Ritwika Tirkey Vande Bharat : ঝাড়খন্ডের বোকারো জেলার ২৭ বছর বয়সী আদিবাসী যুবতী ঋত্বিকা তিরকি ভারতীয় রেলওয়ের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করেছেন। তিনি দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা হিসেবে অত্যাধুনিক Vande Bharat Express ট্রেনের সহকারী লোকো পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে টাটানগর থেকে পাটনা পর্যন্ত Vande Bharat Express এর প্রথম যাত্রায় তিনি সহকারী লোকো পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মহাকাশে চলবে ট্রেন! কসমিক রেলওয়ের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে?
ঋত্বিকা তিরকি বিআইটি মেসরা থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৯ সালে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের চক্রধরপুর ডিভিশনে শান্টার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি মালগাড়ি ও যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট পদে উন্নীত হন এবং সর্বশেষ Vande Bharat Express চালানোর সুযোগ পান।
ঋত্বিকা তিরকি বলেন, “আমি আগে মালগাড়ি ও যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতাম। কিন্তু এখন Vande Bharat Express চালানোর সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। এটা আমার জন্য একটা বড় সুযোগ এবং আমি পুরো মনোযোগ ও দায়িত্বশীলতার সাথে আমার কাজ করব।”
ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ঋত্বিকা তিরকিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বোন ঋত্বিকা তিরকিকে অনেক অভিনন্দন ও জোহার। ঝাড়খন্ডের কন্যা এবং দেশের প্রথম আদিবাসী সহকারী লোকো পাইলট ঋত্বিকা তিরকিকে Vande Bharat ট্রেনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঋত্বিকা শুধু নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক নন, তিনি আদিবাসী সমাজের বোন-মেয়েদের জন্যও একটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন।”
ঋত্বিকা তিরকির এই অর্জন ভারতীয় রেলওয়ের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে আদিবাসী সমাজের মেয়েরাও উচ্চ প্রযুক্তির ট্রেন চালাতে পারে। এটি শুধু নারী ক্ষমতায়নের একটি উদাহরণ নয়, বরং আদিবাসী সমাজের উন্নয়নেরও একটি মাইলফলক।
ভারতীয় রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ৭,৫৭২ জন মহিলা লোকো পাইলট রয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ২% আদিবাসী সম্প্রদায়ের। ঋত্বিকা তিরকির এই অর্জন আদিবাসী সমাজের মেয়েদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
Vande Bharat Express ভারতের সর্বাধুনিক সেমি-হাই স্পিড ট্রেন। এটি ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে চলতে সক্ষম। তবে বর্তমান রেল লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে এটি সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে চলে। এই ট্রেনে রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধা যেমন – বায়ো-ভ্যাকুয়াম টয়লেট, ওয়াই-ফাই, স্বয়ংক্রিয় দরজা, সিসিটিভি ক্যামেরা ইত্যাদি।
ঋত্বিকা তিরকির এই অর্জন শুধু আদিবাসী সমাজের জন্য নয়, সমগ্র ভারতের নারী সমাজের জন্যও একটি বড় অনুপ্রেরণা। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে সুযোগ পেলে মেয়েরাও যে কোন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারে।
ঋত্বিকা তিরকির এই সাফল্য আদিবাসী সমাজের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। এর ফলে আদিবাসী পরিবারগুলো তাদের মেয়েদের শিক্ষার প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি সরকারও আদিবাসী মেয়েদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে।
ঋত্বিকা তিরকির এই অর্জন প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় রেলওয়ে ক্রমশ অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে উঠছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক আদিবাসী মহিলা রেলওয়েতে চাকরি পাবে বলে আশা করা যায়। এটি শুধু তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি করবে।
ঋত্বিকা তিরকির এই সাফল্য আদিবাসী সমাজের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ঝাড়খন্ডে আদিবাসী সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৫৭.১%। ঋত্বিকার মতো রোল মডেল পেয়ে আদিবাসী পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শিক্ষার প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দেবে বলে আশা করা যায়।
ঋত্বিকা তিরকির এই অর্জন আদিবাসী সমাজের মেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। এর ফলে তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে বৃহত্তর সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সাহস পাবে। এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, সমগ্র আদিবাসী সমাজের উন্নয়নেও সহায়ক হবে।
ঋত্বিকা তিরকির এই সাফল্য প্রমাণ করেছে যে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন – বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা ইত্যাদি কার্যকর হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
Indian Railway: হারানো লাগেজের হদিশ এখন আপনার হাতের মুঠোয়
ঋত্বিকা তিরকির এই অর্জন প্রমাণ করেছে যে ভারতীয় সমাজে ক্রমশ লিঙ্গ বৈষম্য কমে আসছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক মেয়ে পুরুষ প্রধান পেশায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে বলে আশা করা যায়।ঋত্বিকা তিরকির এই সাফল্য আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে ভারত নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করছে। এটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, ঋত্বিকা তিরকির এই অর্জন শুধু একজন ব্যক্তির সাফল্য নয়, এটি সমগ্র আদিবাসী সমাজ এবং ভারতীয় নারী সমাজের জন্য একটি বড় অর্জন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে সুযোগ পেলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরাও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আশা করা যায়, ঋত্বিকা তিরকির এই সাফল্য আরও অনেক আদিবাসী মেয়েকে অনুপ্রাণিত করবে এবং তারাও নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য এগিয়ে আসবে।