Kojagori Laxmi Puja Essential Items List 2025: কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বাঙালি হিন্দুদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ২০২৫ সালে এই পূজা অনুষ্ঠিত হবে ৬ অক্টোবর, সোমবার। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই পূজা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে মা লক্ষ্মী পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদ করেন। তাই এই দিনে সঠিকভাবে পূজা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের একটি বিস্তৃত তালিকা নিচে দেওয়া হল:
পূজার মূল উপকরণ:
- মা লক্ষ্মীর মূর্তি বা ছবি
- লাল কাপড় (মূর্তি ঢাকার জন্য)
- পরিষ্কার ও সাজানো পূজার থালা
- অক্ষত (হলুদ মিশ্রিত কাঁচা চাল)
- তাজা ফুল (গাঁদা, পদ্ম, গোলাপ, জুঁই ইত্যাদি)
- পান ও সুপারি
- আমের পাতা
- নারকেল (খোসা সহ)
- ধূপ বা অগরবাতি
- হলুদ গুঁড়ো
- সিঁদুর
- কর্পূর
- প্রদীপ
- সলতে
- ঘি
- চন্দন (গুঁড়ো বা পেস্ট)
- গাভীর দুধ
- দই
- মধু
- তাজা ফল (কলা, আপেল, নাশপাতি, আম, ডালিম ইত্যাদি)
- মিষ্টি (নাড়ু, বরফি, পেড়া ইত্যাদি)
- পঞ্চামৃত (দুধ, মধু, দই, চিনি ও ঘি এর মিশ্রণ)
- লাল কাপড় (পূজার থালা বা বেদি ঢাকার জন্য)
- রক্ষাসূত্র
- গণেশের মূর্তি বা ছবি
- কলস (তামা, রূপা বা সোনার)
- সাদা কাপড় (কলস ঢাকার জন্য)
- এক মুঠো চাল
- গঙ্গাজল
- দূর্বা ঘাস
- মুদ্রা (অনেকে ৯টি মুদ্রা রাখেন পূজার থালায়)
- ছোট আয়না
- লবঙ্গ
- এলাচ
- শঙ্খ
- মাখনা (লোটাস বীজ, মা লক্ষ্মীকে নিবেদন করা হয়)
- রূপা বা তামার বাটি (পঞ্চামৃতের জন্য)
- আরতির সরঞ্জাম
অতিরিক্ত উপকরণ:
- পিতলের ঘণ্টা
- পাতিল (নৈবেদ্য রাখার জন্য)
- পিতলের থালা (আরতির জন্য)
- মৌলি (পূজার পর হাতে বাঁধার জন্য পবিত্র সুতো)
- পূজার সামগ্রী রাখার জন্য ছোট ব্যাগ বা পাত্র
এছাড়াও যদি হোম করার পরিকল্পনা থাকে তাহলে নিম্নলিখিত জিনিসগুলিও প্রয়োজন হবে:
- বেল কাঠ ১ কেজি
- ঘি ২৫০ গ্রাম
- হোমের চেলি ১টি
- যজ্ঞ ডুমুর পাতা ২ বান্ডিল
- পাট কাঠি ১ বান্ডিল
দুর্গাপূজা থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত শুভ যোগ: ২০২৫ সালে দুর্গাপূজার সময় চন্দ্র ও মঙ্গলের সংযোগে ‘মহালক্ষ্মী রাজযোগ’ গঠিত হওয়ায় এই সময়টি অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হচ্ছে। এই শুভ যোগের প্রভাব কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত থাকবে, যা বিভিন্ন রাশির জন্য ধনসম্পদ ও সমৃদ্ধি লাভের সুযোগ নিয়ে আসবে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার পদ্ধতি:
১. সকাল সকাল স্নান করে পরিষ্কার, সম্ভব হলে নতুন কাপড় পরুন।
২. এই দিন উপবাস রাখা হয়।
৩. স্নান ও প্রস্তুতির পর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন।
৪. বাড়ি পরিষ্কার ও সাজান।
৫. সম্ভব হলে আলপনা আঁকুন।
৬. প্রসাদ তৈরি করুন। দিনের শেষে উপবাস ভাঙার পর এটি খাওয়া যাবে।
৭. মা লক্ষ্মীকে ফুল ও ফল নিবেদন করুন।
৮. লক্ষ্মী-গণেশ পঞ্চোপচার পূজা করুন।
৯. মা লক্ষ্মীকে প্রদীপ, পুষ্প, ধূপ, নৈবেদ্য ও আচমন (জল) নিবেদন করুন আশীর্বাদ লাভের জন্য।
