কেরালার কাসারগোড জেলার নীলেশ্বরমের কাছে ভীরারকাভু মন্দিরে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার মধ্যরাতে মন্দির উৎসবের সময় বাজি ফাটানোর সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫০ জনের বেশি লোক আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮ জনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মন্দিরের কাছে একটি বাজি সংরক্ষণাগারে আগুন লাগার ফলে এই বিধ্বংসী বিস্ফোরণ ঘটে। মধ্যরাত নাগাদ হঠাৎ করেই এই বিস্ফোরণ ঘটে যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অসংখ্য দর্শনার্থী এই বিস্ফোরণের কবলে পড়েন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নীলেশ্বর এলাকার মূলমকুঝি চামুন্ডি তেয়্যম উৎসবের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। বাজি ফাটানোর সময় একটি বাজি ভুলবশত বিস্ফোরক সামগ্রী রাখার স্থানে গিয়ে পড়ে। এর ফলেই এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।
রেলপথের রক্তাক্ত অধ্যায়: ভারতের পাঁচটি মর্মান্তিক ট্রেন বিপর্যয়
আহতদের দ্রুত বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। কাসারগোড, কান্নুর এবং মাঙ্গালুরুর বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। জেলা হাসপাতালে ৩৩ জন, আইশাল হাসপাতালে ১৯ জন, অরিমালা হাসপাতালে ১২ জন, সঞ্জীবনী হাসপাতালে ৪০ জন, নীলেশ্বর তালুক হাসপাতালে ১১ জন এবং আস্টার এমআইএমএস হাসপাতাল কান্নুরে ৫ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও মাঙ্গালুরু ও কান্নুরের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও বেশ কিছু আহত ভর্তি হয়েছেন।
কাসারগোড জেলা হাসপাতালে ভর্তি ৫ জনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে অনেক মহিলা ও শিশুও রয়েছে। তারা তেয়্যম নৃত্য দেখতে এসেছিলেন।
ঘটনার পর থেকেই জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। জেলা কালেক্টর ও জেলা পুলিশ প্রধান নিজেরা উদ্ধার কাজ তদারকি করছেন। পুলিশ এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে প্রাথমিক অনুমান, বাজি সংরক্ষণাগারে আগুন লাগার ফলেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ শোকাহত। অনেকেই আহত বন্ধু-পরিজনের খোঁজে হাসপাতালে ছুটে গেছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।
ভারতে ধর্মীয় উৎসব ও বিয়ের অনুষ্ঠানে বাজি ফাটানো একটি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু প্রতি বছরই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে নয়াদিল্লিতে একটি বাজি কারখানায় আগুন লেগে ১৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। তার আগের বছর মধ্যপ্রদেশের একটি গ্রামে বাজি তৈরির সময় বিস্ফোরণে ২৩ জন নিহত হন।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, বাজি ফাটানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসবের সময় যখন বড় সংখ্যক মানুষ জমায়েত হয়, তখন এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রাণঘাতী হতে পারে।
স্থানীয় প্রশাসন এখন উদ্ধার কাজের পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের কাজও শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, এই তদন্তের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন এবং প্রশাসনকে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, উৎসব উদযাপনের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যেখানে বাজি বা অন্যান্য বিস্ফোরক সামগ্রী ব্যবহার করা হয়, সেখানে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
স্থানীয় জনগণ এখন আশা করছেন, কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি, আহতদের পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা প্রদানের দাবিও উঠেছে।
প্রতিবাদের মুখে দুর্গাপুজো: RG Kar কাণ্ডের ছায়ায় বাংলার উৎসব
এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বাজি ব্যবহার ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এ ধরনের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। উৎসব উদযাপনের নামে নিজেদের ও অন্যদের জীবন বিপন্ন করা উচিত নয়। নিরাপদ উপায়ে উৎসব পালন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। তবেই এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।