প্যারিস অলিম্পিকের ৮ম দিনে সেন্ট লুসিয়ার জুলিয়েন আলফ্রেড মহিলাদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনার পদক জিতে ইতিহাস গড়লেন। তিনি মাত্র ১০.৭২ সেকেন্ডে রেস শেষ করে বিশ্বের দ্রুততম মহিলা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন।
স্টেড দে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত এই ফাইনাল রেসে আলফ্রেড প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখালেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শা’কারি রিচার্ডসন (১০.৮৭ সেকেন্ড) এবং মেলিসা জেফারসন (১০.৯২ সেকেন্ড) কে পরাজিত করে সোনা জিতলেন।
এই জয়ের মাধ্যমে জুলিয়েন আলফ্রেড সেন্ট লুসিয়ার প্রথম অলিম্পিক পদক জয়ী হলেন। এটি ৩১ বছরে ৩১ জন অ্যাথলিট পাঠানোর পর এই ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্রের প্রথম অলিম্পিক পদক।
২৩ বছর বয়সী আলফ্রেড এর আগে ২০১৮ সালের যুব অলিম্পিকে ১০০ মিটারে রৌপ্য জিতেছিলেন। এরপর তিনি মার্কিন কলেজ অ্যাথলেটিক্সে প্রভাব বিস্তার করেন এবং চলতি বছরের শুরুতে গ্লাসগোতে বিশ্ব ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে ৬০ মিটারে সোনা জেতেন।
স্বর্ণালী মুহূর্ত: ভারতের অলিম্পিক সাফল্যের ১০টি অবিস্মরণীয় পদক
আলফ্রেড বললেন, “আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা আমার দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমি আশা করি এই জয় সেন্ট লুসিয়ার তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে।”
রিচার্ডসন বললেন, “জুলিয়েন অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। আমি নিজের প্রদর্শনে সন্তুষ্ট, তবে আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।”
আলফ্রেডের এই সময় তাকে ইতিহাসের অষ্টম দ্রুততম মহিলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার সময় জ্যামাইকার শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইসের ১০.৭০ সেকেন্ডের রেকর্ডের খুব কাছাকাছি।
এই জয়ের মাধ্যমে আলফ্রেড নিজেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্প্রিন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তার কোচ হেনরি রোল বললেন, “জুলিয়েন একজন অসাধারণ প্রতিভা। সে কঠোর পরিশ্রমী এবং নিবেদিতপ্রাণ অ্যাথলিট। আমি তার জন্য গর্বিত।”
আলফ্রেডের এই সাফল্য সেন্ট লুসিয়ার ক্রীড়াঙ্গনে নতুন যুগের সূচনা করল। দেশের প্রধানমন্ত্রী বললেন, “জুলিয়েনের জয় আমাদের জাতীয় গর্বের বিষয়। এটি প্রমাণ করে যে আমাদের ছোট দ্বীপরাষ্ট্র থেকেও বিশ্বমানের অ্যাথলিট তৈরি হতে পারে।”
আলফ্রেডের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি। তিনি ছয়-সাত বছর বয়স থেকেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তবে ১২ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর তিনি অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে আবার ফিরে আসেন।
তিনি সেন্ট লুসিয়ার লিওন হেস কম্প্রিহেনসিভ সেকেন্ডারি স্কুলে এবং পরে জ্যামাইকার সেন্ট ক্যাথরিন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে যুব ও কমিউনিটি স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
আলফ্রেড ২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসে ১০০ মিটারে রৌপ্য জিতেছিলেন। সেই বছরই তিনি ১০.৮১ সেকেন্ডে দৌড়ে বিশ্বের দ্রুততম ৩০ জন মহিলার তালিকায় নাম লেখান।
২০২৩ সালে তিনি ৬০ মিটারে ৬.৯৪ সেকেন্ডের সময় করে এনসিএএ ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে রেকর্ড গড়েন। এই সময় তাকে বিশ্বের সর্বকালের দ্বিতীয় দ্রুততম মহিলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
অবাক করা ট্রিক! মোবাইল দিয়েই চালান স্মার্ট টিভি, বাড়িতে বসেই উপভোগ করুন প্রিমিয়াম কনটেন্ট!
আলফ্রেডের এই জয় ক্যারিবীয় অঞ্চলের অ্যাথলেটিক্সে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। জ্যামাইকার পর এখন সেন্ট লুসিয়াও যে বিশ্বমানের স্প্রিন্টার তৈরি করতে পারে, তা প্রমাণিত হলো।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আলফ্রেডের এই সাফল্য আগামী দিনে আরও অনেক ক্যারিবীয় তরুণ-তরুণীকে অ্যাথলেটিক্সের দিকে আকৃষ্ট করবে। এর ফলে এই অঞ্চল থেকে আরও বেশি বিশ্বমানের অ্যাথলিট উঠে আসতে পারে।
আলফ্রেডের কোচ হেনরি রোল বললেন, “জুলিয়েনের মধ্যে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আমি মনে করি সে আগামী দিনে আরও ভালো করবে এবং বিশ্ব রেকর্ড গড়তে পারে।”
এদিকে, রিচার্ডসনের রৌপ্য জয়ও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিক্সে অংশ নিতে না পারায় হতাশ হয়েছিলেন তিনি। এবার প্যারিসে প্রথম অলিম্পিক পদক জিতে নিজেকে প্রমাণ করলেন।
মেলিসা জেফারসনের ব্রোঞ্জ জয়ের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালের পর প্রথমবার মহিলাদের ১০০ মিটারে দুটি পদক জিতল।
সামগ্রিকভাবে, এই ফাইনাল রেসটি ছিল অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামূলক। বৃষ্টির মধ্যেও দর্শকরা উৎসাহভরে অ্যাথলিটদের উৎসাহিত করছিলেন।
আলফ্রেডের এই জয় শুধু সেন্ট লুসিয়ার জন্য নয়, সমগ্র ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য গর্বের। এটি প্রমাণ করে যে ছোট দেশ থেকেও বিশ্বমানের অ্যাথলিট তৈরি হতে পারে।
আগামী দিনে আলফ্রেডের কাছ থেকে আরও ভালো পারফরম্যান্স আশা করা যায়। তার বয়স মাত্র ২৩ বছর, তাই তিনি আরও অনেক বছর শীর্ষে থাকতে পারেন।
সামগ্রিকভাবে, এই অলিম্পিক ফাইনাল রেসটি ছিল অত্যন্ত রোমাঞ্চকর এবং অনুপ্রেরণাদায়ক। এটি প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে যে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।