John Cena Retires from WWE in 2024: বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সফল রেসলার জন সিনা অবশেষে তার ২২ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন। ১৬ বারের ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়ন জন সিনা, যিনি তার ক্যারিয়ারের প্রতিটি মুহূর্তে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন, ২০২৪ সালের ৮ জুলাই রেসলিং থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার এই সিদ্ধান্ত রেসলিং দুনিয়ায় একটি যুগের অবসান ঘটিয়েছে।
জন ফিলিক্স অ্যন্থনিও সিনা, জন্ম ২৩ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে, ম্যাসাচুসেটসের ওয়েস্ট নিউবেরিতে। ২০০১ সালে ডব্লিউডব্লিউইতে তার অভিষেক হয়। তার ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং, তবে তার কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভার কারণে তিনি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সিনার প্রথম বড় সাফল্য আসে ২০০৪ সালে, যখন তিনি প্রথমবারের মতো ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।
জন সিনা তার ক্যারিয়ারে মোট ১৬ বার ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন, যা তাকে রিক ফ্লেয়ারের সাথে সমান স্থানে নিয়ে এসেছে। তার চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মুহূর্ত হল:
জন সিনা শুধু রেসলিং রিংয়ে নয়, রেসলিংয়ের বাইরেও সফল। তিনি হলিউডে একজন সফল অভিনেতা হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তার অভিনীত কিছু জনপ্রিয় সিনেমা হল:
এছাড়াও, তিনি একজন র্যাপার এবং টেলিভিশন হোস্ট হিসেবেও পরিচিত।
জন সিনার অবসরের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি এখন তার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে চান এবং নতুন প্রজেক্টে মনোনিবেশ করতে চান। সিনা বলেছেন, “আমি আমার ক্যারিয়ারের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি, কিন্তু এখন সময় এসেছে নতুন কিছু শুরু করার।”
জন সিনা, ডব্লিউডব্লিউই-এর ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় এবং সফল রেসলার, তার ২২ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরি করেছেন। তার ক্যারিয়ারের কিছু উল্লেখযোগ্য মুহূর্তগুলি নিচে তুলে ধরা হলো:
জন সিনার ডব্লিউডব্লিউই অভিষেক হয় ২৭ জুন ২০০২ সালে, যখন তিনি স্ম্যাকডাউনে কার্ট অ্যাঙ্গেলের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। এই ম্যাচে তিনি “রুথলেস অ্যাগ্রেশন” প্রদর্শন করেন, যা তাকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলে। যদিও তিনি ম্যাচটি হারান, তবে তার পারফরম্যান্স তার প্রতিভার পরিচয় দেয় এবং তাকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
২০০৪ সালে, জন সিনা তার প্রথম ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন। রেসলম্যানিয়া ২০-এ বিগ শোকে হারিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো ডব্লিউডব্লিউই ইউনাইটেড স্টেটস চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। এই জয় তার ক্যারিয়ারের প্রথম বড় সাফল্য ছিল এবং তাকে ডব্লিউডব্লিউই-এর প্রধান মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
রেসলম্যানিয়া ২১-এ জন সিনা জেবিএলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন। এই জয় তাকে ডব্লিউডব্লিউই-এর প্রধান তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং তার ক্যারিয়ারের একটি মাইলফলক হয়ে ওঠে।
রেসলম্যানিয়া ২২-এ জন সিনা ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ রক্ষা করতে ট্রিপল এইচের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এই ম্যাচটি ছিল অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এবং জন সিনা তার STFU (পরে STF) সাবমিশন মুভ দিয়ে ট্রিপল এইচকে হারান। এই জয় তার ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় সাফল্য ছিল।
২০০৭ সালে পেক্টোরাল মাসল ইনজুরির কারণে জন সিনা বেশ কিছুদিন রেসলিং থেকে দূরে ছিলেন। তবে ২০০৮ সালে রয়্যাল রাম্বল-এ তিনি ৩০তম এন্ট্রেন্ট হিসেবে ফিরে আসেন এবং ট্রিপল এইচকে এলিমিনেট করে ম্যাচটি জয় করেন। এই প্রত্যাবর্তন তার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল।
রেসলম্যানিয়া ২৮ এবং ২৯-এ জন সিনা এবং দ্য রকের মধ্যে দুটি মহাকাব্যিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে রেসলম্যানিয়া ২৮-এ দ্য রকের কাছে হেরে যান জন সিনা, তবে ২০১৩ সালে রেসলম্যানিয়া ২৯-এ তিনি দ্য রককে হারিয়ে ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ পুনরুদ্ধার করেন।
২০১০ সালে, নেক্সাস নামে একটি গ্রুপ ডব্লিউডব্লিউই-এর প্রধান রোস্টারে আক্রমণ করে এবং জন সিনা তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠেন। সামারস্ল্যাম-এ জন সিনা “টিম ডব্লিউডব্লিউই” গঠন করে নেক্সাসের বিরুদ্ধে ৭-অন-৭ এলিমিনেশন ট্যাগ টিম ম্যাচে লড়াই করেন এবং ম্যাচটি জয় করেন।
