JBL Tune Beam 2 review: অডিও প্রযুক্তির জগতে JBL একটি বিশ্বস্ত নাম। তাদের সর্বশেষ সংযোজন JBL Tune Beam 2 ইয়ারবাডস বাজারে এসেছে এমন কিছু ফিচার নিয়ে যা সাধারণত দামি পণ্যগুলোতে পাওয়া যায়। মাত্র ৫,৪৯৯ টাকার মধ্যে এই ইয়ারবাডস অ্যাডাপটিভ নয়েজ ক্যান্সেলেশন, ৪৮ ঘণ্টার ব্যাটারি লাইফ, এবং JBL এর সিগনেচার পিওর বেস সাউন্ড অফার করছে। আজকের এই বিস্তারিত পর্যালোচনায় আমরা দেখব কেন JBL Tune Beam 2 বাজেট সেগমেন্টে একটি আকর্ষণীয় অপশন হতে পারে।
ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি
JBL Tune Beam 2 এর ডিজাইনে আধুনিকতা এবং সরলতার সুন্দর মিশ্রণ রয়েছে। ইয়ারবাডসগুলো শর্ট-স্টেম ডিজাইনের সাথে আসে যা আজকালকার TWS ইয়ারবাডসের একটি জনপ্রিয় স্টাইল। ম্যাট ফিনিশ এবং টাচ প্যানেলে চকচকে অ্যাকসেন্ট ডিজাইনটিকে একইসাথে স্টাইলিশ এবং ফাংশনাল করে তুলেছে।
এর্গোনমিক এবং লাইটওয়েট ডিজাইনের কারণে দীর্ঘ সময় ব্যবহারেও কোনো অস্বস্তি হয় না। বিভিন্ন সাইজের সিলিকন ইয়ার টিপস সাথে থাকায় প্রায় সব ধরনের কানের জন্য পারফেক্ট ফিট পাওয়া যায়। এটি শুধু আরামদায়ক নয়, বরং প্যাসিভ নয়েজ আইসোলেশন এবং অপটিমাল সাউন্ড কোয়ালিটির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল IP54 রেটিং যা ধুলো এবং পানির ছিটা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এর মানে হল আপনি ওয়ার্কআউট, দৌড়ানো বা বৃষ্টির দিনেও নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
সাউন্ড পারফরমেন্স এবং অডিও ফিচার
JBL Tune Beam 2 এর হৃদয়ে রয়েছে ১০ মিমি ডায়নামিক ড্রাইভার যা JBL এর সিগনেচার পিওর বেস সাউন্ড ডেলিভার করে। বক্স থেকে বের করার সাথে সাথেই আপনি এর গভীর এবং শক্তিশালী বেসের পূর্ণতা অনুভব করবেন। যারা বেস এনথুসিয়াস্ট তারা এই সাউন্ড প্রোফাইলে অবশ্যই সন্তুষ্ট হবেন।
মিড-রেঞ্জ ক্লিয়ার এবং আর্টিকুলেট থাকে, যার ফলে ভোকাল, পডকাস্ট এবং অ্যাকুস্টিক ট্র্যাকগুলো স্পষ্ট এবং উপস্থিত মনে হয়। ট্রেবলটি যথেষ্ট সংযমের সাথে হ্যান্ডেল করা হয়েছে যাতে কোনো কর্কশ শব্দ না আসে, তবে যথেষ্ট উজ্জ্বলতা রয়েছে যা সাউন্ডকে বাতাসের মতো খোলামেলা রাখে।
স্পেশাল অডিও ফিচার হিসেবে JBL Spatial Sound রয়েছে যা স্টেরিও সাউন্ডকে আরও ইমার্সিভ এক্সপেরিয়েন্সে রূপান্তরিত করে। তিনটি মোড রয়েছে – মুভি, মিউজিক এবং গেমিং। প্রতিটি মোড নিজস্ব পরিবেশের জন্য অপটিমাইজ করা।
নয়েজ ক্যান্সেলেশন এবং কল কোয়ালিটি
অ্যাডাপটিভ নয়েজ ক্যান্সেলেশন (ANC) JBL Tune Beam 2 এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এই প্রযুক্তি আপনার চারপাশের পরিবেশ অনুযায়ী নয়েজ ক্যান্সেলেশনের মাত্রা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করে। ব্যস্ত রাস্তা, লোকাল ট্রেন বা অফিসের শোরগোলে প্রায় ৮০-৯০% বাইরের শব্দ কেটে ফেলতে পারে।
স্মার্ট অ্যাম্বিয়েন্ট ফিচার দিয়ে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কতটুকু বাইরের শব্দ শুনতে চান। অ্যাম্বিয়েন্ট অ্যাওয়ার মোড বাইরের পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করে, আর টকথ্রু মোড ইয়ারবাড খোলা ছাড়াই কথোপকথনে অংশ নিতে দেয়।
কল কোয়ালিটির ক্ষেত্রে ছয়টি মাইক্রোফোন একটি অসাধারণ পারফরমেন্স প্রদান করে। দুইটি বিমফর্মিং বাইরের মাইক প্রতিটি ইয়ারবাডে আপনার কণ্ঠস্বর তুলে ধরে এবং একটি ভেতরের মাইক নয়েজ আইসোলেট করে। এনভায়রনমেন্টাল নয়েজ ক্যান্সেলেশন এবং ইকো সাপ্রেশন অ্যালগরিদম বাতাসের দিনেও ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ভয়েস এনশিওর করে।
ব্যাটারি লাইফ এবং কানেক্টিভিটি