১০. সারা রাত জেগে থাকার চেষ্টা করুন মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার তাৎপর্য:
কোজাগরী শব্দের অর্থ হল “যে জাগ্রত থাকে”। বাঙালি ও অসমিয়া হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে এই দিন রাতে মা লক্ষ্মী তাদের বাড়িতে আসেন এবং যাদের জেগে থাকতে দেখেন তাদের আশীর্বাদ করেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে এই দিন দেবী পৃথিবীতে নেমে আসেন তাদের শান্তি, সমৃদ্ধি ও সন্তান দান করতে। এই দিন অনেক দৈব যুগলকেও পূজা করা হয় যেমন লক্ষ্মী-নারায়ণ, রাধা-কৃষ্ণ, শিব-পার্বতী। এছাড়াও চন্দ্র দেবতাকেও পূজা করা হয়।
কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে খইয়ের পায়েস রান্না করার একটি প্রথা আছে। এর বৈজ্ঞানিক তাৎপর্যও রয়েছে। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে বর্ষার শেষ দিন হিসেবে ধরা যায়। এই সময় বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকে যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। খইয়ের পায়েস খেলে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার কিংবদন্তি:
এই পূজা সম্পর্কে একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। একবার এক কারিগর অলক্ষ্মীর (দারিদ্র্যের দেবী) একটি মূর্তি তৈরি করেছিল। দেশের পূর্বাঞ্চলের এক রাজা তার কারিগরদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি যে কোনো অবিক্রিত জিনিস কিনে নেবেন। তাই যখন তিনি অলক্ষ্মীর মূর্তিটি কিনলেন, তার রাজ্যে দুর্দশা নেমে এল। তখন রানীকে কেউ পরামর্শ দিল আশ্বিনের পূর্ণিমা রাতে কোজাগরী লক্ষ্মী ব্রত পালন করতে এবং বিধি অনুযায়ী লক্ষ্মী পূজা করতে। অনুষ্ঠান পালনের পর, রাজ্য আবার সমৃদ্ধ হয়ে উঠল।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সময়:
দ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, লক্ষ্মী পূজা করার সর্বোত্তম সময় হল প্রদোষ কাল যা সূর্যাস্ত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিস্তৃত।
২০২৫ সালের কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সময়সূচি:
- পূর্ণিমা তিথি শুরু – ৬ অক্টোবর, ২০২৫, সোমবার, সকাল ১১:২২ মিনিটে।
- পূর্ণিমা তিথি শেষ – ৭ অক্টোবর, ২০২৫, মঙ্গলবার, সকাল ০৯:১৬ মিনিটে।
- কোজাগরী পূজার দিন চন্দ্রোদয় – সন্ধ্যা ০৫:২৬ মিনিটে।
যেহেতু পূজাটি রাত্রিকালে করা হয়, তাই ৬ অক্টোবর তারিখেই এই ব্রত পালন করা হবে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বাঙালি হিন্দুদের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই পূজা করলে ধন-সম্পদ, সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি লাভ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই সঠিকভাবে পূজা করার জন্য উপরোক্ত ফর্দমালা ও পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। মনে রাখবেন, শুধু বাহ্যিক অনুষ্ঠান নয়, বিশুদ্ধ মন ও ভক্তি নিয়ে পূজা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই তথ্যগুলি আপনাকে ২০২৫ সালের কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা সফলভাবে পালন করতে সাহায্য করবে।