২০১৭ সালে রেসলম্যানিয়া ৩৩-এ জন সিনা এজে স্টাইলসকে হারিয়ে তার ১৬তম ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন। এই জয় তাকে রিক ফ্লেয়ারের সাথে সমান স্থানে নিয়ে আসে এবং তার ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়।
রেসলিংয়ের বাইরেও জন সিনা হলিউডে একজন সফল অভিনেতা হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তার অভিনীত কিছু জনপ্রিয় সিনেমা হল ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস সিরিজের ফাস্ট ৯, বাম্বলবি, এবং দ্য সুইসাইড স্কোয়াড।
জন সিনা মেক-এ-উইশ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৬০০-এরও বেশি ইচ্ছা পূরণ করেছেন, যা তাকে এই ফাউন্ডেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইচ্ছা পূরণকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার “নেভার গিভ আপ” বার্তা অসংখ্য শিশুর জীবনে প্রেরণা জুগিয়েছে।
১. অপ্রত্যাশিত সময়ে ফিরে আসা: সিনা ২০০৭ সালে পেক্টোরাল মাসলে গুরুতর ইনজুরির কারণে রেসলিং থেকে দূরে ছিলেন। সবাই ধারণা করেছিল যে তিনি কমপক্ষে ৬ মাস রিং থেকে দূরে থাকবেন, কিন্তু তিনি মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই ফিরে এলেন
২. চরম উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত: রয়্যাল রাম্বল ম্যাচের ৩০তম এবং শেষ প্রতিযোগী হিসেবে সিনা রিংয়ে প্রবেশ করেন, যা দর্শকদের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা সৃষ্টি করে
৪. ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: এই রিটার্ন সিনার ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।৫. দ্রুত পুনরুদ্ধার: সিনা দৈনিক তিনবার ফিজিওথেরাপি করে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে সুস্থ হয়ে ওঠেন, যা তার প্রতিশ্রুতি এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রমাণ দেয় ।
জন সিনার ক্যারিয়ারে অনেক চ্যালেঞ্জিং ম্যাচ থাকলেও, তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ২০০৮ সালের রয়্যাল রাম্বল ম্যাচে তার অপ্রত্যাশিত রিটার্ন।এই ম্যাচটি কয়েকটি কারণে উল্লেখযোগ্য:
১. সিনা ২০০৭ সালে পেক্টোরাল মাসলে গুরুতর ইনজুরির কারণে রেসলিং থেকে দূরে ছিলেন। সবাই ধারণা করেছিল যে তিনি কমপক্ষে ৬ মাস রিং থেকে দূরে থাকবেন।
২. কিন্তু সিনা মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই ফিরে এলেন, যা ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
৩. তিনি রয়্যাল রাম্বল ম্যাচের ৩০তম এবং শেষ প্রতিযোগী হিসেবে রিংয়ে প্রবেশ করেন, যা দর্শকদের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
৪. শুধু ফিরে আসাই নয়, সিনা সেই রয়্যাল রাম্বল ম্যাচটি জিতে নেন।
৫. এই রিটার্ন সিনার ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
৬. সিনা দৈনিক তিনবার ফিজিওথেরাপি করে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে সুস্থ হয়ে ওঠেন, যা তার প্রতিশ্রুতি এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রমাণ দেয়।
৭. WWE এই রিটার্নটিকে সম্পূর্ণ গোপন রেখেছিল, যা এটিকে একটি বিশাল সারপ্রাইজ হিসেবে প্রস্তুত করেছিল।সুতরাং, ২০০৮ সালের রয়্যাল রাম্বলে জন সিনার রিটার্নটি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে এসে ম্যাচটি জিতে নেন, যা তার অসাধারণ প্রতিবদ্ধতা ও দৃঢ়তার প্রমাণ দেয়।
জন সিনার ক্যারিয়ারে অনেকগুলি উল্লেখযোগ্য জয় রয়েছে, তবে তার সবচেয়ে বড় জয় হিসেবে নিম্নলিখিত ম্যাচটিকে বিবেচনা করা যেতে পারে:২০১৭ সালের রয়্যাল রাম্বল ইভেন্টে এজে স্টাইলসকে হারিয়ে ১৬তম বারের মতো ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ জয়।এই জয়টি কয়েকটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১. এটি ছিল জন সিনার ১৬তম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, যা তাকে রিক ফ্লেয়ারের সাথে সমান স্থানে নিয়ে আসে। এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
২. ম্যাচটি ছিল অসাধারণ মানের। অনেকে এটিকে সিনার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করে।
৩. এজে স্টাইলসের মতো একজন বিশ্বমানের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে এই জয় অর্জন করা সিনার দক্ষতা ও মানকে আরও প্রমাণ করে।
৪. এই জয়ের মাধ্যমে সিনা তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছান এবং নিজেকে সর্বকালের সেরা রেসলারদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
৫. ম্যাচটি রয়্যাল রাম্বলের মতো একটি বড় ইভেন্টে অনুষ্ঠিত হয়, যা এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।সুতরাং, এই ১৬তম চ্যাম্পিয়নশিপ জয়কে জন সিনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ জয় হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা তাকে ডব্লিউডব্লিউই ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুপারস্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মন্তব্য করুন