আইপিএল ২০২৫-এর উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুই পরাক্রমশালী দল—কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। আগামীকাল, ২২ মার্চ, কলকাতার ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সে এই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে নজর থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের। গতবারের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর তাদের শিরোপা ধরে রাখার লড়াই শুরু করবে, আর আরসিবি চাইবে প্রথম ম্যাচেই জয় দিয়ে টুর্নামেন্টে শক্ত ভিত গড়তে। এই ম্যাচে কারা হবেন নায়ক, কোন তারকারা ছড়াবেন জাদু—সেটাই এখন সবার আলোচনার কেন্দ্রে।
ঘটনার পটভূমি বেশ জমজমাট। আইপিএলের ১৮তম আসরের প্রথম ম্যাচ হিসেবে এই লড়াইটি নির্ধারিত হয়েছে ২২ মার্চ, সন্ধ্যা ৭:৩০-এ। ইডেন গার্ডেন্সে এই দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস দীর্ঘ। এর আগে ৩৪টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে তারা, যেখানে কেকেআর ২০টি জয় নিয়ে এগিয়ে আছে, আর আরসিবি জিতেছে ১৪টিতে। গত মরসুমে কেকেআর আরসিবির বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। একটিতে তারা ৭ উইকেটে জিতেছিল বেঙ্গালুরুতে, আরেকটিতে মাত্র ১ রানের রুদ্ধশ্বাস জয় পায় ইডেনে। এবারও কেকেআরের দিকে সমর্থকদের প্রত্যাশা বেশি, কারণ তারা ঘরের মাঠে খেলছে এবং গতবারের সাফল্য তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, আরসিবি নতুন অধিনায়ক রজত পাটীদারের নেতৃত্বে প্রথম শিরোপার স্বপ্ন দেখছে।
কেকেআরের শক্তি তাদের সুষম দলের গঠনে। নতুন অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে দলকে নেতৃত্ব দেবেন, যিনি অভিজ্ঞতার সঙ্গে শান্ত মাথার পরিচয় দিয়ে আসছেন। ব্যাটিংয়ে রিঙ্কু সিং গত মরসুমে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন, ১০ ম্যাচে ৩৫০-র বেশি রান করেছেন। ওপেনিংয়ে কুইন্টন ডি কক এবং রহমানউল্লাহ গুরবাজের মতো বিধ্বংসী ব্যাটার রয়েছেন। তবে সবার নজর থাকবে সুনীল নারিনের ওপর। গত মরসুমে তিনি ব্যাটে ২৭৬ রান করেছেন ১৮৭.৭৫ স্ট্রাইক রেটে এবং বল হাতে ১৬ উইকেট নিয়েছেন। স্পিনে বরুণ চক্রবর্তীও ইডেনের পিচে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। পেস আক্রমণে আনরিখ নর্টজে এবং হর্ষিত রানা গতি ও নিয়ন্ত্রণের মিশেলে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখবেন। আন্দ্রে রাসেলের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সও দলের জন্য বড় সম্পদ।
অন্যদিকে, আরসিবি তাদের ব্যাটিং নির্ভরতার জন্য পরিচিত। বিরাট কোহলি গত মরসুমে ৪২৫ রান করেছেন, গড় ৪৭.২২ এবং স্ট্রাইক রেট ১৬১.৫৯। তিনি এই ম্যাচেও দলের মূল স্তম্ভ হবেন। নতুন অধিনায়ক রজত পাটীদারও ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে আছেন, গত মরসুমে ৩৪৫ রান করেছেন ১৯৪.৯১ স্ট্রাইক রেটে। ফিল সল্ট এবং জিতেশ শর্মা ওপেনিংয়ে বিস্ফোরক শুরু দিতে পারেন। তবে বোলিংয়ে আরসিবির দুর্বলতা স্পষ্ট। জশ হ্যাজলউড এবং ভুবনেশ্বর কুমারের অভিজ্ঞতা থাকলেও, স্পিনে সুয়াশ শর্মা এবং ক্রুনাল পান্ডিয়ার ওপর বড় দায়িত্ব। ইডেনের পিচে কেকেআরের স্পিনারদের বিরুদ্ধে আরসিবির ব্যাটারদের লড়াই কঠিন হবে।
ম্যাচের প্রাসঙ্গিক তথ্য আরও গভীরতা যোগ করে। ইডেন গার্ডেন্সে গত মরসুমে গড় স্কোর ছিল ১৮০-র কাছাকাছি, যা বোঝায় যে এটি ব্যাটিং-বান্ধব পিচ। তবে সন্ধ্যার খেলায় শিশিরের প্রভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা সহজ হতে পারে। কেকেআর এবং আরসিবির মধ্যে ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাও উল্লেখযোগ্য। ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম ম্যাচে কেকেআর ১৪০ রানে আরসিবিকে হারিয়েছিল। ২০১৭ সালে আরসিবি মাত্র ৪৯ রানে অলআউট হয়ে সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা পেয়েছিল কেকেআরের কাছে। এই ম্যাচে টসও গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ শিশিরের কারণে অনেক দল বোলিং প্রথমে বেছে নিতে পারে।
দুই দলের সম্ভাব্য তারকাদের দিকে নজর রাখা জরুরি। কেকেআরের হয়ে সুনীল নারিন এবং রিঙ্কু সিং ব্যাটে-বলে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। নারিনের স্পিনের সামনে কোহলি গত মরসুমে ১২ বলে ২১ রান করলেও, তার সামগ্রিক রেকর্ড নারিনের বিরুদ্ধে দুর্বল (১৪৫ বলে ১৪১ রান)। রিঙ্কু ফিনিশার হিসেবে প্রমাণিত। আরসিবির কোহলি ছাড়াও পাটীদার এবং লিয়াম লিভিংস্টোনের মতো হার্ড-হিটাররা গুরুত্বপূর্ণ। বোলিংয়ে হ্যাজলউডের নিয়ন্ত্রণ এবং সুয়াশের স্পিন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
খেলার আগে সমর্থকদের উত্তেজনা তুঙ্গে। কেকেআর গত পাঁচ ম্যাচে চারটিতে জিতেছে, যা তাদের মনোবল বাড়িয়েছে। আরসিবি গতবার ঘরের মাঠে কেকেআরের কাছে হেরেছিল, তাই এবার প্রতিশোধের আগুনও জ্বলছে। দুই দলের সমর্থকরা স্টেডিয়ামে এবং টিভির পর্দায় চোখ রাখবেন এই রোমাঞ্চকর লড়াই দেখতে। ম্যাচটি স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্কে সম্প্রচারিত হবে এবং জিও সিনেমায় লাইভ স্ট্রিমিং পাওয়া যাবে।
শেষ পর্যন্ত এই ম্যাচে জয়ের চাবিকাঠি থাকবে দলের ভারসাম্য এবং চাপ সামলানোর ক্ষমতায়। কেকেআরের স্পিন আক্রমণ এবং ঘরের মাঠের সুবিধা তাদের এগিয়ে রাখলেও, আরসিবির ব্যাটিং শক্তি যে কোনো মুহূর্তে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষায় আছেন—কে হাসবে শেষ হাসি?