেক এলাকায় ব্যাংক শাখা দূরে থাকায় নিয়মিত যাতায়াতে অসুবিধা।
এই নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলি প্রকল্পের সামগ্রিক সাফল্যকে প্রভাবিত করছে। যদিও মোট ৫৪.০৩ কোটি জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ২০% অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় থাকায় প্রকৃত আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারের উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সরকার এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে:
- সচেতনতা বৃদ্ধি: স্থানীয় স্তরে ক্যাম্প আয়োজন করে ভালো ব্যাংকিং অভ্যাসের গুরুত্ব বোঝানো হচ্ছে।
- ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রচার: মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
- আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি: অ্যাকাউন্টধারীদের আর্থিক পরিকল্পনা ও সঞ্চয়ের গুরুত্ব শেখানো হচ্ছে।
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: ব্যাংকগুলিকে নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমানোর জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগগুলির ফলে ইতিমধ্যে কিছু সাফল্য দেখা গেছে। ২০১৭ সালের মার্চে যেখানে ৪০% অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় ছিল, ২০২৩ সালের নভেম্বরে তা কমে ২০% হয়েছে।
জন ধন যোজনার সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ
PMJDY প্রকল্প শুরু হওয়ার ১০ বছর পর, এর সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই স্পষ্ট:
সাফল্য:
- মোট ৫৩ কোটিরও বেশি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
- ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট জমার পরিমাণ ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
- গড় জমার পরিমাণ ২০১৫ সালের ১,০৭৬ টাকা থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ৪,২৭৯ টাকা হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ:
- প্রায় ২০% অ্যাকাউন্ট এখনও নিষ্ক্রিয়।
- নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণ মোট জমার ৬.১২% ।
- প্রায় ৮% অ্যাকাউন্টে কোনো জমা নেই।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও সুপারিশ
জন ধন যোজনার সাফল্য আরও বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- স্থানীয় ভাষায় আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচি বাড়ানো।
- মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন আরও সহজ ও ব্যবহারযোগ্য করা।
- গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিং প্রতিনিধি নিয়োগ বাড়ানো।
- নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টধারীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সমস্যা বোঝা ও সমাধান করা।
- ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ প্রোত্সাহনা দেওয়া যাতে তারা নিয়মিত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে।
প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা ভারতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যদিও ১১.৩০ কোটি অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হওয়া একটি উদ্বেগের বিষয়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে প্রকল্পটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারের নতুন উদ্যোগ ও নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আশা করা যায় আগামী দিনে আরও বেশি মানুষ নিয়মিত ব্যাংকিং সেবার সুবিধা পাবেন। তবে এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার, ব্যাংক ও নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রসারের মাধ্যমে জন ধন যোজনার সাফল্য আরও বাড়ানো সম্ভব, যা শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।