কৌশিকী অমাবস্যা ২০২৫: কবে পড়েছে এই শুভ তিথি? জানুন পুজোর সঠিক সময় ও নিয়ম

Riddhi Datta 5 Min Read

Kaushiki Amavasya 2025: হিন্দু ধর্মের পবিত্র তিথিগুলির মধ্যে কৌশিকী অমাবস্যা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই বিশেষ অমাবস্যায় মা তারার পুজো করে ভক্তরা তাঁদের মনের সকল ইচ্ছা পূর্ণ করার আশায় থাকেন। ২০২৫ সালের কৌশিকী অমাবস্যা কবে পড়েছে, কোন সময়ে পুজো করলে সর্বাধিক ফল পাওয়া যাবে, এবং এই তিথির ধর্মীয় ও পৌরাণিক তাৎপর্য কী – এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই ব্লগে।

কৌশিকী অমাবস্যা ২০২৫ এর তারিখ ও সময়

পঞ্জিকা অনুসারে, এ বছরের কৌশিকী অমাবস্যা পালিত হবে ৫ ভাদ্র, শুক্রবার। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই তারিখটি হল ২২ অগাস্ট, ২০২৫

অমাবস্যা তিথির সময়কাল

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী:

গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুযায়ী:

  • অমাবস্যা তিথি শুরু: ৫ ভাদ্র, শুক্রবার সকাল ১১টা ৫৪ মিনিট ১৭ সেকেন্ড
  • অমাবস্যা তিথি শেষ: ৬ ভাদ্র, শনিবার সকাল ১২টা ২২ মিনিট ৪২ সেকেন্ড

পুজোর শুভ সময় ও মুহূর্ত

কৌশিকী অমাবস্যার পুজোর জন্য সবচেয়ে শুভ সময় হল অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার পর থেকেই। তারাপীঠ মন্দিরের সেবায়েতদের মতে, সূর্যের প্রখর তাপ ওঠার আগেই পুজো দিলে মা তারার বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়।

বিশেষ পুজোর সময়

যারা সকালে পুজো দিতে পারবেন না, তারা সন্ধ্যার বিশেষ সময়ে বাড়ির ঠাকুরঘরে বা যেকোনো মন্দিরে গিয়ে পুজো দিতে পারেন। তন্ত্রশাস্ত্র অনুসারে, এই রাতটিকে ‘তারা রাত্রি’ বলা হয় এবং এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুয়ের দরজা খোলে।

কৌশিকী অমাবস্যার পৌরাণিক কাহিনি

দেবী কৌশিকীর জন্মকথা

মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে, একসময় শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ব্রহ্মার বর প্রাপ্তির পর এই দুই অসুর ত্রিলোকে অত্যাচার শুরু করে। দেবতারা তখন দেবী পার্বতীর শরণাপন্ন হন।

দেবী পার্বতী অশুভ শক্তি বিনাশের উদ্দেশ্যে নিজের দেহকোষ থেকে সৃষ্টি করেন এক ভয়ঙ্কর দেবীকে। তিনিই দেবী কৌশিকী নামে পরিচিত। দেবী কৌশিকী অযোনিসম্ভবা ছিলেন এবং তিনিই শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন।

যুদ্ধের বর্ণনা

যুদ্ধকালীন সময়ে দেবী কৌশিকীর শরীর থেকে হাজার হাজার যোদ্ধৃ মাতৃকাকুল সৃষ্টি হয় এবং তারাই সমগ্র অসুরকুলকে বিনাশ করে। এই ঘটনাটি ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় ঘটে বলে পরবর্তীকালে এটি কৌশিকী অমাবস্যা নামে পরিচিত হয়।

তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যার বিশেষত্ব

বামাখ্যাপার সিদ্ধিলাভ

কথিত আছে যে, সাধক বামাক্ষ্যাপা ১২৭৪ বঙ্গাব্দে কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেতশিমূল বৃক্ষের তলায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বামাক্ষ্যাপা এই দিন তারা মায়ের সাক্ষাৎ দর্শন পান।

তন্ত্রসাধনার গুরুত্ব

তন্ত্রশাস্ত্র মতে, কৌশিকী অমাবস্যা তিথি তন্ত্রসাধনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। এই দিন সাধকেরা নিজের ইচ্ছামতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন এবং সিদ্ধিলাভ করেন।

কৌশিকী অমাবস্যার ধর্মীয় তাৎপর্য

পিতৃপক্ষের সূচনা

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, অমাবস্যার দিনে আমাদের পূর্বপুরুষরা অন্য জগৎ থেকে পৃথিবীতে আসেন। এই দিনে শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করলে পিতৃপুরুষরা প্রসন্ন হন এবং তাঁদের আশীর্বাদ লাভ হয়।

দান ও পুণ্যকর্মের ফল

কৌশিকী অমাবস্যার দিনে দান করা খুব শুভ বলে মনে করা হয়। পূর্বপুরুষদের আত্মাকে তুষ্ট করার জন্য খাদ্য, বস্ত্র এবং অর্থ দান করা হয়, যা পরিবারের সুখ, সমৃদ্ধি এবং শান্তির জন্য সহায়ক।

পাপ মুক্তির উপায়

বিশ্বাস অনুযায়ী, কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে বিশেষ পুজোয় অংশগ্রহণ করে দ্বারকা নদীতে স্নান করলে জীবনের সব পাপ থেকে মুক্তি মেলে। এদিন সঠিক উপায়ে তন্ত্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে জীবনের সমস্ত বাঁধা বিপত্তি সহজেই কেটে যায়।

অমাবস্যা শুভ নাকি অশুভ: ধর্মীয় বিশ্বাস ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়

তারাপীঠ মন্দিরে পুজোর প্রস্তুতি

ভক্তদের সমাগম

প্রতি বছর কৌশিকী অমাবস্যার দিন লাখ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটে তারাপীঠ মন্দির চত্বরে। ভক্তদের বিশ্বাস, ভাদ্র মাসের এই অমাবস্যায় মা তারার কাছে কোনো প্রার্থনা করলে মা তারা অবশ্যই ভক্তের সেই মনস্কামনা পূর্ণ করেন।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা

ভিড় সামাল দিতে প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই হাজার পুলিশ কর্মী নিযুক্ত থাকেন। ভক্তদের যেন কোনোভাবে অসুবিধা না হয় সেজন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সব রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

কৌশিকী অমাবস্যার পুজোর নিয়ম

বাড়িতে পুজোর পদ্ধতি

যারা তারাপীঠে যেতে পারবেন না, তারা বাড়িতেও কৌশিকী অমাবস্যার পুজো করতে পারেন। সকালে স্নান সেরে পরিষ্কার কাপড় পরে ঠাকুরঘরে বা পুজোর ঘরে বসে মা তারার পুজো করতে হয়।

পুজোর উপকরণ

কৌশিকী অমাবস্যার পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের মধ্যে রয়েছে – লাল ফুল, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, ফল, মিষ্টি, এবং বিশেষভাবে কালো তিল। তন্ত্রমতে এই দিনে বিশেষ কিছু মন্ত্র জপ করার নিয়ম আছে।

কৌশিকী অমাবস্যা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই পবিত্র দিনে মা তারার আরাধনা করে আমরা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, অশুভ শক্তি থেকে শুভ শক্তির দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা পাই। ২০২৫ সালের কৌশিকী অমাবস্যা আমাদের জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করুক, সকল বাঁধা বিপত্তি দূর করুক – এই আমাদের প্রার্থনা।আপনি কি এবার তারাপীঠে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? কমেন্টে জানান আপনার অভিজ্ঞতার কথা।  

Share This Article