Jeshoreshwari Kali Temple Crown Theft in Bangladesh: বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার যশোরেশ্বরী কালী মন্দির থেকে একটি মূল্যবান মুকুট চুরি হয়ে গেছে। এই মুকুটটি ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্তৃক উপহার দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে ২.৩০টার মধ্যে, যখন মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জি দৈনিক পূজা শেষ করে চলে যান। পরিষ্কার কর্মীরা পরে দেখতে পান যে দেবীর মাথা থেকে মুকুটটি অদৃশ্য হয়ে গেছে। শ্যামনগর থানার পরিদর্শক তৈজুল ইসলাম জানিয়েছেন, “আমরা চোরকে সনাক্ত করতে মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছি”।
চুরি হওয়া মুকুটটি রূপা দিয়ে তৈরি এবং সোনার প্লেটিং করা ছিল। এটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২১ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফরকালে যশোরেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন। সেদিন তিনি প্রতীকী ভাবে দেবীর মাথায় মুকুটটি পরিয়ে দেন।
রাম মন্দির ইস্যু নিয়ে ভোট টানতে ব্যর্থ বিজেপি [রাজনৈতিক বিশ্লেষণ]
যশোরেশ্বরী কালী মন্দির হিন্দু ধর্মের ৫১টি শক্তিপীঠের একটি[2]। এটি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, এখানে দেবী সতীর হাতের তালু ও পায়ের পাতা পড়েছিল এবং দেবী যশোরেশ্বরী রূপে এখানে বিরাজমান।
মন্দিরটির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। ১২ শতকের শেষের দিকে আনারি নামে এক ব্রাহ্মণ এই মন্দির নির্মাণ করেন। তিনি যশোরেশ্বরী পীঠের জন্য ১০০টি দরজা বিশিষ্ট একটি মন্দির তৈরি করেন। পরবর্তীতে ১৩ শতকে লক্ষ্মণ সেন এবং ১৬ শতকে রাজা প্রতাপাদিত্য মন্দিরটি সংস্কার করেন।
এই ঘটনায় ভারত সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের হাই কমিশন ঢাকায় একটি বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে (সাতক্ষীরা) প্রধানমন্ত্রী মোদি কর্তৃক ২০২১ সালে উপহার দেওয়া মুকুট চুরির খবর দেখেছি। আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং বাংলাদেশ সরকারকে চুরির তদন্ত করতে, মুকুট উদ্ধার করতে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি”।
এই ঘটনাটি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মন্দিরের পরিচালনা পরিবারের সদস্য জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশি মিডিয়াকে জানিয়েছেন যে চুরি হওয়া মুকুটটি রূপার তৈরি এবং সোনার প্লেটিং করা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী মোদির ২০২১ সালের বাংলাদেশ সফর ছিল কোভিড-১৯ মহামারির পর তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক সফর। তিনি সেই সফরে যশোরেশ্বরী মন্দিরে একটি বহুমুখী কমিউনিটি হল নির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে এই হলটি স্থানীয় মানুষের সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হবে এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সকলের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করবে।
Bangladesh Crisis: গণবিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, কেন শেখ হাসিনার পতন?
এই ঘটনাটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বন্ধন দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রী মোদির উপহার দেওয়া মুকুটটি সেই বন্ধনের একটি প্রতীক ছিল। এর চুরি যাওয়া দুই দেশের মধ্যে একটি কূটনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তারা মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে এবং স্থানীয় লোকজনের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে নজর রাখছে।
এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো এবং স্থানীয় পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এছাড়া, সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন যাতে চুরি করা জিনিস দেশের বাইরে পাচার করা না যায়।
এই ঘটনাটি আরও একবার প্রমাণ করে যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় প্রতীকগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু একটি দেশের নয়, সমগ্র অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। সুতরাং, এই ধরনের মূল্যবান সম্পদ রক্ষার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
পরিশেষে, এই ঘটনাটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা ও জটিলতাকে তুলে ধরে। দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এই ধরনের ঘটনা সেই সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, এই বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আশা করা যায়, বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে এবং চুরি যাওয়া মুকুট উদ্ধারের চেষ্টা করবে।