ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহাতারকা বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে নতুন মোড় এসেছে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার পর এখন ওডিআই ক্রিকেট নিয়েও অনিশ্চয়তার ছায়া। ২০২৭ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে এই দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার খেলবেন কিনা, সে বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিসিসিআই কর্তারা ইতিমধ্যে দুই তারকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন এবং আগামী অক্টোবরের অস্ট্রেলিয়া সিরিজই হতে পারে তাদের ওডিআই ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়।
এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের পূর্বে ইংল্যান্ড সফরের আগেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিলেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। এর আগে ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর সবচেয়ে ছোট ফরম্যাট থেকেও বিদায় নিয়েছেন তারা। এখন শুধুমাত্র ওডিআই ক্রিকেটেই সক্রিয় রয়েছেন দুই মহাতারকা, কিন্তু সেখানেও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বয়সের হিসাব করলে ২০২৭ সালের বিশ্বকাপের সময় রোহিত শর্মার বয়স হবে ৪০ বছর এবং বিরাট কোহলির বয়স হবে ৩৮ বছর। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে পিটিআই জানিয়েছে, “হ্যাঁ, এটা খুব শিগগিরই আলোচনার বিষয় হবে। এখনো বিশ্বকাপ শুরু হতে দুই বছরের বেশি সময় আছে। তখন রোহিত ৪০ এবং কোহলি ৩৮ বছর পেরিয়ে যাবেন। তাই, বড় ইভেন্টের জন্য একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা থাকা দরকার, কারণ আমাদের শেষ বিশ্বকাপ জয় ২০১১ সালে হয়েছিল”।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পরিকল্পনায় ২০২৭ বিশ্বকাপের জন্য তরুণ দল গঠনের চিন্তাভাবনা রয়েছে। বিসিসিআই কর্তারা মনে করছেন, আগামী বিশ্বকাপের জন্য নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কোহলি ও রোহিতের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে বোর্ডকে।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে আগামী অক্টোবরের সিরিজটি হতে পারে কোহলি ও রোহিতের শেষ অস্ট্রেলিয়া সফর। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও টড গ্রিনবার্গ জানিয়েছেন, “এটাই হয়ত শেষবার আমরা দেখতে পারব রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি আমাদের দেশে খেলছে। সেটা হবে কি হবে না, সেটা আমরা নিশ্চিত নই। কিন্তু যদি সেটাই হয়, তাই আমরা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এমন দুই সেরা ক্রিকেটারের অসাধারণ ক্রিকেটের অধ্যায়কে কুর্নিশ জানাতেই তাঁদের জন্য বিশেষ সেন্ড অফের ব্যবস্থা করা হবে”।
বিশেষ শর্ত জুড়ে দিয়েছে বিসিসিআই। যদি কোহলি ও রোহিত ২০২৭ সাল পর্যন্ত ওডিআই ক্রিকেট খেলতে চান, তাহলে তাদের চলতি বছরের শেষে বিজয় হাজারে ট্রফির মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে হবে। এই শর্তটি দুই তারকার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে, কারণ দীর্ঘদিন ধরে তারা ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে দূরে রয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিত শর্মা প্রায় ১০ বছর পর মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলেছেন এবং বিরাট কোহলি ১২ বছর পর দিল্লির হয়ে রঞ্জি খেলেছেন। এই পদক্ষেপটি ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বিসিসিআই তাদের ফিটনেস ও ফর্ম পরীক্ষা করে দেখতে চাইছে।
গৌতম গম্ভীরের কোচিং দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতীয় দলের দিকনির্দেশনায় পরিবর্তন এসেছে। নতুন কোচ এবং বিসিসিআই কর্তারা মিলে ২০২৭ বিশ্বকাপের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন। এই পরিকল্পনায় তরুণ খেলোয়াড়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বয়স ও ফিটনেসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখলে দুই তারকার জন্য ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে। রোহিত শর্মার ফিটনেস নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে এবং তার ফর্মেও ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিরাট কোহলি এখনও পর্যন্ত ফিটনেস নিয়ে সমস্যায় না পড়লেও বয়সের সাথে তার পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
শুভমন গিলকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জল্পনা রয়েছে। তিনি সব ফরম্যাটে খেলার ক্ষমতা রাখেন এবং বিসিসিআই তাকে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপ্টেনসি দেওয়ার কথা ভাবছে। এই পরিবর্তনটি ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
আইসিসির পোস্টারে রোহিত শর্মাকে ভারতের ক্যাপ্টেন হিসেবে দেখানো হলেও ২০২৭ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিসিসিআই সূত্র জানিয়েছে যে তারা দুই তারকাকে জোর করে কিছু করাতে চান না, কিন্তু দলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ভারতীয় দল আগামী বছর অল্প সংখ্যক ওডিআই ম্যাচ খেলবে। ২০২৬ সালে ইংল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থাকায় সেদিকেই বেশি ফোকাস থাকবে। এই পরিস্থিতিতে কোহলি ও রোহিতের নিয়মিত ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে।
দীনেশ লাড, রোহিত শর্মার ছোটবেলার কোচ এবং দ্রোণাচার্য পুরস্কারজয়ী, তার একান্ত সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, “নিশ্চিতভাবেই ওডিআই বিশ্বকাপে খেলবে রোহিত। এই কারণেই ও টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটের পর টেস্ট ক্রিকেট থেকেও অবসর নিয়েছে”। কিন্তু তার এই আশা পূরণ হবে কিনা তা এখনো অনিশ্চিত।
২০২৭ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায়। এই বিশ্বকাপে ১৪টি দল অংশগ্রহণ করবে এবং এতে সুপার সিক্স ফরম্যাট ফিরে আসছে। ভারতের জন্য এটি হবে ২০১১ সালের পর আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ।
আইপিএলের পর থেকেই বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে বিশ্রামে রয়েছেন। বাংলাদেশ সফর বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাদের মাঠে ফেরা আরও পিছিয়ে গেছে। এখন অক্টোবরের অস্ট্রেলিয়া সিরিজেই তারা আবার দেশের জার্সি পরে মাঠে নামবেন।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে যে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ক্রমশ এগিয়ে আসছে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পারফরমেন্স এবং বিসিসিআইয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যৎ। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দুই কিংবদন্তির পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য।