ব্যাটারি পারফরমেন্সে JBL Tune Beam 2 সত্যিই চিত্তাকর্ষক। ANC অন রেখে ৮ ঘণ্টা এবং ANC অফ রেখে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত একনাগাড়ে ব্যবহার করা যায়। চার্জিং কেসের সাথে মিলিয়ে মোট ৪৮ ঘণ্টার প্লেব্যাক টাইম পাওয়া যায়।
ফাস্ট চার্জিং ফিচার অত্যন্ত কার্যকর – মাত্র ১০ মিনিট চার্জেই ২ ঘণ্টা মিউজিক প্লেব্যাক পাওয়া যায়। সম্পূর্ণ চার্জ হতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা।
কানেক্টিভিটির দিক থেকে ব্লুটুথ ৫.৩ একটি স্ট্যাবল এবং এফিশিয়েন্ট কানেকশন নিশ্চিত করে। মাল্টি-পয়েন্ট কানেকশন ফিচার দিয়ে একসাথে দুইটি ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকা এবং সহজেই সুইচ করা যায়। গুগলের ফাস্ট পেয়ার সাপোর্ট অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের সাথে তাৎক্ষণিক পেয়ারিং এনাবল করে।
JBL Headphones অ্যাপ এবং ফিচার
JBL Tune Beam 2 এর সাথে আসা JBL Headphones অ্যাপটি সত্যিকারের একটি ক্লাস অ্যাক্ট। অ্যাপটি খুলে আপনি অরেঞ্জ কালারের একটি হোম স্ক্রিন দেখবেন যা বিভিন্ন ইউটিলিটিতে ভর্তি।
Personi-Fi 3.0 ফিচার আপনার শ্রবণ প্রোফাইল অনুযায়ী সাউন্ড পার্সোনালাইজ করে। ১০-ব্যান্ড ম্যানুয়াল EQ এর সাথে ছয়টি প্রিসেট রয়েছে যা বিভিন্ন জেনারের জন্য অপটিমাইজড। আপনি যে EQ কার্ভ তৈরি করবেন তা বিভিন্ন ডিভাইসে সেভ থাকবে।
অ্যাপে আরও রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল কাস্টমাইজেশন, ভয়েস সেটিংস, ম্যাক্স ভলিউম লিমিটার, রিলাক্সিং সাউন্ডস (আগুন, ঢেউ, বন, নদী ইত্যাদি) টাইমার সহ, ফাইন্ড মাই বাডস, এবং অ্যাপ থেকেই পাওয়ার অফ করার সুবিধা।
দাম এবং ভারতে প্রাপ্যতা
ভারতীয় বাজারে JBL Tune Beam 2 এর দাম ৫,৪৯৯ টাকা। এটি ব্ল্যাক, হোয়াইট, এবং টারকয়েজ কালারে পাওয়া যাচ্ছে। কিছু রিটেইলারে ব্লু ভেরিয়েন্ট ৫,৯৯৯ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন স্টোরে পণ্যটি পাওয়া যাচ্ছে। প্রায়ই বিভিন্ন অফার এবং ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় যা দামটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। বর্তমানে কিছু জায়গায় ৫০% পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাচ্ছে।
সুবিধা এবং অসুবিধা
সুবিধাসমূহ:
- চমৎকার সাউন্ড কোয়ালিটি এবং শক্তিশালী বেস
- কার্যকর অ্যাডাপটিভ নয়েজ ক্যান্সেলেশন
- দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ (৪৮ ঘণ্টা মোট)
- কম্প্রিহেনসিভ JBL Headphones অ্যাপ
- IP54 ওয়াটার এবং ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স
- মাল্টি-পয়েন্ট কানেক্টিভিটি
- ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট
অসুবিধাসমূহ:
- স্পেশাল অডিও ইমপ্রেসিভ নয়
- iOS ডিভাইসে কখনো কখনো কল কানেক্টিভিটি ইস্যু
- ট্রান্সপ্যারেন্সি মোড প্রিমিয়াম প্রোডাক্টের মতো ন্যাচারাল নয়
- কেসের প্লাস্টিক ফিনিশ আরও গ্রিপি হতে পারত
JBL Tune Beam 2 বাজেট TWS ইয়ারবাডসের জগতে একটি চমৎকার সংযোজন। ৫,৪৯৯ টাকার মধ্যে এটি যে ফিচার এবং পারফরমেন্স অফার করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। শক্তিশালী বেস, কার্যকর নয়েজ ক্যান্সেলেশন, দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ, এবং বিস্তৃত কাস্টমাইজেশন অপশনের সমন্বয়ে এটি অনেক দামি প্রতিযোগীদের চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম।
যারা সাউন্ড কোয়ালিটি, ফিচার রিচনেস এবং ভ্যালু ফর মানির সন্ধানে আছেন, তাদের জন্য JBL Tune Beam 2 একটি জোরালো সুপারিশ। এটি প্রমাণ করে যে ভালো অডিও অভিজ্ঞতার জন্য অগাধ অর্থ খরচ করার প্রয়োজন নেই।